শেরপুরঃ
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক কিশোরীকে তাবিজ দিয়ে বশিকরণ করতে গিয়ে ওই কিশোরী অসুস্থ হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন সাইফুল ইসলাম নামে এক মসজিদের ইমাম।
পরবর্তীতে গ্রাম্য শালিশে নিজের দোষ স্বীকার করে অভিভাবক ও মসজিদ কমিটির জিম্মায় মুক্ত হয়ে আত্মরক্ষায় পাল্টা অভিযোগ তোলেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ইমাম সাহেবকে ‘চেয়ারম্যান চড়থাপ্পড় মেরেছেন’ মর্মে অভিযোগ তোলে ধর্মীয় ইস্যু বানিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন ওই ইমাম। নালিতাবাড়ী উপজেলার ১নং পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বারমারী আন্দারুপাড়া গ্রামে শনিবার (২৪ এপ্রিল) এ ঘটনা ঘটে। সুত্রে জানা গেছে, আন্দারুপাড়া গ্রামের শান্তির মোড় মসজিদের ইমাম সাইফুল ইসলাম পার্শ্ববর্তী বুরুঙ্গা গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কিশোরী কন্যা ও বেগম রৌশন আরা একাডেমির অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে একই গ্রামের অপর কিশোর এবং কিশোরীর ফুফাতো ভাই জামালের প্রতি বশিকরণ করতে প্রায় ছয় মাস আগে ৫শ টাকার বিনিময়ে তাবিজ করে দেন। কিন্তু গত প্রায় ৪ মাস যাবত ওই কিশোরী বশিভূত হওয়ার পরিবর্তে শারিরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। নানা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করলে বিভিন্ন চিকিৎসক হয়ে অবশেষে কবিরাজের শরণাপন্ন হলে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ওই কিশোরীর অভিভাবক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ মিয়ার কাছে নালিশ করলে আজাদ মিয়া স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম, মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার বাছির উদ্দিনসহ কয়েকজনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেন। পরে শনিবার দুপুরে বারমারী বাজারে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এ নিয়ে গ্রাম্য শালিশ বসে। শালিশে কিশোর জামাল তাবিজের কথা স্বীকার করার একপর্যায়ে মসজিদের ইমাম সাইফুল ইসলামও বিষয়টি স্বীকার করেন। পারিবারিক সম্মান রক্ষায় এ নিয়ে আর হৈচৈ না করে পাল্টা তাবিজের মাধ্যমে কিশোরীকে সুস্থ করার অঙ্গীকার করেন ইমাম সাইফুল। পরে একটি লিখিত শালিশনামা তৈরি করে সাইফুলের পিতা, ইউপি সদস্য, মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়াসহ স্থানীয় লোকজনের জিম্মায় এক সপ্তাহের সময় বেধে দেওয়া হয়।এর কিছুক্ষণ পরই ইমাম সাইফুল ইসলাম চেয়ারম্যানের প্রতি অভিযোগ তোলেন, তাকে গোপন কক্ষে নিয়ে চড়থাপ্পড় মারা হয়েছে। মুহূর্তেই চেয়ারম্যান এর প্রতিপক্ষ বিষয়টি নিয়ে বারমারী বাজারে উত্তেজনাকর পরিবেশ তৈরি করে। শালিশে উপস্থিত লোকেদের বাড়িঘরে গিয়ে হামলা করে জিম্মি করে রাখে। কাউকে বা পথ রোধ করে হামলা করতে উদ্যত হয়। এসময় আশপাশের বাড়িতে লুকিয়ে আত্মরক্ষা করেন শালিশকারীরা। আশপাশের ইমাম-আলেমসহ প্রতিপক্ষের লোকজন জড়ো হতে থাকে বারমারী বাজার ও শান্তির মোড়ে। পরে সন্ধ্যায় ইফতারের সময় হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এদিকে, রাতেই শালিশে উপস্থিত ও হামলার শিকার বাছির উদ্দিন বাদী হয়ে ইমামের সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে ইমামের পক্ষেও ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও শালিশে উপস্থিত চারজনকে অভিযুক্ত করে পাল্টা অভিযোগ করেন।
ইমাম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি কোন তাবিজ করিনি। মিথ্যা অভিযোগ তোলে চেয়ারম্যান তার গোপন কক্ষে নিয়ে টুটি চেপে ধরে আমার গালে থাপ্পাড় দিয়েছেন।
তবে কিশোর জামাল জানায়, তার কথামতো ইমাম সাইফুল ৫শ টাকার বিনিময়ে তাকে বশিকরণের তাবিজ বানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাবিজ উল্টো রি-এ্যাকশন করায় ইমাম সাইফুল পুনরায় তাবিজ দিয়ে ঠিক করার কথা দিয়েছেন।
বুরুঙ্গা গ্রামের ইউপি সদস্য ও শালিশে উপস্থিত নুরুল ইসলাম জানান, আমাদের সামনে ইমাম সাইফুল ইসলাম ও কিশোর জামাল তাবিজ করার কথা স্বীকার করে এক সপ্তাহের সময় নিয়েছে। যা হয়েছে তা শালিশে প্রকাশ্যেই হয়েছে। গোপন কক্ষে মারধরের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার ও শালিশকারী বাছির উদ্দিন জানান, সবার সামনে ইমামের দোষ প্রমাণিত হয়েছে, তিনি স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন। কিন্তু বেরিয়ে গিয়ে পাল্টা অভিযোগ তোলে আত্মরক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছেন এবং ধর্মীয় ইস্যু বানিয়ে আমার বাড়িঘরে হামলা করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া জানান, চড়থাপ্পড়রের কোন ঘটনাই ঘটেনি। ইমাম সাহেব নিজের অপকর্ম আড়াল করতে এখন পাল্টা অভিযোগ তোলছেন। অথচ শালিশনামায় তার দোষের কথা উল্লেখ করে তাকে জিম্মায় নিয়েছে তারই পিতাসহ গণ্যমান্যরা।
নালিতাবাড়ী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল জানান, দুই পক্ষেরই লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অপরদিকে, ইমাম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চড়থাপ্পড়ের অভিযোগ এনে ভিডিও রেকর্ড দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার পর শালিশে ইমামের নিজের মুখের তাবিজ করার স্বীকারোক্তি ভাইরাল করে দিয়েছেন শালিশে উপস্থিত লোকজন।
স্থানীয়রা জানান, শালিশে নিজের অপরাধ স্বীকার করার পরও বাইরে এসে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চড়থাপ্পড়ের অভিযোগ তোলে ইমাম সাইফুল ধর্মীয় ইস্যু বানিয়ে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন। প্রতিপক্ষের লোকজনও বিষয়টি নিয়ে জল ঘোলা করে চলেছেন। ধর্মীয় ইস্যু বানিয়ে এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিতে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।