‘গুপ্তচরবৃত্তি’ ও ‘রাষ্ট্রীয় গোপন নথি নিজের দখলে রাখার’ অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে জামিন দিয়েছেন আদালত। তবে এ জামিন আদেশ আসার আগে পাঁচদিন তাকে কারাগারে কাটাতে হয়েছে।
দেশ-বিদেশে আলোচনার জন্ম দেওয়া এই মামলায় ভার্চুয়ালি শুনানি নিয়ে রোববার রোজিনা ইসলামের জামিনের আদেশ দিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকি বিল্লাহ। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) পুলিশের উপ-পরিদর্শক নিজাম উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ৫ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিনের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
গত সোমবার (১৭ মে) পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় তাকে আটকে রেখে হেনস্তা করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত ৯টার দিকে তাকে সচিবালয় থেকে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। ওই রাতেই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। পরদিন সকালে তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে তোলা হয়। আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
সোমবার রোজিনার সঙ্গে গণমাধ্যমকর্মীরা কথা বলতে না পারলেও মঙ্গলবার আদালত থেকে বের হওয়ার সময় রোজিনা ইসলাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে অন্যায় হয়েছে, আমার সঙ্গে অন্যায় হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে রিপোর্ট করায় আমার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে।’
রোজিনা ইসলামকে থানায় নিয়ে যাওয়া হলে সেই ১৭ মে রাতেই বিক্ষোভ করতে শুরু করেন সাংবাদিকরা। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখেও পড়তে হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে। রোজিনা ইসলামের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ওই ঘটনা অনভিপ্রেত, দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত বলে মত দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ। রোজিনা ইসলাম ন্যায়বিচার পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছিলেন, ওই সাংবাদিক (রোজিনা ইসলাম) টিকা আমদানি সংক্রান্ত এমন কিছু নথি সরিয়েছিলেন, যেগুলো প্রকাশ হলে দেশের ক্ষতি হতে পারত।
রোজিনা ইসলামেকে গ্রেফতারের পরদিন ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকরা তা বর্জন করেন।
আরও পড়ুন : নথিতে এত গোপন কী ছিল?
রোজিনা ইসলামকে যে মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে অর্থাৎ অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টটি প্রায় ১০০ বছরের পুরোনো একটি আইন।
এদিকে ১৭ মে রোজিনা ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওযার পর রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে যেখানে দেখা যায়- এক নারী তার গলা চেপে ধরেছেন।
রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা, তাকে গ্রেফতার ও তার জামিন হবে কি হবে না, সেটাই গত কয়েকদিন বাংলাদেশের সাংবাদিকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।