চট্টগ্রামে বহুল আলোচিত মিতু হত্যা মামলা নতুন মোড় নিয়েছেন। মামলার বাদীয় হয়ে যাচ্ছেন আসামি। মিতুর স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে মামলা করতে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় গেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় তিনি থানায় যান।
মামলায় বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করা হবে বলে জানা গেছে। মিতুর বাবা মোশাররফ বিষয়টি জানিয়েছেন।
পাঁচ বছর আগে চট্টগ্রামে স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যায় বাদী ছিলেন স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এ ঘটনায় বাবুলের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে পিবিআই। তাই বাবুলকে প্রধান আসামি করে মামলা হবে।
পিবিআই চট্টগ্রাম (মেট্রো) সূত্রে জানা গেছে, বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে দায়ের হতে চলা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে তোলা হবে তাকে।
বুধবার সকালে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, যে কারণে বাবুল আক্তার চট্টগ্রামে সেই একই কারণে আমিও চট্টগ্রামে। তবে আমার মেয়ে খুনে বাবুল আক্তার যে জড়িত সেটা আগেই আমি উত্থাপন করেছিলাম। একটু অপেক্ষা করুন ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, পিবিআই-এর ডাকে আমি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে এসেছি। পিবিআই আমাকে জানিয়েছে আগের মামলার আজ চূড়ান্ত চার্জশিট হবার কথা। এরপর বাবুলের বিরুদ্ধে নতুন একটি মামলা হবে। মিতু হত্যা মামলা। সেই মামলায় বাবুল আক্তারকে নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করার কথা রয়েছে। মামলার বাদী পিবিআইও হতে পারে, হতে পারি আমিও। কোনো কারণে আমি বাদী হতে না পারলে পিবিআই বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করবে।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন বাবুল আকতারের স্ত্রী মিতু। পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দফতরে যোগ দিয়ে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল।
তার আগে তিনি চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসির দায়িত্বে ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন বাবুল আকতার নিজেই।
ওই বছরের ২৪ জুন ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে বাবুল আকতারকে প্রায় ১৬ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ওই বাসায় পৌঁছে দেয়।
পরে পুলিশ জানায়, বাবুল চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তবে বাবুল দাবি করেন, তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি। পদত্যাগ প্রত্যাহারের জন্য তিনি ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে আবেদন করেন।
নানা গুঞ্জনের মধ্যে ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বাবুল আকতারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মিতু হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল আকতারের জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ হয়ে জঙ্গিরা স্ত্রীর ওপর আঘাত হানতে পারেন বলে মামলায় তিনি দাবি করেন। তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রামের পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকতারাও একই সন্দেহ প্রকাশ করেন।
তবে এর অল্প কিছুদিন পর পরিস্থিতি দ্রুত পালটাতে থাকে। তদন্তে নেমে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ ঘটনায় কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুসাসহ চট্টগ্রামের একটি বড় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের জড়িত থাকার তথ্য পায়।