দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর করোনাভাইরাসের প্রভাব মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে সরকার। এ কর্মসূচিতে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে এক লাখ দুই হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা বেশি। সম্ভাব্য এ বরাদ্দ দেশের জিডিপির ৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ নিয়ে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে একটি বিশেষ সভা হয়েছে। সেখানে আরও ১৫০ উপজেলার সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীকে ভাতার আওতাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ১২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত তিন হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি নির্মাণেও বাজেটে বরাদ্দ রাখা হবে। বর্তমানে সারাদেশে এক লাখ ৮৬ হাজার ৪০৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পেয়ে থাকেন।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে ১১২টি উপজেলার সব বয়স্ক এবং বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীকে ভাতার আওতাভুক্ত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। বর্তমানে সারাদেশে ৪৯ লাখ বয়স্ক নাগরিককে মাসে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয় সরকার। নতুন করে ১৫০ উপজেলায় সব বয়স্ককে ভাতার আওতাভুক্ত করা হলে ভাতাভোগীর সংখ্যা আরও আট লাখ বাড়তে পারে। একইভাবে সোয়া পাঁচ লাখ বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারী নতুন করে ভাতার আওতাভুক্ত হবেন। বর্তমানে সারাদেশে ২০ লাখ ৫০ হাজার নারীকে ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয় সরকার। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তার ১২৩টি কর্মসূচি রয়েছে। ৩০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় গত ডিসেম্বরে ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীদের নিয়ে তিনটি বৈঠক করে। এসব বৈঠকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রস্তাব আসে। সরকারের উদ্যোগ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকার বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারীদের সামাজিক সুরক্ষায় অন্তর্ভুক্তি বাড়াচ্ছে। এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোও ঠিক আছে। তবে এসব প্রচলিত সামাজিক সুরক্ষার অংশ। করোনার কারণে যারা নতুন করে দরিদ্র হয়েছে, চাকরি হারিয়েছে- তাদের জন্য জরুরিভিত্তিতে বাজেটে বরাদ্দ থাকা দরকার।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (সামাজিক নিরাপত্তা) সাব্বির ইমাম বলেন, বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা পাওয়ার একটি নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালায় কারা ভাতা পাবেন এবং কে আগে পাবেন তার অগ্রাধিকার স্পষ্ট করা আছে। বর্তমানে ১১২ উপজেলায় নীতিমালা অনুযায়ী ভাতার জন্য যোগ্য সবাইকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আর অন্যান্য উপজেলায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যারা এগিয়ে রয়েছেন, তাদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
বয়স্ক ভাতার নীতিমালায় বলা হয়েছে, পুরুষের বেলায় ৬৫ বছর বা তার বেশি এবং নারীর বেলায় ৬২ বছর বা তার বেশি বয়স্ক নাগরিকরা ভাতার জন্য বিবেচিত হন। তবে বেশি বয়স, শারীরিক সক্ষমতা, নিঃস্ব, উদ্বাস্তু, ভূমিহীন, বিধবা, তালাকপ্রাপ্তা, বিপত্নীক, নিঃসন্তান, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। বসতবাড়ি ছাড়া অন্যান্য জমির পরিমাণ আধা একর হলেই তাকে ভূমিহীন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যাদের বছরে গড় আয় ১০ হাজার টাকার বেশি নয়, তারা এ সুবিধা পান। অন্যদিকে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতাভোগী হওয়ার জন্য নূ্যনতম বয়স ১৮ বছর। তবে এ ক্ষেত্রে বেশি বয়সীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। যাদের ১৬ বছরের কম বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে, তারা অগ্রাধিকারের শীর্ষে থাকেন। এসব নারীর বার্ষিক আয় ১২ হাজার টাকার বেশি হবে না।
সূত্র : সমকাল