নির্মল, নিঃস্বার্থ আর পবিত্র এই সম্পর্কে পৃথিবীর বেশিরভাগ মেয়ের কাছেই বাবা শ্রেষ্ঠ আইডল। এই সম্পর্কে যেমন থাকে মান-অভিমান, তেমনই থাকে ভালোবাসা। খুব কম মেয়েই আছে, যাদের মনে বাবার জন্য বিশেষ দুর্বলতা নেই। মেয়ের কাছে বাবা যেন ছোট্ট একটি ছেলে। যাকে ভালোবাসে, শাসনও করে। যত্ন নেয়, আবার বকাও দেয়। সব বাবাই মেয়ের কাছে শ্রেষ্ঠ বাবা। বাবারা হন মেয়ের জন্য জান-প্রাণ। বাবা সুখ খুঁজে পান মেয়ের সুখেই।
বাবা-মেয়ের এমন ভালোবাসার বন্ধনই ছিল চট্টগ্রামের তরুণ ব্যাংক কর্মকর্তা আকতার মোর্শেদ চৌধুরী ও তার কন্যা মোবাশ্বিরা জাহান চৌধুরী জুমেরও।
১২ বছর বয়সী ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী জুমের সঙ্গে তার বাবা কখনো একটু জোরে কথা বলেননি। কখনো শাসাননি। পরীক্ষায় সামান্য মার্কস কম পেলে মা বকুনি দিলেও বাবা আনতেন গিফট। কখনো কখনো মেয়ের স্কুলের পুরো বছরের ফি আগাম দিয়ে রাখতেন বাবা।
সেই কলিজার টুকরা মেয়েটির কথা ভুলে গিয়ে তার বাবা হঠাৎ আত্মহত্যা করলেন গলায় দড়ি দিয়ে! কতটুকু মানসিক চাপ পেলে এমন কোনো বাবা আত্মহননের পথে যেতে পারেন, তা ভাবনারও বাইরে ছিল বলে জানান ব্যাংকারের স্ত্রী।
গত ৭ এপ্রিল এই ঘটনার পর শিশু কন্যা জুম বাবার শূন্যতায় একেবারেই চুপচাপ, নির্বাক। কোভিড আক্রান্ত হয়ে মা আইসোলেশনে চলে যাওয়ার পর মৃত্যুর আগে টানা ২০ দিন বাবার কাছেই ছিল জুম। সেই বাবা নেই। বাবাকে তার এখন খুব মনে পড়ছে।
বাবা হারানো নির্বাক জুম চোখের সামনে দেখছে, উপর্যুপরি বাড়তি পাওনা চেয়ে মানসিক নির্যাতন, মামলা, হত্যা ও গুমের হুমকিসহ চাপ প্রয়োগ করে তার বাবাকে যারা হত্যায় প্ররোচনা দিয়েছিল, মামলা দায়েরের পরেও তারা ধরা পড়েনি।
সুনির্দিষ্ট নাম উল্লেখ করা আসামিসহ তাদের সহযোগী হুইপ পুত্র শারুণ চৌধুরীরা গ্রেফতার এড়িয়ে চলেছেন। উল্টো নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন তারা।
ভাগ্যাহত জুমের মা অর্থাৎ ব্যাংকার মোর্শেদ চৌধুরীর স্ত্রী ইসরাত জাহান চৌধুরী জানালেন, ‘আসামিরা কোথায় পালিয়ে থাকতে পারে তার ধারণাও প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। অথচ আসামি গ্রেফতারে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো খবর নেই।’
এমন উদ্বেগ অসন্তোষের সময়ে চেপে থাকা সব ক্ষোভ নিন্দা প্রকাশ ঘটাল জুম তার শিল্পিত ছোঁয়ায়। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে বাবার ছবি আঁকে সে। আঁকতে আঁকতে মায়ের জিজ্ঞাসার জবাবে ফিরে যায় স্মৃতির মায়াবী পর্দায়।
মাকে জুম জানায়,“পাপা বলেছিল, ‘তুমি এত ছবি আঁকো, আমার ছবি তো কোনোদিন আঁকোনি।’
বাবার কথা মনে করে আত্মহত্যা প্ররোচনার বিচার দাবিতে নীরবে ছবি আঁকে জুম, আর পাশে বসা তার মায়ের চোখে বয়ে যায় অশ্রুধারা।
বাবার ছবি এঁকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে, এই রাষ্ট্রের কাছে আসামিদের গ্রেফতার ও বিচার চাইল শিশু কন্যা জুম। ছবির এক পাশে স্লোগান লিখল সে , ‘Justice for my Daddy’।