শেরপুরঃ শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানা পুলিশ গত সাত মাসে ১৩৬টি মামলায় ১১৬জন, মাদকের ২৬টি মামলায় ৩৮ জনসহ আরো ৩২৫ জনের গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করেছে বলে জানা গেছে। ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত আসামী আব্দুর রাজ্জাককে হাতকড়ার পরিবর্তে ফুলের তোড়া দিয়ে ভরণ করে নেওয়া আলোচিত হয়েছেন ঝিনাইগাতী থানা পুলিশ। মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান ঝিনাইগাতী থানায় ২০২০সালের ৪ অক্টোবরে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগদান করেন। এর আগে তিনি ময়মনসিংহ পাগলা থানায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
শেরপুর জেলার একটি সীমান্তবর্তী ও গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত উপজেলা হলো ঝিনাইগাতী। এখানে গারো, হাজং, কোচ, বানাই, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জাতের মানুষের বসবাস এখানে। জেলার বড় পর্যটন কেন্দ্র গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি হলো ঝিনাইগাতীতে। শীতের মৌসুমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে এখানে হাজার হাজার দর্শনার্থী। এক সময় সেখানে অপরাধের অভরায়ন্য ছিল। মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান ঝিনাইগাতী থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে যোগদানের পর কিছুটা আইনশৃঙ্খলার প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন হয়। তিনি যোগদানের পরপরই অপরাধের কারনগুলো খুঁজে বের করার চেস্টা করেন। কোন পথে মাদক আসে এবং কে কে জড়িত আগে এসব সনাক্ত করেন। তারপর শুরু করেন নিজের মত করে অভিযান। এসব অভিযানে তিনি সফলতাও অর্জন করেছেন। শুরু হয় মাদক, জুয়া, বাল্যবিবাহ, নারী ও শিশু নির্যাতনের উপরে শুদ্ধি অভিযান। আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে মাদক মামলায় ৬ মাসের সাঁজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামী আব্দুর রাজ্জাককে স্বেচ্ছায় থানায় আত্মসমর্পন করতে আগ্রহী করায় এবং হাতকড়ার পরিবর্তে তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করায় তিনি জেলা পুলিশের মুখ উজ্জল করেছেন।
ঝিনাইগাতী থানার তথ্যমতে, অক্টোবর/২০ থেকে এপ্রিল/২১ পর্যন্ত ২৬টি মাদক মামলায় ৩৮ জনকে গ্রেফতার করেছেন। উদ্ধার করেছেন ১ হাজার ৮২০ গ্রাম গাঁজা, ৩৩৭ পিস ইয়াবা, চোলাই মদ ২৯ লিটার ও ২৭.০২ গ্রাম হেরোইন। গ্রেফতারী পরোয়ানাভুক্ত ৪৭৯ জনের মধ্যে জিআর মামলায় ১২১ জন, সিআর মামলায় ১৬০ জন ও সাঁজায় আরো ৪৪ জনের গ্রেফতারী পরোয়ানা তামিল করেছেন। তামিলের অপেক্ষায় আছে ১৬৪ জনের বিরোদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা। অক্টোবর মাসে মাসে ২৩ টি মামলায় ১৬ জন, নভেম্বরে ১৬ মামলায় ১৬ জন, ডিসেম্বরে ২১ মামলায় ১৪ জন, জানুয়ারীতে ২৮ মামলায় ২৮ জন, ফেব্রুয়ারীতে ১৬ মামলায় ১৪ জন, মার্চে ১৬ মামলায় ১৯ জন, ও এপ্রিল মাসে ১৭ মামলায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ঝিনাইগাতী থানা পুলিশ।
ঝিনাইগাতী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান বলেন, ৬ মাসের সাজাপ্রাপ্ত আসামী আব্দুর রাজ্জাক। পরে পরিবারের মাধ্যমে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে ওই আসামীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন থানার ওসি। এক পর্যায়ে ওই আসামীকে পালিয়ে না থেকে আত্মসমর্পণের পরামর্শ দেন এবং তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন ওসি। অবশেষে ওসির কথায় আশ্বস্ত হয়ে গত ২৫ এপ্রিল রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে থানায় উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন আব্দুর রাজ্জাক। স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করায় তাকে হাতকড়া না পড়িয়ে তার হাতে ফুল তুলে দেওয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী স্যারের নির্দেশক্রমে ও পরামর্শে থানার সকল অফিসার ও ফোর্সদের সাথে নিয়ে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় প্রত্যোকটা অভিযান সফলভাবে করতে পেরেছি। এ ক্ষেত্রে ঝিনাইগাতীর রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, গ্রাম পুলিশসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা সহযোগিতা করেছেন।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী পুলিশী সেবা জনগনের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দিতে বদ্ধপরিকর। পুলিশ হবে জনতার ও জনবান্ধব। আমরা কি পেলাম এটা আমাদের কাছে বড় বিষয় নয়, আমরা জনগনকে কি সেবা দিতে পেরেছি সেটাই আমাদের কাছে বড় বিষয়। সেই সাথে তিনি ঝিনাইগাতী উপজেলাবাসীর সহযোগিতা চাইলেন।