শেরপুরঃ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের বনকুড়া গ্রামের বয়সের ভাড়ে ন্যুজ, পঙ্গু আজিবরের জিজ্ঞাসা- বাবারে কোথায় গেলে পঙ্গু ভাতা পামু ? এমন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কথা হয় আজিবরের সাথে। জানা গেলো তার জীবনের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হৃদয় বিদারক এক মর্মান্তিক কাহিনী। তার কাহিনীতে প্রতিবেদকের চোখে পানি আসলেও, সেখানকার কোন জননেতা, জনপ্রতিনিধি,ইউপি মেম্বার বা চেয়ারম্যানের হৃদয় কাঁদেনি। বনকুড়া গ্রামের মৃত মজিবরের ছেলে পঙ্গু ও বৃদ্ধ আজিবর বলেন, এ গ্রামেই আমার জন্ম। আমি গরীর হলেও আমার একটি সুখের সংসার ছিল। ৩ ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে দু’বেলা দু’ মুটো মোটা ভাত খেয়ে দিনাতিপাত করতে ছিলাম। আয় রোজগার কম থাকায় বউ বাচ্চাদের গ্রামের বাড়ীতে রেখে আমি ঢাকার গাজীপুরায় গিয়ে রিক্সা চালাতাম। দিন ভালই কাটতে ছিল। বিধাতা আমার এ সুখটাকে সহ্য করলেন না। যাত্রী নিয়ে রিক্সা চালিয়ে যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আমি মারাক্তক ভাবে আহত হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে দেখি, আমি হাসপাতালের বিছানায়। চিকিৎসা করে কিছুটা সুস্থ্য হলেও হারিয়ে ফেলি পা দুটির শক্তি, মুখের কথাও হয়ে যায় অস্পষ্ট। আমাকে নিয়ে আসা হয় গ্রামের বাড়ীতে। তখন আমার ছোট ছেলে হৃদয়ের বয়স ১ বছর। আমার স্ত্রী আমার এ অবস্থা দেখে বড় দুই ছেলে শাহিন বর্তমানে যার বয়স ১৮ ও শান্ত(১৪) কে আমার বাড়ীতে এবং ১ বছরের শিশু হৃদয়কে তার নানীর কাছে রেখে সে অন্যত্র চলে যায়। আর ফিরে আসেনি। পরবর্তীতে স্ত্রী ফিরে না আসলেও নানীর সাংসারিক অবস্থা ভাল না থাকায় শিশু হৃদয়ও চলে আসে পঙ্গু বাবার কাছে।
আজিবর জানান ভিটে মাটি ছাড়া অন্য কোন সহায় সম্ভল না থাকায় বাধ্য হয়ে সে ভিক্ষাবৃত্তির পথ বেছে নেয়। তার চলাচলের হুইল চেয়ারটিও ভিক্ষার টাকা দিয়ে কেনা। সে আরো জানান, আমি একটি পঙ্গু ভাতার কার্ডের জন্য মেম্বরের কাছে বহুবার গেছি। হাতদিয়ে হুইল ঠেলে ঠেলে নন্নী চেয়ারম্যানের কাছেও গেছি, তারা আমাকে পাত্তা দেইনা। তিনি আরো জানান, এ পর্যন্ত সরকারী বে-সরকারী কোন প্রকার দান অনুদান তার ভাগ্যে জুটেনি। পথে ঘাটে দশ জনের দেয়া ভিক্ষার পয়সা দিয়েই অনাহারে অধার্হারে দিন চলে ৪ জনের সংসার। সারা দিন ভিক্ষাবৃত্তি করে যা জুটে তাই রান্না করে দেয় বড় ছেলে শাহিন। আর এভাবেই জানা গেলো পঙ্গু আজিবরের জীবন কাহিনী।
এ ব্যাপারে নন্নী ইউনিয়নে ৯ নং ওয়াডের ইউপি সদস্য শফিকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে, অনুরোধ করে বলেন, ” ভাই আমি সুনামের সাথে কয়েক ট্রাম ধরে মেম্বার হিসেবে আছি, বিষয়টা আমি দেখবো, আপনারা পত্রিকায় লিখবেন না, এতে আমার সুনাম ক্ষুন্ন হবে। এতোদিন কেন তাকে কোন প্রকার সাহায্য কররেন না জবাবে তিনি বলেন, তার তো বউ নেই, তাই আমি তার নামে কোন বরাদ্ধ দিতে পারিনাই!
নন্নী ইউপি চেয়ারম্যান একেএম মাহবুবুর রহমান রিটনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন “আমি যতটুকু জানি আজিবর পঙ্গুভাতা পায়। পরবতীতে জানতে পারলাম,তার এক ভাই আজগর পঙ্গু, সে পায়। আমি আজিবরের বিষয়ট যতো দ্রুত সম্ভব দেখবো।”
বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা এলাকার সচেতন মহল।