চলতি বোরো মৌসুমে সরকারিভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ সফল করতে ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা দিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ মে) খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, চলতি বোরো ২০২১ সংগ্রহ মৌসুমে ইতোমধ্যে ৬ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করে উপজেলাওয়ারি বিভাজন করে মাঠ পর্যায়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বোরো ২০২১ ধান ও চাল সংগ্রহ সফল করার জন্য নিম্নোক্ত নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে-
১. ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে অবিলম্বে জেলা/উপজেলা সংগ্রহ ও মনিটরিং কমিটির সভা সম্পন্ন করতে হবে। কৃষকের অ্যাপের বাইরে উপজেলাসমূহে লটারি করে ধান সংগ্রহ দ্রুত শুরু ও শেষ করতে হবে। কৃষকের অ্যাপভুক্ত উপজেলাসমূহে রেজিস্ট্রেশন দ্রুত সম্পন্ন করে সিস্টেমে লটারি করে কৃষক নির্বাচনপূর্বক দ্রুত ধান সংগ্রহ করতে হবে। তবে যেহেতু দ্রুততার সঙ্গে সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে সেহেতু যথাসময়ে কৃষকের তালিকা পাওয়া না গেলে এবং কৃষকের অ্যাপে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক আবেদন পাওয়া না গেলে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করতে হবে। এ বিষয়ে গত ৩ মে ও ৪ মে সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
২. ধান সংগ্রহের বিষয়টি মাইকিং, লিফলেট বিতরণ, স্থানীয় কেবল টিভি স্ক্রলে প্রদর্শন প্রভৃতি উপায়ে বহুল প্রচারণার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩. যেহেতু চলমান চাল সংগ্রহ মৌসুমে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা অপেক্ষা বরাদ্দ কম তাই চাল সংগ্রহ ৩০ জুনের মধ্যে ৭৫ শতাংশ, জুলাইয়ের মধ্যে বাকি ১৫ শতাংশ এবং আগস্টের মধ্যে বাকি ১০ শতাংশ সম্পন্ন করার জন্য (তারিখ, পরিমাণ, সময়ভিত্তিক সিডিউল প্রস্তুতপূর্বক) জেলা, উপজেলা ও গুদামভিত্তিক রোডম্যাপ তৈরি ও সেই অনুসারে সংগ্রহ সম্পন্ন করতে হবে।
৪. সংগৃহীত প্রতিটি চালের বস্তায় সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী স্টেনসিল প্রদান নিশ্চিত করতে হবে।
৫. ৯ মে’র মধ্যে চাল সংগ্রহের জন্য মিলারদের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে। চুক্তির মেয়াদ কোনোক্রমে বাড়ানো হবে না। চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে মিলারদের অনুকূলে বরাদ্দপত্র ইস্যু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুলিপি দিয়ে অবহিত করতে হবে।
৬. যুগপৎভাবে ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম বাস্তবায়ন ও ত্বরান্বিত করতে হবে।
৭. বিনির্দেশসম্মত ধান ও চাল সংগ্রহের জন্য ‘অভ্যন্তরীণ খাদ্যশস্য সংগ্রহ নীতিমালা, ২০১৭’ অনুসারে ২০২১ সালে উৎপাদিত বোরো ধান-চাল সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে। ব্যত্যয়ে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
৮. খাদ্য গুদামসমূহে কৃষকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষক যেন কোনোক্রমেই হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
৯. গুদামে স্থান সংকুলান না হলে ‘চলাচল সূচি প্রণয়ন নীতিমালা, ২০০৮’ অনুসারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে বিধি মোতাবেক স্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে চলাচল সূচি জারি করবেন।
১০. ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নিবিড় মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে।
১১. প্রতিদিন বিকেল ৫টার মধ্যে সব আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দফতর থেকে ধান-চাল সংগ্রহের তথ্য ও দৈনিক বাজারদর ই-মেইলে খাদ্য অধিদফতরের সংগ্রহ বিভাগে পাঠাতে হবে।
১২. কোনো প্রকার আনুষ্ঠানিকতার সুবাদে যাতে কোনোক্রমেই সংগ্রহ কার্যক্রম বিলম্বিত না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেষ্ট থাকতে হবে।
১৩. বিদ্যমান করোনা (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
নির্দেশনার পরিপত্রটি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সকল বিভাগীয় কমিশনার, খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, সকল জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।
খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মোট ১৮ লাখ টন ধান ও চাল কিনবে সরকার। এর মধ্যে মিলারদের কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে ১০ লাখ টন সিদ্ধ চাল, ৩৯ টাকা কেজি দরে দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং কৃষকদের কাছ থেকে ২৭ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৬ লাখ টন ধান কেনা হবে।
গত ২৮ এপ্রিল থেকে ধান কেনা শুরু হয়েছে। শুক্রবার (৭ মে) থেকে শুরু হয়েছে চাল সংগ্রহ। বোরো ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।