বাংলাদেশে অটোমোবাইলশিল্পে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি না হওয়ার পেছনে পাঁচটি বাধা চিহ্নিত করেছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, অটোমোবাইলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত কাঁচামালের জোগান নেই। দীর্ঘ মেয়াদে নীতিমালার অভাব রয়েছে। নেই সহায়ক শুল্ককাঠামো। এ ছাড়া দক্ষ মানবসম্পদ, পশ্চাৎমুখী সংযোগ শিল্প খাতের (ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ) অনুপস্থিতিকে দায়ী করেছেন উদ্যোক্তারা।
আজ রোববার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘অটোমোবাইলশিল্পের উন্নয়ন: বর্তমান বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমানসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠানে ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বাংলাদেশে অটোমোবাইলশিল্প মূলত আমদানিনির্ভর। রিকন্ডিশন গাড়ি বেশি আসে। তবে জাপান, চীন ও ভারত থেকে কিছু নতুন গাড়ি আমদানি হয়। যদিও সংখ্যায় উল্লেখযোগ্য নয়। বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের আগে এ শিল্প খাতে প্রতিবছর গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে মোটর ভেহিকেলের নিবন্ধন কমেছে ২৪ শতাংশ।
দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালা না থাকা, সহায়ক শুল্ককাঠামো না থাকা, স্থানীয়ভাবে পর্যাপ্ত কাঁচামালের জোগান না থাকা, দক্ষ মানবসম্পদ ও পশ্চাৎমুখী সংযোগ শিল্প খাতের অনুপস্থিতির কারণে অটোমোবাইলশিল্পে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন রিজওয়ান রাহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী বলেন, অটোমোবাইল খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে একটি সহায়ক নীতিমালার খসড়া তৈরির কাজ করছে শিল্প মন্ত্রণালয়, যেটি শিগগিরই চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, সরকার সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। সেসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে এ খাতের যন্ত্রাংশ উৎপাদনে শিল্পকারখানা স্থাপনে এগিয়ে আসতে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান শিল্পমন্ত্রী। অটোমোবাইল খাতের সার্বিক উন্নয়নে গবেষণা কার্যক্রম অপরিহার্য বলেও মন্তব্য করেন শিল্পমন্ত্রী।
বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নায়োকি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের শিল্পায়নে অটোমোবাইল খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষ করে জাপানে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে অটোমোবাইলশিল্প উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশের সেই উদাহরণ অনুসরণের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। এ জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা অপরিহার্য বলে তিনি মত দেন। সেই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি খাতকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের অটোমোবাইল খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে হালকা প্রকৌশলশিল্পকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, জাপানের গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিতসুবিশি বাংলাদেশে ‘সিকেডি প্ল্যান্ট’ স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়েছে। এ–বিষয়ক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া চলমান। তিনি অটোমোবাইল খাতের উন্নয়নে স্থানীয় হালকা প্রকৌশলশিল্পের বিকাশ একান্ত অপরিহার্য বলে মত প্রকাশ করেন।