‘চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী’ এ প্রবাদ বাক্যটির যেন জলন্ত উদাহরণ চট্টগ্রাম পটিয়া আসনের এমপি ও হুইপ শামসুল হক চৌধুরী।
নানান আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়া হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ও তার পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী শারুনের বিরুদ্ধে এবার উঠেছে শত বছরের পুরনো পটিয়া থানা মসজিদ দখল করে বহুতল মার্কেট নিমার্ণের অভিযোগ। শুধু তাই নয় নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য পাল্টে দিয়েছেন মসজিদের নামও। এমন অনৈতিক কার্যকলাপের প্রতিবাদ করায় হুইপ ও তার পুত্রের রোষানলে পড়েছেন পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা। পটিয়া থানা পুলিশের মসজিদ দখল করে বহুতল মার্কেট নিমার্ণকে কেন্দ্র করে পুলিশ প্রশাসন দেখা দিয়েছে তিব্র অসন্তোষ।
হুইপ ও তার পুত্রের এমন অপকর্ম নিয়ে মুখ খোলতে চান না পুলিশ প্রশাসনের কেউ। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘পটিয়া থানা জামে মসজিদের ২২ গন্ডা ভুিম দখল করে তাতে ১০ তলা অভিজাত মার্কেট নিমার্ণের পাঁয়তারা করছে স্থানীয় এমপি শামসুল হক চৌধুরী ও তার পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী শারুন। এরই মধ্যে তাদের অনুসারী এক নেতাকে দিয়ে কথিত মসজিদ পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে। পরিবর্তন করে দিয়েছে মসজিদের নাম। তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন কথিত মসজিদ কমিটি বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্টপোশকতারী প্রতিষ্টানের সাথে ডেভেলপমেন্ট চুক্তিও করেছে। এরই মধ্যে মসজিদ ভেঙে ১০ তলা মার্কেট করে তাতে ৪০০টি দোকান তৈরির আনুষ্টানিকতা শেষ করেছে। একেকটি দোকান বরাদ্দ দেয়ার জন্য ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা নেয়া হচ্ছে। বহুতল এ মার্কেট থেকে দেড়শ কোটি টাকা লুপাটের পরিকল্পনা রয়েছে হুইপ পরিবারের। তাদের এমন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় হুইপ ও তার পুত্রের রোষানলে পড়েছেন কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা। এ নিয়ে পুলিশে চরম অসন্তোষ চলছে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে পটিয়া আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘ছোটকাল থেকে এটি থানা মসজিদ হিসেবে চিনে আসছি। কয়েক বছর আগে হুইপ ও তার পুত্র নেপথ্যে থেকে দখল করে নেয় ওই মসজিদের জায়গায়। গঠন করে নতুন কমিটি। পরিবর্তন করে পেলে মসজিদের নাম। এরমধ্যে মসজিদ ভেঙে মার্কেট নিমার্ণের আনুষ্টানিকতা শেষ করেছে। তাদের এমন অপকর্মে আমরা বিব্রত।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৮৯০ সালে ২২ গন্ডা ভুমির উপর প্রতিষ্টিত হয় ‘পটিয়া থানা জামে মসজিদ’। প্রতিষ্টার পর থেকে পটিয়া সার্কেলের এএসপি কিংবা থানার অফিসার ইনচার্জ সভাপতি এবং মুসল্লিদের পক্ষ থেকে একজন সেক্রেটারী নির্বাচিত হয়ে মসজিদ পরিচালিত হয়ে আসছে। ১৯৯৪ সালে পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ও এ আহমদের যৌথ সাক্ষরে জনতা ব্যাংকের পটিয়া শাখায় ‘থানা মসজিদের’ নামে একটি যৌথ হিসাবও খোলা হয়। সরকারি বিভিন্ন দলীলেও ‘পটিয়া থানা জামে মসজিদ’ হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। গত এক দশকে পটিয়ার প্রাণকেন্দ্রে ভুিমর দাম বেড়ে যায় কয়েক গুন। ফলে ‘পটিয়া থানা জামে মসজিদ’র জায়গার উপর কুদৃষ্টি পড়ে স্থানীয় এমপি শামসুল হক ও তার পুত্রে। মসজিদের জায়গা দখল করতে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ২০১৩ সালে এমপি অনুসারী এবং তৎকালিন পৌর মেয়র হারুনুর রশিদকে সভাপতি করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কথিত মসজিদ পরিচালনা কমিটি গঠন করে। মসজিদের ওই জায়গায় ১০ তলা বহুতল মার্কেট নিমার্ণের উদ্যোগ নেয় হুইপ ও তাদের অনুসারীরা।
চুক্তিতে মার্কেট নিমার্ণের জন্য চুক্তি করা হয় বিএনপি ও জামায়াতের পৃষ্টপোশকতাকারী প্রতিষ্টান ‘নুসরাত ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেডে’র সাথে। এ ডেভেলপার কোম্পানীর মালিকদের একজন হচ্ছেন উপজেলা বিএনপি’র নেতা শফিকুল ইসলাম চেয়ারম্যান। কোম্পানীর বাকি মালিকরাও বিএনপি জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। ২০১৮ সালে পটিয়া থানা জামে মসজিদের নাম পাল্টে ‘পটিয়া থানা ছদু তালুকদার জামে মসজিদ কমপ্লেক্স’ নামকরণ করে হুইপ পরিবার ও তার অনুসারীরা। অবৈধ ভাবে গঠিত কথিত মসজিদ কমিটি বাতিল এবং ‘নুসরাত ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেডের সাথে করা চুক্তি বাতিলের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। ২০১৯ সালে পটিয়ার সিনিয়র সহকারি জজ ১ম আদালত প্রদত্ত এক রায়ে ‘পটিয়া থানা ছদু তালুকদার জামে মসজিদ’ ও ‘নুসরাত ডেভেলপমেন্ট কোম্পানী লিমিটেডের সাথে করা চুক্তি অবৈধ এবং কথিত সোলেহনামা সব কিছু অবৈধ ঘোষণা করেন। কিন্তু এ রায়ের তোয়াক্কা না করে হুইপ শামসুল হক চৌধুরী, তার পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী শারুন এবং তাদের অনুসারীরা মসজিদের জায়গায় ১০ তলা মার্কেট করার পায়ঁতারা চালাচ্ছে। দোকান বরাদ্দের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে দোকান প্রতি ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। ‘পটিয়া থানা ছদু তালুকদার জামে মসজিদ কমপ্লেক্স’ থেকে দেড়শ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হুইপ শামসুল হকের অনুসারী হারুনুর রশীদের বাড়ি পটিয়া থানা মসজিদ থেকে কমপক্ষে ৪ কিলোমিটার দুরে। তিনি কোন সময়ই পটিয়া থানা মসজিদ কমিটির দায়িত্বে ছিলেন না। মুলত পটিয়া থানা জামে মসজিদের ভুমি আত্মসাৎ করতেই হঠাৎ করে তাকে সভাপতি করে কথিত মসজিদ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কথিত এ কমিটির নেপথ্যে রয়েছে হুইপ শামসুল হক ও তার পুত্র শামসুল হক চৌধুরী, তার পুত্র নাজমুল হক চৌধুরী শারুনের দেড়শ কোটি টাকার বানিজ্য। তারা বিএনপি জামায়াতের পৃষ্টপোষকদের সাথে চুক্তি করে মসজিদ ভেঙে অভিজাত মার্কেট করার পায়তারা করছে।