লকডাউনের পঞ্চম দিন সড়কে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়ানো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেডিওলজি বিভাগের চিকিৎসক সাঈদা শওকতের কাছে পরিচয়পত্র চাওয়ার দরকার ছিল না বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, জেনির পেশাগত পরিচয় তার গাড়ি ও তার পোশাকেই ছিল। এখানে পরিচয়পত্র দেখানোর জন্য চাপ দেয়া ছিল অর্থহীন।
গত রোববার এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল এলাকায় ডা. জেনির সঙ্গে নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এ কাইয়ুমের বাদানুবাদ নিয়ে দুই দিন ধরে তুমুল আলোচনার জন্য সোমবার এ কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
লকডাউনে বেশ গাড়ি নিয়ে বের হওয়ায় কয়েকজন চিকিৎসককে জরিমানা ও অনাকাঙ্খিত ভাষায় পুলিশের আক্রমণের পর ডা. জেনির এই ঘটনাটি চিকিৎসক সমাজ ও পুলিশকে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে।
চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠনটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়ে বলেছে, এসব ঘটনার সুরাহা না হলে হাসপাতালে সেবা ব্যাহত হবে।
অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন এই ঘটনার জন্য ডা. জেনিকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে ফেসবুকে। নেট দুনিয়া স্পষ্টত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। কেউ বলছেন, করোনাকালে চিকিৎসকের সঙ্গে পুলিশের আচরণ ন্যায্য হয়নি। কেউ বলছেন, ডা. জেনি পরিচয়পত্র দেখালেই ঝামেলাটা শেষ হয়ে যেত। আবার একটি পক্ষ আবার বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের আরও সহনশীল আচরণ করা উচিত।
এর মধ্যে মিন্টোরোডের সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
ডা. জেনির কাছে পরিচয়পত্র চাওয়ার কতটা দরকার ছিল সে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘একজন ডাক্তার যিনি অ্যাপ্রোন পরে আছেন, যার গাড়িতে দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের স্টিকার আছে, তাকে পরিচয়পত্রের জন্য বারবার চাপ দেয়া কতটা সমীচীন সে প্রশ্ন অনেকেই তুলেছেন।’
জেনিকে যখন আটকানো হয়, তখন তার গায়ে চিকিৎসকদের সাদা রঙের অ্যাপ্রোন পরা ছিল। আর সেই অ্যাপ্রোনে তার কর্মস্থল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো লাগানো ছিল। তার গাড়িতেও তার কর্মস্থলের স্টিকার সাঁটানো ছিল।
জেনি যখন এসব কথা পুলিশকে বলছিলেন, তখন তাকে ভুয়া ডাক্তার বলা হয়েছে বলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন। এমনকি এক পর্যায়ে তাকে অবৈধ যৌন ব্যবসা চালানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার শামীমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, ডা. জেনি পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘তুই তোকারি’ করেছেন, দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
তথ্যমন্ত্রী অবশ্য লকডাউনে পুলিশের সার্বিক চেষ্টারও প্রশংসা করেন। বলেন, ‘লকডাউন কার্যকর করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে যতœ ও কষ্ট করছে, এজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি দায়িত্বপালনের সময় এটি খেয়াল রাখতে হবে, কেউ যেন হেনস্তা না হয়।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মীসহ অনেকে দেশে করোনা মোকাবিলায় প্রথম সারির যোদ্ধা এবং আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতা এ সময় জনগণের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।