কয়রার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামতে স্বেচ্ছাশ্রমে কয়েক হাজার মানুষ কাজ করছিল। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে একটি ট্রলার নিয়ে খুলনা-৬ আসনের (পাইকগাছা-কয়রা) সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান উপস্থিত হলে তাঁকে দেখে লোকজন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা কাদা ছুড়ে মারতে থাকে ট্রলারের দিকে। প্রায় ১০ মিনিট বৃষ্টির মতো কাদা ছোড়ার এক পর্যায়ে ট্রলারটি পিছু হটে নদীর অন্য পারে চলে যায়। প্রায় আধাঘণ্টা পর তিনি আবার ওই ভাঙা বাঁধের কাছে যান।
গতকাল মঙ্গলবার এই ঘটনা ঘটে। ওই সময় কয়রা থানার ওসিসহ আরো কয়েকজন সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে ছিলেন।পিছু হটার প্রায় আধাঘণ্টা পরে স্থানীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত করে সংসদ সদস্য আবারও সেখানে যান। সংসদ সদস্য তাঁর বক্তব্যে স্থায়ী বাঁধ না করতে পারায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেন। তিনি জনতার সঙ্গে কাজও করেন।
ওই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এমপি মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমি সকালে এলাকায় গিয়েছিলাম। সেখানে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। জনগণের দুঃখ-দুর্দশা দেখতে গিয়েছিলাম। ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে তা ঠিক না। আমাকে কি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে আমাকে কাদা মারা হচ্ছে?’
তিনি বলেন, ‘এ এলাকায় নিয়মিত বাঁধ ভাঙে, হাজারো মানুষের কষ্ট হয়। এলাকায় যাওয়ার পর মানুষ আমাকে বলে যে আপনার মতো ডায়নামিক লোক থাকতে কেন এখানে টেকসই বাধ হচ্ছে না। আমি বলেছি এ জন্য সময় দিতে হবে।’
ভিডিওতে দেখা যায়, কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় শতাধিক মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করছিলেন। উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় এমপি পৌঁছালে বিক্ষুব্ধ বাসিন্দারা এমপির ট্রলার লক্ষ্য করে কাদা ও মাটির দলা ছুড়তে শুরু করেন।
কাদা ছোড়ার পর ট্রলার ঘুরিয়ে চলে যাওয়া প্রসঙ্গে এম বলেন, ‘আমি ট্রলার থেকে না নামলে বক্তৃতা দিলাম কীভাবে? তাদের সঙ্গে আমি খাওয়া দাওয়া করেছি। সেখানে ৫-৭ হাজার মানুষ ছিল। উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অনেকেই সেখানে ছিল। কাদা ছোঁড়াছুড়ির কিছু হয়নি।’
এমপি আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আসলে এলাকার লোকজন কাদা মেখে ছিল। কারণ ওই এলাকায় কাদা ছাড়া আর কিছু নেই। চারিদিকে শুধু পেরি কাদা। তারা চেয়েছিল আমি কাদা মাখি। এতে তারা খুশি হয়। সে কারণে আমার গায়ে কাদা। তারা যে আমার গায়ে কাদা ছুড়েছে, সে কারণে নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এলাকায় বেশি বেশি যাই, এতে আমার জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে প্রতিপক্ষ এরকম কথাবার্তা ছড়াচ্ছে।’
উল্লেখ্য, কপোতাক্ষ নদের বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে সাগরের নোনা পানিতে। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে গত বুধবার (২৬ মে) ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নিয়মিত জোয়ারভাটা আসা-যাওয়া করছে গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার দীর্ঘ এক যুগ পর আবার এমন দুর্ভোগে পড়েছে এলাকাবাসী। চার দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছে শত শত মানুষ।