২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বুধবার বিকেলে অধিবেশন শুরু হবে। করোনা পরিস্থিতির কারণে অধিবেশন হবে সংক্ষিপ্ত।
জানা যায়, স্বাস্থ্য সুরক্ষায় যাবতীয় প্রস্তুতিসহ সার্বিক পরিকল্পনা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। গতবারের মতো এবারও রোস্টার করে সংসদ সদস্যরা অধিবেশনে অংশ নেবেন। প্রতি কার্যদিবসে উপস্থিতি সংখ্যা ১০০ থেকে ১২০ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হবে। এক্ষেত্রে একজন সংসদ সদস্য তিন থেকে চার কার্যদিবস অধিবেশনে যোগ দেবেন। যোগদানের জন্য তাদের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকা বাধ্যতামূলক। একদিন করোনার টেস্টের নেগেটিভ ফলাফলের ভিত্তিতে পরপর দুদিন অধিবেশনে যোগ দেওয়া যাবে। ফলে সংসদে যোগদানের জন্য সংসদ সদস্যদের একাধিকবার নমুনা পরীক্ষার প্রয়োজন পড়বে।
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা জানান, বিশাল আকারের এই বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে মানুষের জীবন ও জীবিকা। জোর দেওয়া হবে স্বাস্থ্য খাতে। করোনা মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্য কিছু না কিছু দেওয়ার চেষ্টা করবেন অর্থমন্ত্রী। নতুন করের বোঝা চাপাতে চান না তিনি।
কর্মকর্তারা আরো জানান, আসছে বাজেটের মোট আকার হতে পারে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার। বাজেটে মোট আয় ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ২ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। মানুষের হাতে টাকার সরবরাহ বাড়াতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি বেসরকারি খাতেও বিনিয়োগ টানার চেষ্টা থাকবে বছর জুড়েই। এ জন্য বাজেটে মোট উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এরমধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা ধরা হচ্ছে। আর মোট অনুন্নয়ন ব্যয় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণ নেওয়া হবে প্রায় ৯৮ হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক ঋণ নেওয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস মহামারীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। জীবিকার তাগিদে মৃত্যুঝুঁকি জেনেও প্রাত্যহিক কাজে যাচ্ছে মানুষ। কিন্তু টানা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা করোনার তাণ্ডবে চরম মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। লাখ লাখ মানুষ হয়ে পড়েছে কর্মহীন। আড়াই কোটি মানুষের নতুন করে দরিদ্রের খাতায় নাম উঠেছে। এ অবস্থায় আসছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে জীবন ও জীবিকা। অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও কৃষি খাতে থাকছে বিশেষ ছাড়ের ঘোষণা। থাকবে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষার ঘোষণা। দরিদ্র মানুষকে সুবিধা দিতে বাড়বে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা। করোনা মহামারীতে মানুষ ও সরকারের আয় কমে যাওয়ায় সাধ ও সাধ্যের সমন্বয় ঘটানোর চেষ্টা থাকবে বাজেটে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বাজেট প্রস্তাব উত্থাপনের পর দুই দিন বিরতি দিয়ে ৬ জুন থেকে বাজেট আলোচনা শুরু হবে। ওইদিন থেকে বেলা ১১টায় অধিবেশন শুরু হবে। সোমবার (৭ জুন) সম্পূরক বাজেট পাসের পর অধিবেশন আবারও মুলতবি করা হবে। এরপর টানা ছয় দিন বিরতি দিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা ১৪ জুন শুরু হবে। এ আলোচনা চলবে ১৫, ১৬, ১৭ ও ২৮ জুন। সাধারণ আলোচনা শেষে ২৯ জুন অর্থবিল এবং ৩০ জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। পরদিন পহেলা জুলাই বাজেট অধিবেশন শেষ হবে।
নতুন বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর মাত্র পাঁচ দিন আলোচনা হবে। আলোচনায় নির্ধারিত সংখ্যক সরকার ও বিরোধী দলের সদস্য অংশ নেবেন। পুরো বাজেট পাসের প্রক্রিয়া ব্যয় হবে ১০ দিন। সেক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৫ ঘণ্টা বাজেট আলোচনা হতে পারে। প্রতিদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত এ আলোচনা চলবে। অধিবেশনে বাজেট ছাড়াও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
করোনা পরিস্থিতি গত বছর বাজেট অধিবেশনের সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হয়েছিল। গত বছর মাত্র ৯ কার্যদিবস চলে বাজেট অধিবেশন। যা বাংলাদেশের বাজেট অধিবেশনের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত।