প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা উচিত। এটি সরকারের অন্য দফতরে গেলে জটিলতা তৈরি হবে বলে তিনি আশঙ্কার কথা জানান। এর ফলে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন সিইসি।
রোববার (৩০ মে) নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন।
কমিশনের সঙ্গে সরকার এ বিষয়ে কোনো আলোচনা করেনি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘সরকারের এই বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে কমিশন বা কমিশন সচিবালয়ের সচিবের সাথে আগে কখনো আলোচনা করা হয়নি। এ বিষয়ে আমাদের থেকে কোনো পরামর্শ নেয়া হয়নি। বিষয়টি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে মাত্র। এটি একটি জটিল কাজ। চিঠি দিলেই এটি হয়ে যাবে তা সম্ভব নয়। এর সাথে অবকাঠামো, জনবলসহ অনেক কিছুই জড়িত রয়েছে।’
এনআইডি নির্বাচন কমিশনের একটি প্রোডাক্ট উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকা উচিত। নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা তৈরি করার ভিত্তিতেই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছে। ভোটার তালিকার বাই-প্রডাক্ট হিসেবে এনআইডি হয়েছে। অন্য কোনো বিভাগ বা ডিপার্টমেন্ট এনআইডি করেনি। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তৈরির উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন কাজ করেছিল। সেটি করতে গিয়ে বাই-প্রডাক্ট হিসেবে এটি এসেছে। কাজেই জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আমাদের আলাদা কোনো এফোর্ড দিতে হয়নি। কেবল একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। ডাটাবেজের মাধ্যমেই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা হয়।’
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘আমাদের যুক্তি হচ্ছে, কমিশনের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। আমাদের মাধ্যমেই সবাই সার্ভিস পাচ্ছে। তারপরও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বা চিন্তা-ভাবনা কী আছে.. মন্ত্রিপরিষদ সচিব বা সরকারের অন্যান্য পর্যায়ে বিষয়টি বুঝানোর চেষ্টা করা হবে।’
এনআইডি সরকারের অন্য দফতরে গেলে আইনগত জটিলতা হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আইনগত কোনো জটিলতা হলে সরকার আইন প্রণয়ন করে তার সমাধান করতে পারবে। বর্তমান আইনি জটিলতা থাকলে তা রিমুভ করে নতুন আইন তৈরি করতে পারবে সরকার।’
ভোটার তালিকা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র আলাদা হলে তা সাংঘর্ষিক হতে পারে বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান সিইসি। তিনি বলেন, ‘যেখানে ভোটার তালিকা তৈরি করব আমরা। আর এনআইডি থাকবে অন্য বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ের হাতে। এটা হলে নির্বাচন কমিশন সরকারের অন্য কোনো দফতরের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে চলে যায়। এটা সংবিধান গ্রহণ করে না। কারণ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন আলাদা থাকবে অন্য কোনো দফতরের অধীনে তারা থাকবে না।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার কারণে এনআইডি সেবা সরকার অন্য দফতরে নিচ্ছে বিষয়টি তা নয়। সরকারের যুক্তি দেশের জন্ম-মৃত্যুর তথ্যভাণ্ডার নির্বাচন কমিশনের কাছে থাকে না।’
ভাবনা-চিন্তা করে যেটা ভালো হবে সেটাই সরকার করবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এনআইডি অন্য বিভাগের কাছে গেলে জটিল হবে।’
সরকার যখন চিঠি দিয়েছে তখন নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে তারা একই সাথে আলোচনা করবে বলেও মনে করেন সিইসি।
এর আগে জাতীয় পরিচয়পত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে যাওয়ার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে সিইসির কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি সেবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠির প্রসঙ্গ টেনে সিইসি বলেন, ‘ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার সাথে একটা উৎকণ্ঠা নিয়ে দেখা করেছেন। চিঠির বিষয়টি নিয়ে কমিশন সভায় আমরা আগেই আলোচনা করেছি। আমরা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুবিভাগের মহাপরিচালকে দায়িত্ব দিয়েছি। পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করার। জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কমিশনের যুক্তিগুলো ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হবে। কর্মকর্তা কর্মচারীদেরও এ বিষয়ে তাদের যুক্তি তুলে ধরতে বলেছি। কমিশন সচিব সেই প্রতিবেদন কেবিনেট সচিবকে প্রদান করবেন। কেবিনেট ডিভিশনকে চিঠি দেয়া হলে আমাদের অবস্থানটা জানানো হবে।’