বিশেষ প্রতিনিধি গাইবান্ধা :
এবার দাদনের টাকা দিতে না পারায় ভিটেমাটি হারিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কোব্বাস আলী (৪০) নামে এক বাস চালক।
খবর পেয়ে পুলিশ সোমবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের রথেরবাজার (জেলাল পাড়া) গ্রামর বাড়ি থেকে কোব্বাস আলীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
কোব্বাস আলী পেশায় ঢাকাগামী শ্যামলী পরিবহণের নৈশ্য কোচের চালক ছিলেন। তিনি জেলাল পাড়া গ্রামের আজিজার রহমান ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, দেড় বছর আগে কোব্বাস আলী সাংসারিক অভাবের কারণে দশানি গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী সোনা মিয়ার কাছে ত্রিশ হাজার টাকা সুদের ওপরে নেয়। পরে সুদে-আসলে ওই টাকা ১ লাখ ২০ হাজারে দাঁড়ায়। সুদের টাকা দিতে না পারায় কিছু দিন আগে কোব্বাসের একমাত্র ভিটেমাটি জোরপূর্বক স্ট্যাম্পে লিখে নেয় দাদন ব্যবসায়ী সোনা মিয়া। এতেও ক্ষ্যান্ত হয়নি দাদন ব্যবসায়ী সোনা মিয়া। সোনা মিয়া গত শনিবার টাকার জন্য কোব্বাস আলীকে বেধরক মারপিট করেন। টাকা দিতে না পারায় আর দাদন ব্যবসায়ী সোনা মিয়ার মারধরের শিকার হয়ে কোব্বাস আলী গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ঘরে তার লাশ ঝুলতে দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা।
কোব্বাসের পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে সম্প্রতি এনিয়ে শালিশ হয়। সেই শালিশে লাভের অংশ বাদ দিয়ে আসলের ত্রিশ হাজার টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। শালিশ বৈঠকে সোনা মিয়া সব কিছু মেনে নেয়। কিন্তু তারপরেও শনিবার লাভের টাকার জন্য কোব্বাসকে চাপ দেয় সোনা মিয়া। ওই টাকা না দেয়ায় শনিবার বাড়ি থেকে কোব্বাসকে তুলে নিয়ে গিয়ে মারপিট করে সোনা মিয়াসহ তার লোকজন। দাদানের টাকা আর সোনা মিয়ার চাপে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে কোব্বাস আলী। ঘটনার সঠিক তদন্ত করে বিচার করেন কোব্বাসের স্বজনরা।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে খোলাহাটি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোস্তফা জামান মিন্টু জানান, দাদন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত এলাকার সোনা মিয়ার কাছে দেড় বছর আগে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিলো কোব্বাস। সেই টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে ১৮ মাসে দাঁড়ায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়। এই টাকার জন্য কোব্বাসের বাড়ি-ভিটে স্ট্যাম্প করে নেয় সোনা মিয়া। এরপরেও তাকে মারধরও করে সোনা মিয়া। বাড়ি-ভিটে লিখে দেয়া ছাড়াও টাকার জন্য সোনা মিয়ার মারধর ও চাপের কারণেই মৃত্যুর পথ বেছে নেয় কোব্বাস।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাফুজার রহমান জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। কোব্বাস আলী দাদনের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আত্মহত্যা করেছে বলে তার পরিবার সুত্রে জানা গেছে। এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এরআগে, সুদের টাকা দিতে না পারায় গাইবান্ধা জেলা আ.লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক (সম্প্রতি অব্যহতি) মাসুদ রানার জিম্মায় থাকা জুতা ব্যবসায়ী হাসান আলীর গত ১০ এপ্রিল সকালে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মাসুদ রানাসহ ব্যবসায়ী রুমেন হক ও খলিলুর রহমান বাবুকে আসামি করে পরদিন সদর থানায় হত্যা মামলা করে হাসানের স্ত্রী বিথী বেগম। ঘটনার পর অভিযুক্ত মাসুদ রানাকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের সোপর্দ করে স্থানীয় জনতা। এছাড়া মামলার অপর দুই আসামি এখনো পলাতক।
এছাড়া লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গাইবান্ধা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মজিবর রহমান ও এএসআই মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্বে অবহেলায় দায়ে সম্প্রতি পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।