চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত-সমালোচিত সংসদ সদস্য ও হুইপ শামসুল হক চৌধুরী। ক্ষমতার অপব্যবহার, চাঁদাবাজি, দখলদারিসহ এহেন অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। ক্যাসিনোকাণ্ডেও উঠে আসে তার নাম। তার ছেলে শারুন চৌধুরীও নাম রেখে চলেছেন বাবার। যুবসমাজের কাছে তিনিও অপকর্মের শিরোমণি।
১৯৮০ সালের একটি ঘটনা ৪০ বছর পর এসেও চমকে দেয় সবাইকে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা শামসুল কতটা ‘বিচ্ছু’ তার প্রমাণ করে সে ঘটনাও।
১৯৮০ সালের ২০ আগস্ট চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানা পুলিশের অভিযানে তিনটি চোরাই টাইপ মেশিনসহ গ্রেপ্তার হন শামসুল হক নামে এক ব্যক্তি। দুদিন পর (২২ আগস্ট শুক্রবার) চট্টগ্রামের ‘দ্য ডেইলি লাইফ’ পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হয়। শিরোনাম ছিল ‘স্টোলেন টাইপ মেশিনস সিজড : ওয়ান অ্যারেস্টেড’।
সংবাদটি পত্রিকার প্রথম পাতায় সিঙ্গেল কলামে প্রকাশ পায়। সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী এক স্থানীয় দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ দাবি করেন। বিভিন্ন সূত্রও তার এ দাবি সমর্থন করছে। বলা হচ্ছে, সেই টাইপ মেশিন চোর আর কেউ নন, তিনি জাতীয় সংসদের বর্তমান হুইপ এবং পটিয়ার সংসদ সদস্য শামসুল হক চৌধুরী ওরফে বিচ্ছু শামসু।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক দিদারুল আলম দিদার বলেন, বিএনপি-জাতীয় পার্টি থেকে এসে সামশু এখন আওয়ামী লীগের এমপি। সুখের দিনে দাপট দেখিয়ে সব লুটে নিচ্ছেন। ৮০ সালে টাইপ মেশিন চুরি করে ১৭ দিন জেল খেটেছিলেন। জিয়াউর রহমান তার নাম দিয়েছিলেন ‘বিচ্ছু’। আমি তো বড় গলায় বলেছি। সাহস থাকলে এসব নিয়ে পাল্টা বক্তব্য দিতে বলেন।
ওই ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছিল, ‘ডবলমুরিং থানা পুলিশ গত বুধবার (১৯৮০ সালের ২০ আগস্ট) চোরাই তিনটি পুরনো টাইপ মেশিন উদ্ধার করেছে। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ’
ওই সংবাদে আরো বলা হয়, ‘বুধবার বিকেলে (২০ আগস্ট) শেখ মুজিব রোডের বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি টাইপ মেশিন মেরামতের দোকানে তিনটি চোরাই টাইপ মেশিন বিক্রি করতে যান রেয়াজউদ্দিন বাজারের শামসুল হক। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে একজন সাব-ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে ডবলমুরিং থানা পুলিশ সেখানে অভিযান চালিয়ে তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। পুলিশ টাইপ মেশিনগুলো জব্দ করে থানায় নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ’
একই ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল চট্টগ্রামের প্রাচীনতম দৈনিক আজাদী। সেখানে টাইপ মেশিন উদ্ধারের ঘটনায় ১৯৮০ সালের ২৩ আগস্ট এক কলামে সংবাদ প্রকাশ করে পত্রিকাটি। ‘৩টি টাইপ মেশিন উদ্ধার’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল রিপেয়ারিং অ্যান্ড সেলস সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠানে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ সেখান থেকে তিনটি চুরি যাওয়া টাইপ মেশিন উদ্ধার করে।
জাতীয় সংসদের মতো জায়গায় নির্বাচিত হয়ে হুইপের মর্যাদায় আসীন ব্যক্তিটি তার অতীত থেকেই অপকর্মে যুক্ত। কোনো কালেই তার অপকর্ম থামেনি। প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন। এখনো জড়াচ্ছেন জিয়াউর রহমানের এই ‘বিচ্ছু’।