1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৫ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ উপকূলে জলোচ্ছ্বাস আতংক, জোয়ারে অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১

বরিশালের কুয়াকাটায় প্রবল বাতাসে সাগর ভয়ংকর রূপ ধারন করেছে বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটা তরুণ ক্লাবের সভাপতি ইব্রাহিম ওয়াহিদ। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’র প্রভাবে মঙ্গলবার সকাল থেকে দমকা বাতাস ও বৃষ্টির সঙ্গে সাগরের পানি বেড়েছে ২-৩ ফুট। জলোচ্ছ্বাস আতংকে সৈকতে থাকা দোকানপাট সরিয়ে নিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
এদিকে সকালের জোয়ারে সৈকতের অর্ধশতাধিক ঝিনুক, শুটকি ও খাবারের দোকান, সৈকতের ট্যুরিস্ট পুলিশ ক্যাম্প ও পৌরসভার পাবলিক টয়লেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হোসেন হাওলাদার।
কুয়াকাটা সংলগ্ন কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন বিশ্বাস বলেন, মঙ্গলবার সাগরঘেষা চারিপাড়া-নাওয়াপাড়া এলাকার ভাঙ্গা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে লালুয়া, পসরবুনিয়া, চারিপাড়া, নাওয়াপাড়াসহ ১১ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৮-১০ হাজার মানুষ।
পার্শ্ববর্তী চম্পাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রিন্টু তালুকদার জানান, দেবপুর পয়েন্টে ৩০ মিটার বাঁধ ভেঙে দুই গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে।
ধুলাসার ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল আকন জানান, বেড়িবাঁধ না থাকায় তার ইউনিয়নের গঙ্গামতি সৈকতসহ, চরগঙ্গামতি, কাউয়ার চর ও চর ধুলাসার গ্রামের শতাধিক বসতঘর ও অর্ধশত মাছের ঘের ডুবে গেছে।
কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, লালুয়ার চাড়িপাড়া বেড়িবাঁধটি ২০১০ সালের পর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার অংশ ভাঙা। এছাড়া দেবপুর বেড়িবাঁধটির দেড় কিলোমিটার জুরে ভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশফাকুর রহমান জানিয়েছেন, চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরআন্ডা ও বাইলাবুনিয়া এবং বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের ৭-৮টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানি ঢুকেছে গলাচিপা পৌর শহরেও।
পৌর মেয়র আহসানুল হক তুহিন জানান, পৌর শহরের এক নম্বর ওয়ার্ড ও আড়তদারপট্টি, কলাতলা এবং বঙ্গবন্ধু উপশহর প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে বিষখালী-বলেশ্বর তীরবর্তী বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা-রুহিতা এলাকার ভাঙা বাঁধ দিয়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢুকে কোড়ালিয়া, হাজিরখাল, বড়টেংরা, চরলাঠিমারা, বাদুরতলা, হরিণঘাটা, জিনতলাসহ ৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান সমকালকে বলেন, গ্রামগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় রবিশষ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া বাঁধের বাইরের জেলে পল্লীর বাসিন্দারা বসতঘর ছেড়ে বাঁধের ওপর ঝুপড়ি ঘর তুলে আশ্রয় নিয়েছেন।
বলেশ্বর তীরবর্তী পদ্মা এলাকার বাঁধের বাইরের বাসিন্দা জেলে রূহুল আমিন ও সুফিয়া দম্পতি বলেন, ‘জোয়ারে ঘর ডুইব্যা গ্যাছে, মোগো মাইয়া-পোলা নানাবাড়ি পাডাইয়া দিছি। ধাপার (ঝড়) যেভাবে শুরু হইছে হেতে এহন রাইতের জোয়ারের ডরে আছি’।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম সরকার মঙ্গলবার দুপুরে সমকালকে বলেন, জোয়ার ও বাতাসের তোরে সাগরের পানি ২-৩ ফুট বেড়েছে। তবে ভোলা সংলগ্ন মেঘনা, তেতুলিয়া এবং বরিশাল নগর সংলগ্ন কীর্তণখোলা নদীর পানি বাড়লেও এখন পর্যন্ত বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। কিন্ত বরগুনা সংলগ্ন বিষখালী-বলেশ্বর নদের পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতের জোয়ারে পানি আরও বাড়তে পারে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কাইছার আলম বলেন, বিষখালী-বলেশ্বরের পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বরগুনা জেলার ৬৬টি পয়েন্টে ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুকিপূর্ণ। এগুলোর অধিকাংশ পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলায়। এছাড়া পাথরঘাটার পদ্মা-রুহিতা এলাকার ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে কিছু গ্রাম প্লাবিত হওয়ার কথা তিনি শুনেছেন।
পাথরঘাটা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিশির কুমার বড়াল বলেছেন, জোয়ারের পানি ঢুকে উপজেলার ৮ গ্রামে ১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমির মুগডাল, মরিচ, মিষ্টি আলু ও সূর্যমুখী ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতের জোয়ারে রবিশষ্যের আরও ক্ষতি হতে পারে।
বরিশাল নগরী সংলগ্ন কীর্তণখোলা নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী বৃদ্ধি পাওয়ায় নগরীর পূবাংশ পলাশপুর, রসুলপুর, কলাপট্রি, চরআবদানী, সাগরদী এলাকার ধানগবেষনা সড়ক এলাকায় পানি উঠেছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাহফুজুর রহমান মঙ্গলবার বিকালে জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াসে’র প্রভাবে তাপমাত্রা কমেছে। মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ০৩ ডিগ্রি। বাতাসের গতিবেগ ছিল ২০ নটিকেল মাইল। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ দশমিক ০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল জানিয়েছেন, বিভাগের ৬ জেলায় ৪ হাজার ৯২০টি সরকারি-বেসরকারি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে ১৬ লাখ ৪২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে জানমাল-প্রাণীসম্পদ রক্ষা করতে বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলার জেলা প্রশাসকদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি