সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেইফ হোম সরকারি শিশু পরিবারের ডালিয়া গ্রুপের সদস্য সোমা (১৯) গত আটদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। ১৬ মে রবিবার দিন দুপুর থেকে সোমা নিখোঁজ রয়েছে। সরকারের নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা সোমা নিখোঁজ হলেও এ বিষয়ে অবগত নন অধিদপ্তরের অধিকাংশ দায়িত্বশীল কর্মকতা।
জানা যায়, ১৬ মে দিন দুপুর থেকে সোমা নিখোঁজ রয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ঝর্ণা জাহিন ঐ দিন তেজাগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করেন। সাধারণ ডাইরি নং ৭৩২/১৬/০৫/২০২১ইং। ডাইরিতে উল্লেখ করা হয়েছে ঘটনার দিন থেকে সোমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই অনেক খোঁজা খুঁজির পর এ সাধারণ ডাইরি করা হলো।
এ জিডি তদন্ত কর্মকর্তা তেজগাঁও থানার এসআই শহীদুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে এ মুহূর্তপ র্যন্ত তাদের হাতে কোন আপডেট নেই। তবে শিশু পরিবারের উপ তত্বাবধায়ক ঝর্ণা জাহিন তাকে ঘটনার দুদিন পরে ফোন করে জানিয়েছেন মেয়েটির সন্ধান পাওয়া গেছে। সে হোমে ফিরে এসেছে। এ কারণে এ নিয়ে তেমন কোন তদন্ত তারা করেনি। মেয়েটি হোমে আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারি কর্মকর্তা বলেন, এটা তার জানা নেই। তবে তিনি এখন খবর নিবেন।
এদিকে শিশু পরিবারের পরিচালক প্রতিষ্ঠান (উপ-সচিব) মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, এ বিষয়টি তার জানা ছিল না। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক এর কাছ থেকে জানতে পারেন। তিনি অল্প দিন হলো এখানে এসেছেন। থানায় জিডি হয়েছে তার কপি পেয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার জানার পরে রবিবার লিখিত কাগজ পেয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের উপ তত্বাবধায়ক ঝর্ণা জাহিন বলেন, আমি জিডি করেছি। দুটি প্রোগ্রাম থাকায় ২০ মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেননি। সোমা নিখোঁজের দিনে যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা হয়েছে কিনা সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুটি অনুষ্ঠান থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে নোটিশ করা হয়েছে। সরকারি শিশু পরিবার থেকে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে নিখোঁজ রয়েছে তাকে খুঁজে পাওয়ার চেয়ে অনুষ্ঠান জরুরি ছিল কিনা এমন প্রশ্নের তিনি কোন জবাব না দিয়ে বলেন, সোমাকে খুঁজে পাওয়া গেছে। সে আমাদের নিয়ন্ত্রণেই রযেছে। সোমা এখন কোথায় আছে তাকে এ মুহুর্তে গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি চুপ হয়ে যান। তিনি কথা বলার বদলে বারবার তার অফিসে এসে কথা বলার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ জানান। সোববার দিন মোবাইলে জানান সোমার সাথে একটি ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল, এখান থেকে পালিয়ে যাবার পরে তারা বিয়ে করেছেন। সোমা দ্রুত আসবেন বলে তিনি দাবি করেন।
উল্লেখ্য ঝর্ণা জাহিন গত প্রায় ১৩ বছর ধরে সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) তেজগাঁও রয়েছেন। এভাবে গাজীপুর শিশু পরিবার (বালক) ডেপুটি সুপার ২০০৫ সাল থেকে আছেন, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র (বালক) টঙ্গী ২০১৩/১৪ থেকে আছে, শিশু পরিবার (বালক) মিরপুর ২০১৫ সাল থেকে আছেন। দীর্ঘদিন ধরে একই স্থানে থাকার কারণে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে কারণ তারা নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন। সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) তেজগাঁও সেইফ হোমের মেয়েদের দিয়ে অসমাজিক কাজ করানোর মতো জঘন্য অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে উপ-পরিচালকের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ হচ্ছে তিনি এখানে একটি নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন, সেইফ হোমে নিম্নমানের খাবার দেয়া, টেন্ডারের কাজে প্রভাব বিস্তার করা সহ নানা অভিযোগ। গত পাঁচ বছরে সেইফ হোম ঘিরে অধিকাংশ কাজ করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। তাদের অনেকের দ্বারা সেইফ হোমের অনেক মেয়ে নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে ২০১৮ সালে একই সেইফ হোমে উর্মি নামের ১০ বছরের একটি মেয়ে ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সেইফ হোমের রাধুনির কাজে নিয়োজিত স্বামী কর্তৃক এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষনকারী ঝর্ণা জাহিনের গ্রুপের লোক হওয়ায় জঘন্যতম এই ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়া হয়।