করোনা মহামারীকালে দেশের মানুষের আশা ভরসার স্থল স্বাস্থ্যখাত। সরকারও আপ্রাণ চেষ্টা করছে জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের। কিন্তু সরকারের উদ্যোগের মাঝে পানি ঢেলে দিচ্ছে এখাতের মাঝে দুর্নীতিবাজ একটি সিন্ডিকেট।
এরা এতটাই বেপরোয়া যে শুধু কেনাকাটায় নয় নিয়োগ প্রক্রিয়াও এদের নিয়ন্ত্রণে। দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক ওদের বিরুদ্ধে কারো কোন ব্যবস্থাতো নিচ্ছে না বরং দুদকের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা এক শ্রেণীর কর্মকর্তা স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজদের সাথে হাত মিলিয়েছে এমন তথ্য এসেছে জাতীয় অর্থনীতির হাতে।
স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি সেন্টিকেট চিহ্নিত করতে জাতীয় অর্থনীতি দীর্ঘদিন যাবৎ অনুসন্ধান চালাচ্ছে। বাহিক ভাবে তা পাঠকের সামনে তুলে ধরা হবে স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্য ও তাদের সম্পদের বিবরণী প্রকাশ হলো প্রাথমিক পর্ব।
কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি। এখাতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীরা এতটাই বেপরোয়া যে করোনা মহামারী সময়েও থেমে নেই এদের দুর্নীতি। এদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার কারণ হলো দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিচার না হওয়া। অনুসন্ধানে জানা গেছে, যে তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাই দুর্নীতির পথ বের করে দেয়া। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সমিতির নেতা দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে রাজবাড়ী জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা । পূর্বে তিনি ছিলেন ঢাকা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্মকর্তা। একজন সাধারণ কর্মচারী হয়েও তিনি চড়েন দামি দামি গাড়িতে। ঢাকায় করেছে তার একাধিক ফ্লাট । নিজ জেলা শহর মাদারীপুরের রযেেছ নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। দুই বউয়ের নামে রয়েছে নামে-বেনামে সম্পদের পাহাড় স্বাস্থ্য খাতের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ।
মিঠু ও আফজালের অন্যতম সহযোগী। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুদক একসময় তোড়জোড় করলেও এরা এতটাই শক্তিশালী সিন্ডিকেট যে তাদের কত কাছে দুদকের অভ্যন্তরে ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এদের সাথে হাত মিলিয়ে দুর্নীতির ফাইল ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো রিপোর্ট স্বাস্থ্যখাতের প্রায় ৭৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় নাই।
সাধারণত প্রতিটি হাসপাতালে কেনাকাটায় লিস্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা এ তৈরি করেন। ঠিকাদারদের সরবরাহ করে থাকে। অতি উচ্চ মূল্যে পণ্য ক্রয় দেখিয়ে তা আবার সরবরাহ না করেই বিলটি নেন। প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসাব রক্ষক স্টোর অফিসার এরা সবাই এক সিন্ডিকেট।
স্বাস্থ্য খাতের কারাগারে থাকা গাড়িচালক মালেক এদের সেন্ডিকেট এর সদস্য। কথায় কথায় এরা ধর্মঘটের ভয় দেখিয়ে পুরো স্বাস্থ্যখাতকে এরা জিম্মি করে রাখে। মূলত হাসপাতালে চিকিৎসা কর্মে নিয়োজিত ডাক্তার ও নার্স রাতদিন জীবনবাজি রেখে পরিশ্রম করলেও দুর্নীতির দায় ভার এদের উপর গিয়ে পড়ে। কিন্তু মূল দুর্নীতিবাজ সেন্টিকেট পথ দেখিয়ে দেয় এই তৃতীয় চতুর্থ শ্রেণীর সিন্ডিকেট।
দুদক অনুসন্ধান এর নামে নাটকে নামলেও পর্যন্ত এই পুণ্য সেন্টিকেট দের বিরুদ্ধে কোন দৃশ্যমান অবস্থান নেয় নাই। বরং উল্টো দুদকের কর্মকর্তাদের সাথে রয়েছে ওদের আলাদা সখ্যতা। কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার পরিজনদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এরা ব্যস্ত থাকে। এমন একাধিক তথ্য জাতীয় অর্থনীতিতে হাতে রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান কালে লোকদেখানো বদলি করা হয়েছে ওদের। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতলে বদলি করলেও এদের দুর্নীতি থেমে নেই।
বিভিন্ন তথ্য থেকে প্রাপ্ত অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, কেনাকাটায় ও দুর্নীতিতে এরা সবাই এক সেন্টিকেট। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানেনা আসলে কেনাকাটার ফাঁক ফোকর কোথায়। হাসপাতালের ভিতর প্রতিদিন চিকিৎসা সামগ্রী প্রয়োজন হয় তাই বাধ্য হয়ে কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় করতে হয়।
করোনাকালীন মহামারীর সময়ে এরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। অগ্রাধিকার খাত স্বাস্থ্য খাতের সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা সামগ্রী ক্রয় করার কারণে এদের বাণিজ্য আরও বহুগুণ বেড়ে গেছে। এরা দেশের একি সিন্ডিকেট নেতা দেলোয়ার হোসেন গং। এরা সবাই আফজাল ও মিঠুর সেন্টিকেট বৃহত্তর ফরিদপুরের লোক হিসেবে এরা সব হাসপাতলে প্রভাব বিস্তার করে থাকে।
শীর্ষ দুর্নীতিবাজ মিঠুর সহযোগী আব্দুল্লাহ হল হল কাফি যিনি বর্তমানে বর্ধিত ৫ মেডিকেল কলেজ এর প্রকল্পে কর্মরত। যিনি বর্ধিত হাসপাতালে কেনাকাটা ও প্রসারণ এর মূল দায়িত্বে। মূলত মোজাম্মেল ইসলাম মিঠু কাফিকে উক্ত স্থানে বদলি করেছে। উক্ত ৫ হাসপাতাল তার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এছাড়াও শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের তালিকা রয়েছে খুলনার শেখ আবু নাসের হাসপাতাল এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ ওয়াহেদুজ্জামান, কোভিদ আহমেদ চৌধুরী, বর্তমান সেন্টিকেট সম্পত্তি বদলি হয়ে গিয়েছে। ডেপুটি স্পিকারের নাম ভাঙ্গিয়ে শত শত কোটি টাকা কামিয়েছে সাবেক ঢাকার নিউরোসাইন্স হাসপাতাল এর প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু সাজেন বর্তমানে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাউন্টেন্ট শরিফুল ইসলাম, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালের সাবেক স্টোর অফিসার নাজিমুদ্দিন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর কিপার রফিকুল ইসলাম, ঢাকা মেডিকেলের সচিব আনোয়ার হোসেন বর্তমানে টাঙ্গাইলে বদলিকৃত, দিনাজপুরের আব্দুর রহিম হাসপাতালে সেক্রেটারি নাহিদ জামান, স্বামী প্রধান সহকারী আরিফ, হিসাব রক্ষক জুলফিকার চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি খায়রুল আলম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে স্টোর অফিসার দেলোয়ার হোসেন, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে হিসাবরক্ষক আশরাফুল মজিদ, এরা প্রত্যেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক। আর এদের সেন্টিকেট নেতা হলেন বর্তমানের রাজবাড়ীতে বদলিকৃত দিলওয়ার হোসেন। তাদের সেন্টিকেট এতই শক্ত যে গণমাধ্যম তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ পরিবেশন করলে ওরা মামলা করার মতো সাহস দেখায়।
বর্তমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় একটি সেন্টিকেট রয়েছে এরা মূলত বরিশাল কেন্দ্রিক এদের মূল হোতা সৈয়দ জালাল। সম্প্রতি আলোড়ন সৃষ্টিকারী নৈশপ্রহরী যিনি কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিজেকে পরিচয় দেন মোঃ আবু সোহেল নিয়োগ বাণিজ্যে কোটি কোটি টাকা হাতিয় নিয়েছে যা একটি শীর্ষ দৈনিকে শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে।
এরা নীতিতেও এতটাই বেপরোয়া যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা এদের কাছে জিম্মি। মূল হোতাদের আইনের আওতায় না আনতে পারলে স্বাস্থ্য খাত দুর্নীতিমুক্ত হবে না। এদের সাথে দুদকের কর্মকর্তাদের ঘনিষ্ট যোগাযোগের একাধিক তথ্য-প্রমাণ জাতীয় অর্থনীতির হাতে এসেছে।
দুদকের কর্মকর্তাদের সংঙ্গে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করে তারা বিচারের আওতায় আসবে না।
এ ব্যাপারে জাতীয় অর্থনীতির পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য খাতের দূর্নীতির হোতা দেলোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রচন্ড ক্ষিপ্ততার সঙ্গে বলেন, যা পারেন লিখেন, লিখলে কিছু হবে না। তিনি বলেন, দুদক কর্মকর্তারা এই আমার পিছনে পিছনে ঘুরে। তাদের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে। দুদক কমিশনার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন নি।