ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান হামলা গড়িয়েছে টানা দশম দিনে। বুধবার (১৯ মে) রাতেও ভূখণ্ডটিতে হামলা অব্যাহত রাখে দেশটি। টানা এই হামলায় বুধবার আরও ৯ জন নিহত হয়েছেন। এতে করে গত দশদিনে ইহুদি এই দেশটির হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২২৭ জনে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৬৪ জন শিশু এবং ৩৮ জন নারী রয়েছেন।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, এমন সহিংসতা নিয়ে চতুর্থবারের মতো বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি হামলা কমানোর বিষয়ে কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে তিনি যুদ্ধবিরতির বিষয়েও কথা বলেছেন। এমনটিই জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। এএফপির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
এদিকে, গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতা নিয়ে যুদ্ধবিরতির কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হলেও খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে তিনবার বৈঠকে বসে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার কারণে এখন পর্যন্ত হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে কোনো বিবৃতি নিরাপত্তা পরিষদ দিতে পারেনি।
বুধবার রয়টার্স জানিয়েছে, হামলার মাধ্যমে গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪০০ ভবন গুড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই ভবনগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রও রয়েছে।
এছাড়া সংঘাতে এখন পর্যন্ত গাজার কমপক্ষে অর্ধলক্ষ ফিলিস্তিনি ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। ইসরায়েলের বিমান হামলা ও কামানের গোলার আঘাত থেকে বাঁচতে নারী-শিশুসহ অসংখ্য বেসামরিক মানুষ জাতিসংঘ পরিচালিত ৫৮ টি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।
অবরুদ্ধ গাজার উত্তরাঞ্চলে বৃহস্পতিবার ভোরেই ১০০ দফার বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গাজার শাসক দল হামাসের স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয় বলে দাবি তেল আবিবের।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতায় নিজ যোদ্ধাদের হতাহতের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি হামাস। তবে পাল্টা জবাবে ইসরায়েলের দিকেও রকেট ছুড়েছে ফিলিস্তিনি বিদ্রোহীরা।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় চার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে গাজা থেকে।
এ কদিনের সহিংসতায় ২ শিশুসহ ১২ ইসরায়েলি নিহত হয়েছে।
মুসলমান ও ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র ভূমি খ্যাত অবরুদ্ধ পূর্ব জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে সংঘর্ষের ঘটনাকে ঘিরে কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছিল উত্তেজনা। এর জেরেই শুরু হয় সহিংসতা।
আল-আকসা থেকে সরে যাওয়ার জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে ইসরায়েলে রকেট ছোড়ে হামাস। পাল্টা জবাবে ১০ মে থেকে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
২০১৪ সালের পর অবরুদ্ধ অঞ্চলটিতে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলায় এ পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি হারিয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। সূত্র: আলজাজিরা