1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন

জিকে সেচ প্রকল্পে পূর্ণমাত্রায় পানি সরবরাহ, ১১ এপ্রিল থেকে পানি প্রত্যাহার করবে ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : বুধবার, ৭ এপ্রিল, ২০২১

পুরোদমে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে ডিসচার্জ চ্যানেলে ১৪ দশমিক ৫ মিটার আরএল (রিডিউসড লেভেল) পানি সরবরাহ হচ্ছে।

জিকে পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এটিই সর্বোচ্চ পানি সরবরাহ। এই স্তরে পানি সরবরাহ হলে প্রকল্পের প্রধান খাল থেকে শাখা ও নালা, উপ-নালা পর্যন্ত পানি পাবে কৃষক। প্রকল্পের অধীনে প্রায় এক হাজার ৬৫৫ কিলোমিটারে বিভিন্ন ধরনের খাল ও নালা রয়েছে।

পদ্মার পানির ওপর নির্ভরশীল এই প্রকল্পটিতে পদ্মা নদী থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার ইনটেক চ্যানেল তৈরি করে পাম্প হাউস পর্যন্ত পানি নিয়ে আসা হয়। প্রকল্পের আওতায় দুটি মৌসুমে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার এক লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। চার জেলার মোট ১৩টি উপজেলায় এই সেচ কার্যক্রম বিস্তৃত। গত ১৫ জানুয়ারি থেকে জিকে সেচ প্রকল্পে পানি সরবরাহ শুরু হয়।

জিকে প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, পদ্মার পানি ঘাটতিতে নেমে এলে জিকের পানি সরবরাহে শঙ্কা তৈরি হয়। পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে জিকের ইনটেক চ্যানেলে সর্বদায়ই পানির স্তর থাকতে হবে ১৪ দশমিক ৫ মিটার আরএল। তাহলে পূর্ণমাত্রায় সেচ সরবরাহ করা যায়। একইসঙ্গে পদ্মা নদীতে পানি থাকতে হবে কমপক্ষে ৩৪ হাজার কিউসেক। জিকের ইনটেক চ্যানেল পানিপূর্ণ রাখতে প্রতি বছর সরকারের প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়।

কর্মকর্তারা জানান, ২৬ মার্চ জিকের ইনটেক চ্যানেলে পানি চার দশমিক পাঁচ মিটার আরএলে নেমে আসে। ফলে দুটি প্রধান পাম্প ও ১২ সম্পূরক পাম্প বন্ধ হয়ে যায়। সেসময় পদ্মায় পানি ছিল মাত্র ২৩ হাজার কিউসেক। পদ্মায় পানির স্তর এত নেমে যাওয়ার কারণ, ওই সময়টিতে ভারত গঙ্গা থেকে পানি প্রত্যাহার করে নেয়।

জিকে কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তির আলোকে প্রতি শুষ্ক মৌসুমে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গার পানি ভাগাভাগি করে নিতে হয়। ঐতিহাসিক পানি বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিবছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ১০ দিনের হিসাবের ভিত্তিতে ফারাক্কায় পানির প্রবাহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বণ্টন করা হয়।

বাংলাদেশের যৌথ নদী কমিশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত ফারাক্কায় পানি প্রবাহ ছিল ৫৯ হাজার ৫২২ কিউসেক এবং বাংলাদেশের হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ৩৬ হাজার ৩৯৩ কিউসেক।

গত ২০ মার্চ থেকে শুরু হয় ভারতের প্রাপ্যতা। ফলে ভারত গঙ্গা থেকে পানির হিস্যা নিয়ে নেয়। ভারতের এই পানি প্রত্যাহারের সাইকেলটি শেষ হয় ৩১ মার্চ। এটি পুনরায় ভারতের পক্ষে যাবে আগামী ১০ এপ্রিল। ফলে ১১ এপ্রিল থেকে আবার ভারত পানি প্রত্যাহার করবে।

গতকাল যৌথ নদী কমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ এখন গ্যারান্টিযুক্ত ৩৫ হাজার কিউসেক (প্রতি সেকেন্ডে ১ ঘনফুট) পানি পাচ্ছে। কমিশনের সদস্য মো. মাহমুদুর রহমানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি পাবে বাংলাদেশ। আগের ১১ দিন ভারত একইভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক করে পানি নিয়েছে। চুক্তি মোতাবেক সেসময় বাংলাদেশের প্রাপ্যতা ছিলো মাত্র ২৩ হাজার ৫৪৪ কিউসেক।

পাবনার পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘৫ এপ্রিল হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি পাওয়া গেছে ৩৫ হাজার ৯৪৬ কিউসেক। ধরা হচ্ছে এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।’

পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গঙ্গা অববাহিকায় পানি নিয়ে এবার সমস্যা একটু বেশি দেখা দিয়েছে। যার প্রধান কারণ বৃষ্টির অপ্রাপ্যতা। এই মৌসুমে এখনো বৃষ্টি হয়নি। ফলে গঙ্গায় পানির মূল প্রবাহ খুবই দুর্বল। পানি বণ্টন করতে গিয়ে ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, জিকের আওতাধীন এলাকাগুলোতে সাধারণত কৃষকরা বিকল্প পানি সরবরাহের আওতায় যান না। তারা জিকের সেচের ওপরই পুরোপুরি নির্ভরশীল।

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘আগামী ১৫/২০ দিন ধানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ে পানির অপর্যাপ্ততায় ধানের ক্ষতি হতে পারে।’

জিকে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, ‘১৯৯৬ সালের ঐতিহাসিক পানি চুক্তির পর থেকে জিকে পাম্পে পানির দুষ্প্রাপ্যতা তৈরি হয়নি। এবার এমনটি হওয়ার প্রধান কারণ বৃষ্টির সহায়তা না পাওয়া।’

‘প্রতিবছর এ সময় যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হওয়ায় গঙ্গা অববাহিকায় পানিপ্রবাহ থাকে। কিন্তু, এবার বৃষ্টির দেখা মিলছে না। তবে, কৃষকদের যাতে কোনো রকম দুর্দশায় পড়তে না হয়, তা নিয়ে আমরা ভাবছি’, বলেন তিনি।

সূত্র : দ্য ডেইলি ষ্টার

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি