বগুড়ার এক কলেজছাত্রীকে হত্যার পর তার মরদেহ গুমের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই কলেজছাত্রীর স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পরে ওই কলেজ ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধারে মঙ্গলবার (১ জুন) দিনভর গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহরগ্রামে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে এ অব্দি ওই কলেজছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা না গেলেও একটি সেফটি ট্যাংকের ভেতর থেকে শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়াসহ দু’টি নক এবং পরিধেয় ওড়না উদ্ধার করা হয়েছে।
জানা গেছে, গ্রেফতার সাকিব হোসেন হাওলাদার (২৪) বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার নতুনচর জাহাপুর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিমের ছেলে। তিনি বগুড়া জাহাঙ্গীরাবাদ সেনানিবাসের পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তবে সাকিবের বাবা আব্দুল করিমের পরিবার কাজের জন্য গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর বন্দর সংলগ্ন হরহর গ্রামে বসবাস করেন।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্রধরে গত এক বছর আগে বগুড়া সদর উপজেলার সাপগ্রাম এলাকার আব্দুল লতিফ প্রমাণিকের মেয়ে ও বগুড়ার গাবতলী সৈয়দ আহম্মেদ কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী নাজনীন আক্তার (১৯) সঙ্গে বিয়ে হয় সাকিব হাওলাদারের।
নাজনীন আক্তারের ভাই আব্দুল আহাদ প্রমাণিক জানান, গত ২৪ মে সাকিব তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে নাজনীনকে নিয়ে বরিশালে আসেন। পরে তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ ও কোন ধরনের যোগাযোগ না থাকায় ২৬ মে বগুড়া সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি ও সেনানিবাসে অভিযোগ দায়ের করা হয়।
সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা বাংলানিউজকে জানান, নাজনীন নিখোঁজের বিষয়ে জানতে সোমবার বিকেলে সাকিব হোসেনকে জিজ্ঞাসবাদ করা হয়। এসময় সাকিব অসংলগ্ন কথাবার্তা বললে সন্দেহ হয়। পরে তাকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে নাজনীনকে গৌরনদীর হরহর গ্রামের বাবার ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে এসে হত্যা করে সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে মরদেহ গুমের বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন।
সাকিবের বরাত দিয়ে পুলিশ ও কলেজছাত্রীর স্বজনরা জানান, নিজেকে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান পরিচয় দিয়ে নাজনীনকে বিয়ে করে সাকিব। ২৪ মে নাজনীনকে নিয়ে বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামে বাবার ভাড়া বাসায় আসেন। সেখানে এসে নাজনীন জানতে পারে তার বাবা আব্দুল করিম পেশায় ভ্যানচালক। আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। এসময় সাকিবের কাছে নাজনীন পারিবারিক অবস্থার কথা গোপন করার কারণ জানতে চান। এ কারণে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রাগে নাজনীন সাকিবকে ভিক্ষুকের ছেলে বলে গালিগালাজ করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নাজনীনের গলায় রশি দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে ও বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সাকিব। পরে ঘরের পেছনে থাকা সেপটিক ট্যাংকে নাজনীনের মরদেহ গুম করে ফের বগুড়ায় কর্মস্থলে যোগ দেয়।
সাকিব জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয়ের একপর্যায়ে গত বছর ৩০ সেপ্টেম্বর সাকিব হোসেন ভূয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কলেজছাত্রী নাজনীনকে বিয়ে করেন। আর তাকে হত্যার ঘটনার সময় তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না, তারা নানা বাড়িতে ছিলেন। মূলত তার স্ত্রী বাড়িতে এসে তাদের টিনের ঘর থেকে ক্ষেপে যায় এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাড়ির পাশের সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ ফেলে দেন।
এ বিষেয়ে গৌরনদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. তৌহিদুজ্জামান জানান, সাধারণ ডায়েরি ও অভিযোগের সুত্রধরে পুলিশ সাকিব হোসেন হাওলাদারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তখন সে তার স্ত্রী নাজনীন আক্তারকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের হরহর গ্রামের ভাড়াটিয়া বাসায় নিয়ে হত্যার পর মরদেহ গুমের বিষয়টি স্বীকার করে। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গৌরনদী মডেল থানা পুলিশের সহায়তায় বগুড়া পুলিশ সেপটিক ট্যাংকে পাম্প দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে। ট্যাংকের মধ্যে নাজনীনের শরীরের বিভিন্ন অংশের চামড়াসহ দু’টি নক এবং পরিধেয় ওড়না পাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, সাকিবের বাবা-মা পলাতক রয়েছে। এছাড়াও মরদেহ উদ্ধারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে। গৌরনদী থানার ওসি মো. আফজাল হোসেন জানান, এই কয়েক দিনে একটি লাশ পঁচে গলে যেতে পারে না। গলে গেলেও কঙ্কাল থাকার কথা। সাকিবের দেখিয়ে দেওয়া সেপটিক ট্যাংকে কিছুই পাওয়া যায়নি। মরদেহ উদ্ধারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন বরিশালের পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন।