চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানা ভবনে হামলা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে ভাঙচুর, ডাকবাংলোয় আগুন দেওয়ার ঘটনায় ছয়টি মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে হাটহাজারী থানায় এসব মামলা হয়। ছয়টির মধ্যে চারটি মামলার বাদী পুলিশ। বাকি দুটি মামলা করেছেন ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।
থানায় হামলার অভিযোগে করা একটি মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ের ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। ভূমি অফিসের করা দুই মামলায় ২০০ জন করে ৪০০ জন অজ্ঞাতপরিচয়ের ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। বাকি মামলাগুলোর আসামিদের সম্পর্কে জানা যায়নি।
হাটহাজারী ছাড়াও জেলার পটিয়া থানায় আরেকটি মামলা হয়েছে। হাটহাজারীর পর পটিয়া থানা ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটে গত শুক্রবার।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম রশিদুল হক আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, হাটহাজারীর ঘটনায় ছয়টি ও পটিয়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলাগুলো হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হবে।
হাটহাজারী থানায় ছয় মামলার মধ্যে একটির বাদী সদর ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আকতার কামাল চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ এখনো চলছে। সে জন্য মামলায় ক্ষয়ক্ষতির কথা বলা হলেও টাকার পরিমাণ বলা হয়নি। চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না যে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা প্রসঙ্গে আকতার কামাল চৌধুরী বলেন, ভূমি অফিসে থাকা সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ জন্য আসামিদের শনাক্ত করা হয়নি। দোষী কারা, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুহুল আমিন বলেন, ভূমি অফিসে হামলার ঘটনায় মামলা হলেও এখনো ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। ব্যাপক ক্ষতির কারণে তা নিরূপণে সময় লাগছে। নথিপত্র, খতিয়ান, বালাম বহি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
থানায় হামলা ও ভূমি অফিসে ভাঙচুর প্রসঙ্গে হাটহাজারী মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য ও মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা ইয়াহিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা কিছু করেনি। কে বা কারা করেছে, তা প্রশাসন বের করুক।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। প্রতিবাদে হাটহাজারীতে মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরা থানায় হামলা চালালে পুলিশ আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়ে। হাটহাজারীতে চারজন নিহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, চারজন নিহত হওয়ার জেরে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা হাটহাজারী থানা, ডাকবাংলো, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে হামলা চালান। তাঁরা হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সড়কের ওপর দেয়াল তৈরি করেন।
মোদির সফরবিরোধী বিক্ষোভের জেরে সংঘাত, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রাজধানীসহ কয়েকটি জেলায় আগেই ১৮টি মামলা হয়েছে। ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে এসব মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামাসহ প্রায় ১০ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মী ছাড়াও কয়েক হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে।