দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় চালু হওয়া ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে মৃত্যু কমে দাঁড়িয়েছে দুই জনে। সোমবার (২৬ এপ্রিল) হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসির উদ্দিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘গতকাল (রোববার) ১৪৫ জন রোগী ভর্তি ছিল। এর মধ্যে ৯৭ জন রোগী আইসিইউতে রয়েছে। গতকাল মৃত্যু হয়েছে দুইজনের। মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশে করোনা অনেকটাই স্ট্যাবল হয়েছে। আশা করছি, আগামী দিনে আমাদের সক্ষমতার হারও অনেকটা বৃদ্ধি পাবে।’
নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৭২৬ জন করোনা টেস্ট করেছে। গত সাত দিনে আটজন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। এই রোগীগুলো অনেক কঠিন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আমি আশা করছি, সুস্থ হওয়ার হার আগামী দিনে আরও বাড়বে। আজ ৩২ বেডের এসডিইউ চালু করেছি এবং আগামীকালও (মঙ্গলবার) ৩২ বেডের এরকম একটা এসডিইউ চালু করব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক ডাক্তার জয়েন করেছেন এবং আগামীকালও করবেন। ডাক্তারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আইসিইউ বেডও বাড়বে। আমরা বলেছি এই হাসপাতালে ২০০ আইসিইউ বেড রয়েছে। আমাদের ম্যানপাওয়ার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আইসিইউ বেড বাড়ানো হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, ‘অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার ল্যাব এখানে এখনও স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। যাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হচ্ছে, তাদের স্যাম্পল নিয়ে আমাদের লোকজন দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আনছি। আজ এখানে অনেক টেস্ট করানো শুরু করেছি, কাল আরও কিছু রোগের টেস্ট করানো শুরু হবে। আস্তে আস্তে সব রোগেরই টেস্ট করানো পর্যায়ক্রমে শুরু করা হবে। দুএকদিনের মধ্যে এখানে জিন এক্সপার্টরাও এসে যাবেন এবং ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে প্যাথলজিস্ট হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। আমরা প্রতিদিনই একটু একটু করে এগোচ্ছি। ইনশাআল্লাহ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের পুরো সক্ষমতা বেড়ে যাবে।’
হাসপাতালের কাউন্টার থেকে জানা গেছে, ভর্তি হওয়ার জন্য গত সাত দিনে ৭৪৪ জন টিকিট সংগ্রহ করেছেন। তবে টিকিট সংগ্রহের পর ডাক্তারের পরামর্শে কেউ ভর্তি হন, আবার কেউ বাসায় গিয়ে চিকিৎসা নেন।
করোনা রোগীটির জন্য হাসপাতালটিতে যা যা থাকছে
হাসপাতালটিতে ২১২ শয্যার অত্যাধুনিক কোভিড আইসিইউ শয্যা রয়েছে। ২৫০ কোভিড শয্যাসহ (এইচডিইউ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন ও হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা) অন্যান্য ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে ৫০ শয্যার জরুরি বিভাগ ও ছয় শয্যার ট্রায়াজ বেড রয়েছে। তাছাড়া ৫৩৮টি কোভিড আইসোলেটেড কক্ষ রয়েছে, যেগুলোতে সিলিন্ডার অক্সিজেন ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে।
হাসপাতালটিতে সর্বমোট ১০০০ শয্যায় কোভিড রোগীর জরুরি চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রয়েছে আধুনিক অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। তাছাড়া ৫০০ কেভিএ জেনারেটর ও ১০০০ কেভিএ হাই ভোল্টেজ বৈদ্যুতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অগ্নিনির্বাপণের জন্য ৯০ হাজার লিটার ওয়াটার রিজার্ভার রয়েছে।
করোনা রোগীরা যেভাবে ভর্তি হবেন ও সেবা নেবেন
করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বা উপসর্গ আছে- এমন রোগীদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা প্রথমে ট্রায়াজে প্রবেশ করবেন। সেখানে দুটি জোন আছে। যাদের মৃদু উপসর্গ আছে বা হেঁটেই আসবেন, চিকিৎসা নেওয়ার জন্য তাদের যদি ভর্তি প্রয়োজন না হয় তবে ভর্তি করা হবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাকে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হবে। পরে এসে তিনি আবার রিপোর্ট করতে পারবেন।
করোনায় ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা
ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা রয়েছে এই হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, যারা করোনা সংক্রমিত হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আসবে তারা ট্রায়াজ-২ এ চলে যাবেন। সেখানে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা আছে। ছয় বেডের একটি আইসিইউ সেটআপ নিচ তলাতেই রয়েছে। সেখানে ভেন্টিলেটরের সুযোগও থাকছে। আর তাই ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডেই ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের স্ট্যাবল হওয়ার সুযোগ আছে। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পাঠিয়ে দেওয়া হবে দ্বিতীয় তলার ওয়ার্ডে। সেখানে যদি কারও অবস্থা খারাপ হয় তবে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আইসিইউ বা এইচডিইউতে। আর যদি একটু স্ট্যাবল হয় বা ঝুঁকির মাত্রা কমে আসে তবে তাদের কেবিনে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই কেবিনগুলোতে সেন্ট্রাল অক্সিজেনসহ হাই ফ্লো নাজাল ক্যানোলা সুবিধা রয়েছে। সেখানে রোগীরা কিছুটা স্ট্যাবল হলে তাদের ধীরে ধীরে ডিসচার্জ হওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিতে ৫০০ চিকিৎসক, ৭০০ নার্স, ৭০০ স্টাফ এবং ওষুধ, সরঞ্জামের ব্যবস্থা করছে মন্ত্রণালয়।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে চালু হওয়া কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে গত সোমবার (১৯ এপ্রিল) থেকে রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে।