সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন থেকে ৯১ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বাগো শহরে শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত রাতভর অভিযান চালায় দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এই অভিযানেই সেখানে কমপক্ষে ৬০ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়।
এদিকে ভুক্তভোগী পরিবার বা স্থানীয়রা কেউই নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করতে পারেননি। নিহতদের বেশিরভাগেরই মৃতদেহ নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাতভর চালানো এই অভিযানে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী প্রচলিত অস্ত্রের পাশাপাশি মেশিনগান, গ্রেনেড এবং মর্টার শেল ব্যবহার করে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম রেডিও ফ্রি এশিয়ার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শুক্রবার মিয়ানমারের বাগো শহরে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। রাজপথে বিক্ষোভকারীদের ব্যারিকেডও সরিয়ে দিয়েছে তারা। আন্দোলনের সময় সেসব ব্যারিকেড বিক্ষোভকারীরা রাস্তার ওপর রেখেছিলেন। স্থানীয় এক বাসিন্দার বরাত দিয়ে রেডিও ফ্রি এশিয়া জানায়, শুক্রবার রাত ৮টা পর্যন্ত স্থানীয়রা মাত্র তিনটি মরদেহ উদ্ধার করতে পেরেছেন। বাকিগুলো সেনা সদস্যরা স্থানীয় একটি প্যাগোডা এবং স্কুলে নিয়ে ফেলে রেখেছে।
এদিকে জান্তা সরকারের দমনপীড়ন ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় মিয়ানমারের ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি দেশটিতে নো-ফ্লাই জোন ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূত কিয়াও মোয়ে তুন।এছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সামরিক সরকারের ওপর আরও চাপ প্রয়োগ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
গত বছরের নভেম্বরের নির্বাচনে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি (এনএলডি) বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবারও ক্ষমতায় আসে। সামরিক বাহিনী এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুললেও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানিয়ে দেয়।
এর পরিপ্রেক্ষিতে দুই মাস আগে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে এক বছরের জন্য দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করে। তখন থেকে প্রায় প্রত্যেকদিন মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীরা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছেন।
লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভ করায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শুরুর দিকে জলকামানের ব্যবহার করে। এর এক সপ্তাহ পর বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে রাবার বুলেট এবং তাজা গুলি ব্যবহার শুরু করে জান্তা নিয়ন্ত্রিত নিরাপত্তা বাহিনী। জান্তাবিরোধী আন্দোলনে দেশটিতে এখন পর্যন্ত নারী-শিশুসহ ছয় শতাধিক সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে।