জহিরুল ইসলাম মস্ত বড় আওয়ামী লীগার। ‘জয় বাংলা’ মুখের ভাষা। চমৎকার ম্যানেজ করে চলছে। পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ, শহর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠন সমূহের কাছে জহিরুল নিবেদিত প্রাণ আওয়ামী লীগ কর্মী। এক সময় দূর্দান্ত প্রতাপের সঙ্গে জামাত-শিবির করতেন। ২০০০ সালে জেলা ও কলেজে ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্র শিবিরের সংঘর্ষ ঘটে। ছাত্রলীগের প্রায় আট দশ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছিল। ছাত্রলীগ-শিবির বাহিনীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। সে মামলার আসামি আজকের আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায়ন আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী নেতৃত্বে জহিরুলের মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত জামাত-শিবিরের সমর্থিত একটি এনজিওতে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য প্রবেশ করেন জহিরুল। তারপর হাতে মোটা টাকা জমা পড়ে।
২০০৯ সাল জামাত-বিএনপি প্রথম বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের পকেট খালি। অপরদিকে জামাত বিএনপি কর্মীদের ভরা পকেট। কিন্তু ক্ষমতা নেই। টাকার বিনিময় ক্ষমতায়ন করতে জহিরুল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে আওয়ামী লীগের কাতারে শামিল হন। টাকার গরম মসলার সুগন্ধ ছড়ায় স্থানীয় পটুয়াখালী আওয়ামী লীগ নেতাদের অঙ্গনে। তারপর আওয়ামী লীগের নেতা বনে যান জহিরুল। তারপর আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। শিক্ষা বাণিজ্যে নেমে পড়েন। বেসরকারি প্যারামেডিকেল কলেজ বেসরকারি নার্সিং কলেজ স্থাপন করেন কয়েকটি। টেকনিক্যাল বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা নানাভাবে তদবির করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন।
গত ১০ বছরে এ শিক্ষা বাণিজ্য করে জহিরুল কোটি কোটি টাকার মালিক। ধনীদের কাতারে নাম লেখান। পটুয়াখালী ঢাকা যাতায়াতে বিলাসবহুল কেবিন ব্যবহার করেন। ঢাকার সেগুন বাগিচায় অর্ধ লক্ষ টাকার ভাড়া ফ্ল্যাটে থাকেন। আরো অনেক কারকারখানা আছে। জামাত শিবির কর্মীদের তার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে শতভাগ চাকরি নিশ্চিত করেন। স্ত্রী মেহেরুন্নেসাকে পটুয়াখালী জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। নিজেকে শেখ রাসেল স্মৃতি সংসদের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক বলে দাবি করেন।
এছাড়া নার্সিং কলেজ মালিক সমিতি গঠন করে তিনি এর সাধারণ সম্পাদক। বরিশালের একটি দৈনিক পত্রিকার মালিক বলে দাবি করেন তিনি। সচিবালয়ের সাংবাদিক হিসেবে কার্ড নিয়ে যাতায়াত করেন তিনি। তদবির বাণিজ্য তো আছেই। জহিরুলের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর জাতীয় অর্থনীতিকে বলেন, জহিরুল শিবিরের ক্যাডার ছিল। হঠাৎ করে ২০০৯ সাল থেকে আমাদের দলের কিছু নেতার মাধ্যমে আমাদের মিছিল মিটিংয়ে যোগ দিতে শুরু করেন। তিনি প্রথমে প্রতিবাদ করেন কিন্তু সংশ্লিষ্ট নেতারা ঢাকা কেন্দ্রীয় নেতাদের দোহাই দিয়ে জহিরকে দলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিতে থাকেন। জেলা সভাপতি আরো বলেন, দল করি আমরা, নেতৃত্বে আমরা, আদর্শ ধারণ করি আমরা, আর ঢাকা থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা টাকা খেয়ে জেলার নেতা নির্বাচন করেন। আমরা ঠিক আছি। কেন্দ্রীয় নেতারা ঠিক নেই। এসব জায়েজ করে তারা জামাত-শিবিরকে বিভিন্ন জায়গায় বসিয়ে দিয়েছে। জহিরুল প্রসঙ্গে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা বর্তমান পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাতীয় অর্থনীতিকে বলেন, জহিরুল শিবিরের ক্যাডার ছিল আমার কেন যেন সন্দেহ হয়েছিল। তার চলনে-বলনে শিবিরের সঙ্গে মিলে যায় এখন অনেকেই বলছেন জহির শিবিরের লোক কিন্তু এই চিহ্নিত লোককে কিভাবে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের ঘরে বসল আর সেটাকে পুঁজি করেই কিভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হলো আমার কাছে বোধগম্য নয়।
এদিকে জহির এর কাছে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন এসব অভিযোগের সাথে তার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি শিবির করতেন না কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে ক্লিয়ার কোনো উত্তর দেননি। এ ব্যাপারে বিস্তারিত অনুসন্ধানের প্রতিবেদনে আসছে …..