দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ছাগল চুরির অপবাদে শারীরিক প্রতিবন্ধীসহ তিন কিশোরকে গাছে বেঁধে পৈশাচিক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় আরও দুই কিশোর নিখোঁজ রয়েছে।
শনিবার (১ মে) দুপুরে ফুলবাড়ী উপজেলার ৭ নম্বর শিবনগর ইউনিয়নের রামভদ্রপুর বুদ্ধিজীবীর মোড় নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রামভদ্রপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টারসহ আটজনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার ত্রিমোহনী সুইচ গেটের বাসিন্দা শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈয়দ শামীম হোসেন (১৬), পূর্ব জাফরপুর গ্রামের রাকিবুল ইসলাম (১৫) ও নিশাতকে (১৬) নিজ বাড়ি থেকে ডেকে তাদের রামভদ্রপুর গ্রামের বুদ্ধিজীবী মোড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদেরকে ওই গ্রামের রূপচাঁদের ছাগল চুরির অপবাদ দিয়ে শিক্ষক মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টার (৫০), মো. শাকিব (২৫), মো. শিপন (২৬), রেজাউল (৫৫), আফজার হোসেন (৬০), মো. শুভ (২৪), হৃদয় (২৫) ও নূরনবীসহ (২৬) ওই গ্রামের বেশ কয়েকজন গাছের সঙ্গে বেঁধে তাদের রড, পাইপ ও লাঠিসোটা নির্মমভাবে পেটান। চুরির স্বীকারোক্তি নিতে প্রকাশ্যে কিশোর তিনজনের পায়ে সিরিঞ্জের সুচ পায়ের তালুতে ফুটিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
এই বর্বরোচিত নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করেন গ্রামের বেশ কয়েকজন যুবক। মারপিট শেষে বাবু মাস্টারসহ তার সহযোগীরা আহত কিশোর তিনজনকে ‘ছাগল চোর’ আখ্যা দিয়ে শিবনগর ইউনিয়ন পরিষদে হাজির করেন। পরে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই তিন কিশোরের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়। পরে পরিবারের লোকজন প্রতিবন্ধী কিশোর রাকিবুল ও শামীম হোসেনকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। নির্যাতনের শিকার অপর কিশোর নিশাত নিজ বাড়িতে অসুস্থ অবস্থায় কাতরাচ্ছে। গ্রামের মাতবরদের নির্যাতনের ভয়ে নিখোঁজ রয়েছে নাঈম (১৪) ও নূর আলম (১৫) নামের আরও দুই কিশোর।
অপরদিকে মারপিট ঘটনার পর শনিবার রাতেই গ্রাম্য সালিশ বসে গ্রামের আমিন ড্রাইভারের বাসায়। সেখানে নিখোঁজ দুই কিশোরকে তিনদিনের মধ্যে হাজির হওয়ার করার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দেন সালিশের মাতব্বররা। হাজির করতে ব্যর্থ হলে জরিমানা হিসেবে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দিতে নির্দেশ দেয়া হয়।
সালিশ শেষে ওই রাতেই মাতব্বরদের নির্দেশে আহত নিশাদের নানির একটি গাভি এবং নিখোঁজ নূর আলমের বাড়ি থেকে একটি চার্জার রিকশাভ্যান নিয়ে যান মাতব্বরের লোকজন।
নির্যাতনের শিকার শারীরিক প্রতিবন্ধী সৈয়দ শামীম হোসেন ও রাকিবুল ইসলাম বলে, ‘হঠাৎ করেই বাবু মাস্টারসহ তাদের লোকজন আমাদেরকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান। পরে ছাগল চুরির অপবাদে পৈশাচিক নির্যাতন চালান। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাধ্য হয়ে চুরির অপবাদ স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু আমরা চুরি সম্পর্কে কিছুই জানি না। পরে তারা পাশের কলাবাগানে নিয়ে গলায় চাকু ধরে পায়ে সুই দিয়ে খোঁচাতে থাকেন।’
এ বিষয়ে রাকিবুলের বাবা মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এক প্রতিবন্ধী ও আমার ছেলেসহ তিনজনকে ছাগল চোর সাজিয়ে বর্বর নির্যাতন চালান বাবু মাস্টারসহ তার লোকজন। ছেলেকে ধরে নির্যাতন করা হচ্ছে জেনে ঘটনাস্থলে গেলে আমাকেও মারপিট করা হয়েছে।’
ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মামুনুর রশিদ চৌধুরী বিপ্লব বলেন, তার নির্দেশে বাদল মেম্বার ইউনিয়ন পরিষদে সোপর্দ করা দুই কিশোরকে নিজ নিজ অভিভাবকদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে মোস্তাকিম সরকার বাবু মাস্টার বলেন, ‘মারপিট করা ভুল হয়ে গেছে। আমি সার্ভিস করি। আমার যাতে কোনো ক্ষতি না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন।’
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফখরুল ইসলাম বলেন, গাছে বেঁধে তিন কিশোরকে নির্যাতনের ঘটনায় একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি এসআই আজাদকে তদন্তের জন্য বলা হয়েছে। তদন্তের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।