সম্প্রতি সমুদ্রে ডুবে যাওয়া ইন্দোনেশিয়ায় একটি সাবমেরিনের নাবিকদের বিদায়ী সঙ্গীতের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার নৌবাহিনীর প্রকাশ করা ওই মর্মস্পর্শী ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ডুবে যাওয়া সাবমেরিনের নাবিকেরা দেশটির একটি জনপ্রিয় গান গাচ্ছেন; যেখানে স্ত্রী বা প্রেমিকা বিদায় জানানো হচ্ছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নাবিকেরা সাম্পাই জুমপা নামে ইন্দোনেশিয়ার একটি হিট গান গাইছেন, যার মানে হচ্ছে ‘আবার দেখা হবে’। কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন যে গত বুধবার ডুবে যাওয়া সাবমেরিন কেআরআই নাঙ্গালার ধ্বংসাবশেষ রোববার সাগরের তলদেশে পাওয়া গেছে।
সাবমেরিনে থাকা ৫৩ জন নাবিকের সবাই মারা গেছেন। নিখোঁজ হওয়ার আগে এক টর্পেডো মহড়ায় অংশ নিয়েছিল সাবমেরিনটি এবং এর ডুবে যাওয়ার কারণ এখনও জানা যায়নি।
কী গান গেয়েছিলেন নাবিকেরা
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে- নাবিকেরা অ্যাকুস্টিক গিটার বাজিয়ে গান গাইছেন, আর তাদের সঙ্গে সাবমেরিনের কমান্ডার হ্যারি অকটাভিয়ানও রয়েছেন। তাদের গানের কথাগুলো এরকম—‘যদিও এখনই তোমাকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত নই আমি, কিন্তু তোমাকে ছাড়া বেঁচেও থাকতে পারবো না। তোমার ভালো/ মঙ্গল হোক।’
ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ডিজাওয়ারা হুইমবো বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তার বিদায়ী সংবর্ধনার জন্য গাওয়া হচ্ছিল গানটি, তখন সেটি রেকর্ড করা হয়েছিল।
এদিকে দেশটির নৌবাহিনী জানিয়েছে, তারা সাবমেরিনটির ধ্বংসাবশেষ এবং নাবিকদের মরদেহ উদ্ধারের পরিকল্পনা করেছে। এসব ধ্বংসাবশেষ সাগরের ৮০০ মিটারেরও বেশি গভীরে রয়েছে, এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন সাগরের গভীর তলদেশ থেকে উদ্ধারকাজ চালাতে বিশেষায়িত যন্ত্রপাতি প্রয়োজন হবে।
স্বজনদের শোকসভা
সোমবার নিহত নাবিকদের স্বজনেরা বালির সমুদ্রতীরে এক শোকসভায় মিলিত হন। সেখানে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো সাবমেরিনের নাবিকদের দেশের ‘সেরা দেশপ্রেমিক’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, নিহত নাবিকদের সন্তানদের পড়াশোনার খরচ সরকার বহন করবে।
জার্মানিতে তৈরি কেআরআই নাঙ্গালা সাবমেরিনটির বয়স ছিল ৪০ বছর, কিন্তু নৌবাহিনী বলছে ২০১২ সালে এটিকে সংস্কার করা হয়েছিল।
নিখোঁজ সাবমেরিন অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং ভারত অংশ নিয়েছিল। তখনও আশা করা হচ্ছিল সাবমেরিনটি হয়তো উদ্ধার করা সম্ভব হবে এবং নাবিকদের হয়তো বাঁচানো যাবে।
কিন্তু রোববার কর্মকর্তারা জানান, সাবমেরিনটির থেকে সিগনাল পেয়েছেন তারা। এরপরই সিঙ্গাপুর থেকে আনা একটি উদ্ধারকারী ডুবোজাহাজ পাঠানো হয় সাবমেরিনের অবস্থান এবং ধ্বংসাবশেষের চাক্ষুষ প্রমাণ দেখে আসতে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা