শেরপুরঃ
বাংলার স্থপতি, বাঙ্গালী জাতির শ্রেষ্ট সন্তান, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে দেশের বিভিন্ন স্থানেবিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও তাঁর নামে আজ পর্যন্ত কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ হয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।
একটি দোকানের সাইনবোর্ডে বঙ্গবন্ধুর নামকরণ দেখে থমকে দাঁড়ালাম বিষয়টি জানার জন্য। দোকানের নাম দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু নাইট স্টোর। এগিয়ে গেলাম দোকানটির দিকে। দোকানের মালিক মুজিব পাগল মো. হারুন অর রশিদের সাথে কথা বলে জানা গেল অনেক অজানা কথা। ৩৩-৩৪ বছরের যুবক হারুন। ১ ছেলে ১ মেয়ের জনক। ৩ ভাই ১ বোনের মধ্যে হারুন ৩য়। বাবা আব্দুল মালেক বেশ আগেই মারা গেছেন। বোনটির বিয়ে দেওয়ার পর অন্য ২ ভাই বিবাহ্ করে আলাদা সংসার করছে। হারুনের বৃদ্ধ মাসহ ৫ জনের সংসার।
জীবিকার তাগিদে ছোট বেলায় হারুন ঢাকায় চলে যায়। দীঘর্দিন জুতার কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে কারখানার পাশে থাকা আওয়ামীলীগের অফিসে গিয়ে নেতাদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন সম্পর্কে জানতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রেমে পড়ে যায় যুবক হারুন। গত ৫ বছর আগে সে কারখানার কাজ বাদ দিয়ে নিজ গ্রামে চলে আসে। গ্রামে এসেই তার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতেই মধ্য কুমরী গ্রামের বাজিতখিলা ব্র্যাক অফিসের সন্মুখে গাজীরখামার রোডে তার এ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা। তার একমাত্র আয়ের পথ হল ছোট্ট একটি দোকান। এ দোকান চালিয়ে পরিবারের ভরণ পোষণ করা। সেই সাথে ব্যবসার কিছু মুনাফা থেকে মুজিব ভক্তদের বিনামুল্যে চা খাওয়ানো। ঘটনাটি ঘটেছে জেলার সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের মধ্য কুমরী গ্রামে।
মুজিব পাগল হারুনের সাথে কথা বলে জানা গেল তার উদ্দেশের কথা। সে এ প্রতিবেককে জানায়, “আমি বঙ্গবন্ধুকে দেখেনি, স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক পরে আমার জন্ম। এ দেশে যদি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হতো, তাহলে এ দেশ কখনো স্বাধীন হতোনা, আমরা স্বাধীনতা পেতাম না। অথচ আমি যে ইউনিয়নে বসবাস করছি, যে গ্রামটি আমার জন্মস্থান, সে গ্রামটির একটি অলিখিত নাম রয়েছে দ্বিতীয় পাকিস্থান। এ নামটি আমি ঘোচাতে চাই। সে কারণেই বঙ্গবন্ধু নাইট স্টোর নাম দিয়ে দৈনিক আমার ব্যবসার আয় থেকে প্রতিদিন ৬০/৭০ জনকে বিনা টাকায় চা খাওয়াই। এছাড়া করোনাকালীণ সময়ের শুরু থেকে এখন পযন্ত যাহারা মাস্ক ছাড়া আমার দোকানে আসে চা খেতে, তাদেরকে আমি বিনামূল্য মাস্ক দেই। আমি একদিনে হয়তো এ গ্রামটিকে জামায়াত শিবির মুক্ত করতে পারবো না, তবে আমি চেষ্টা চালিয়ে যাবো আজীবন। হারুনকে জিঙ্গেস করা হলো, দেশের এখন প্রত্যেকটি পাড়া মহল্লায় আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শক্তিশালী কমিটি আছে, তারা প্রতিনিয়ত এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। এলাকাটি জামায়াত অধ্যুষিত জেনেও সেখানে আপনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বাড়ানোর যে সিদ্ধান্তটি আপনি নিয়েছেন, নিঃসন্দেহে তা প্রশংসার দাবীদার। কিন্তু এ সরকারের যদি প্রেক্ষাপট পরিবতর্ণ হয়, তখন আপনার অবস্থা কি হবে, তা কি একবার ভেবে দেখেছেন আপনি? ৮ম শ্রেনী পযন্ত পড়ালেখা এই যুবকের সাফ উত্তর, এলাকায় টিকতে না পারলে আবার না হয় দেশের জন্য, আমার প্রাণের নেতা, আমার স্বপ্ন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্য যুদ্ধ করে নিজের জীবনটাকে বিলীয়ে দিবো। তবুও দেশ বিরুধীদের কাছে মাথা নত করবোনা।
এ ব্যাপারে বাজিতখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আমের আলী সরকার জানান, যুবক হারুনের দোকানটির আমি উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত থেকে উদ্বোধন করেছিলাম। তার পর থেকে দোকানটি চলছে। তার এ দোকানের প্রচার প্রচারনা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমি তার এ উদ্দেশের সফলতা কামনা করছি।
শেরপুর সদর উপজেলার কৃষক লীগের সভাপতি আল হেলাল জানান, আমি তার দোকানের ব্যাপারে জানি। মাঝে মধ্যে আমিও তার দোকানে গিয়ে চা খেয়ে আসি। তার উদ্দেশ্যটি মহৎ বলেই মনে হচ্ছে।