1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহানকে নিয়ে ধোঁয়াশা

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : বুধবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২১
বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহানকে নিয়ে ধোঁয়াশা
সায়েম সোবহান আনভীর (ডানে) মোসারাত জাহান মুনিয়া (বামে)

মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের পর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। রাজধানীর গুলশানে লাখ টাকার ভাড়া বাসায় একাই থাকতেন ২১ বছরের এ তরুণী। ঘটনার পর মুনিয়ার সঙ্গে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের কিছু অন্তরঙ্গ ছবি ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকে। অভিযোগের আঙ্গুলও তার দিকে।

আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা করেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। মামলার পর তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীর ঘটনার পরই দেশ ছেড়েছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও ইমিগ্রেশন পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আনভীর দেশেই আছেন। তবে তিনি কোথায় আছেন- তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইমিগ্রেশন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তাদের সিস্টেমে চেক করে দেখা গেছে- সায়েম সোবহান আনভীর দেশেই আছেন।

এছাড়া ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা আদালতের নিষেধাজ্ঞার পর ইমিগ্রেশনে চিঠি লিখেছি। মৌখিকভাবে তার বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে খোঁজ নিয়েছি। তিনি দেশের বাইরে যাননি বলে জানিয়েছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।

বিমানবন্দরের একটি সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলে একটি চাটার্ড ফ্লাইটে সায়েম সোবহান আনভীরের পরিবারের সদস্যদের দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে ভিপিসি-১১ নম্বর ফ্লাইটে সায়েম সোবহানের ভাই সাফওয়ান সোবহান, রানিয়া আফরোজ সোবহান, শেহজাদ সোবহান, পিয়াসা সোবহান দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন। এছাড়া ওই ফ্লাইটে হোসনে আরা খাতুন ও মন্টু মিয়া নামে আরো দুই যাত্রী ছিলেন।

বিমানবন্দরের ওই সূত্র জানায়, এ ফ্লাইটেই সায়েম সোবহান আনভীরসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে অন্যরা কেউ যাননি।

সোমবার সন্ধ্যায় গুলশান দুই নম্বর অ্যাভিনিউয়ের ১২০ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর প্লটের বি/৩ ফ্ল্যাট থেকে মুনিয়ার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় রাত ৩টার দিকে গুলশান থানায় মামলা করেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান।

পুলিশ জানিয়েছে, এক লাখ টাকা ভাড়ায় দুই মাস আগে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন মুনিয়া। তবে ফ্ল্যাটে তিনি একাই থাকতেন।

নিহত মুনিয়া কুমিল্লা সদরের দক্ষিণপাড়া উজির দিঘী এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমানের মেয়ে। তিনি মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।

মামলার এজাহারে বলা হয়, দুই বছর আগে মামলার আসামি সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে মুনিয়ার পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর থেকে তারা বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় দেখা করতেন এবং সব সময় মোবাইলে কথা বলতেন। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

২০১৯ সালে মুনিয়াকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রাজধানীর বনানীতে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন আনভীর। সেখানে তারা থাকতে শুরু করেন। ২০২০ সালে এক নারীর মাধ্যমে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে আনভীরের পরিবার। এরপর মুনিয়াকে ডেকে ভয়ভীতি দেখান তার মা। একই সঙ্গে তাকে ঢাকা থেকে চলে যেতে বলেন। এরপর মুনিয়াকে কৌশলে কুমিল্লায় পাঠিয়ে দেন আনভীর। পরে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন।

সর্বশেষ গত ১ মার্চ মুনিয়াকে প্ররোচিত করেন আনভীর। তিনি বাসা ভাড়া নিতে নুসরাত ও তার স্বামীর পরিচয়পত্র নেন। ফুসলিয়ে মুনিয়াকে ঢাকায় আনেন। এরপর গুলশানের ১২০ নম্বর সড়কে বাসা (ফ্ল্যাট-বি-৩) ভাড়া নেন। ফ্ল্যাটের একটি কক্ষে স্বামী-স্ত্রীর মতো ছবি তুলে আনভীর ও মুনিয়ার ছবি বাঁধিয়ে রাখা হয়। আনভীর বাসায় এলে কক্ষটি পরিপাটি করে রাখা হতো।

বোনের মাধ্যমে মামলার বাদী জানতে পারেন, মুনিয়াকে বিয়ে করে বিদেশে স্থায়ী হবেন আনভীর। কারণ, দেশে থাকলে তার মা–বাবা মুনিয়াকে মেরে ফেলবেন। গত ১ মার্চ থেকে মাঝেমধ্যে ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতেন আনভীর।

এজাহারে নুসরাত আরো উল্লেখ করেন, ২৩ এপ্রিল তাকে ফোন করেন মুনিয়া। তিনি (মুনিয়া) জানান- আনভীর তাকে বকা দিয়ে বলেছেন, কেন তিনি ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করেছেন, ছবি তুলেছেন। ফ্ল্যাটের মালিকের স্ত্রী ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এ ছবি পিয়াসা দেখেছেন। পিয়াসা মালিকের স্ত্রীর ফেসবুক বন্ধু। এখন পিয়াসা তার মাকে সবকিছু জানিয়ে দেবেন। তিনি (আনভীর) দুবাই যাচ্ছেন, মুনিয়া যেন কুমিল্লায় চলে যান। আনভীরের মা জানতে পারলে তাকে (মুনিয়া) মেরে ফেলবেন।

দুদিন পর ২৫ এপ্রিল আনভীরকে ফোন করেন মুনিয়া। ওই সময় তিনি কান্নাকাটি করে বলেন, আনভীর তাকে বিয়ে করবেন না, শুধু ভোগ করেছেন। আনভীরকে উদ্ধৃত করে মুনিয়া জানান- আনভীর তাকে বলেছেন, তিনি (মুনিয়া) তার শত্রুর সঙ্গে দেখা করেছেন। মুনিয়াকে তিনি ছাড়বেন না।

মুনিয়া চিৎকার করে জানান, তাকে ধোঁকা দিয়েছেন আনভীর। যেকোনো সময় তার বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তারা (নুসরাতের পরিবার) যেন দ্রুত ঢাকায় আসেন। নুসরাত তার আত্মীয়-স্বজন নিয়ে বেলা ২টার দিকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় রওনা দেন। আসার পথে বারবার মুনিয়ার ফোনে ফোন করেন। কিন্তু তিনি আর ফোন ধরেননি। গুলশানের বাসায় পৌঁছে দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলে ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে নিচে নেমে আসেন। তারা নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষ থেকে বাসার ইন্টারকমে ফোন করেন। পরে ফ্ল্যাটের মালিকের নম্বরে ফোন দিলে মিস্ত্রি এনে তালা ভেঙে ঘরে ঢোকার পরামর্শ দেন। মিস্ত্রি ডেকে তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকার পর তিনি দেখেন, তার বোন ওড়না পেঁচিয়ে শোয়ার ঘরের সিলিংয়ে ঝুলে আছেন।

পরে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পুলিশ এসে ওড়না কেটে মুনিয়ার লাশ নামায়। আলামত হিসেবে আনভীরের সঙ্গে ছবি, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে লেখা ডায়েরি ও মুনিয়ার ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন উদ্ধার করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি