1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৬ পূর্বাহ্ন

ঋণ নেবো না কর্মসংস্থান বাড়াবঃ অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট : শনিবার, ৫ জুন, ২০২১
ঋণ নেবো না কর্মসংস্থান বাড়াবঃ অর্থমন্ত্রী
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল

সংসদে প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বিতর্কের ঝড় উঠলেও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্যে ব্যবসাবান্ধব বাজেট দিতে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। এতে দেশে নতুন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরির সুযোগ হবে। আর প্রবৃদ্ধি হবে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। একই সঙ্গে আগামীতে আমরা ঋণ নেবো না, দেবো। এবারের বাজেট শতভাগ বাস্তবায়নযোগ্য। রীতি অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গতকাল ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ২০২১-২২ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হয়েছে। করোনাকালে জিডিপির এই প্রবৃদ্ধি অর্জন কঠিন হলেও সম্ভব। অপ্রদর্শিত অর্থ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কালো টাকা এবং অপ্রদর্শিত আয়ের মধ্যে ব্যাপক ডিফারেন্স। এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে। কেউ বলে এই সুযোগ রাখেন আরেকপক্ষ বলেন, এটা ঠিক নয়। তবে দেশের স্বার্থে যেটা ভাল সেটা করার এখনো ১ মাস সময় আছে। বিষয়টি আরও পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। আর এ কারণেই এবার অপ্রদর্শিত অর্থের বিষয়টি বাজেটে আনা হয়নি। অর্থমন্ত্রী বলেন, এই সুযোগ ঢালাওভাবে দেয়া হলে যারা নিয়মিত ট্যাক্স ও ভ্যাট দেন তাদের প্রতি এক ধরনের অবিচার করা হয়। তারা কর প্রদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। আবার অপ্রর্দশিত অর্থ অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে, এটি রাখা হলে অর্থনীতির জন্য ভালো হতো। একই সঙ্গে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়ায় কি পরিমান অর্থ মূল ধরায় এসেছে। এর ভালো, মন্দো দেখা হবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে কী উপায়ে এ জাতীয় অর্থ মূল ধারায় আনা যায় সে ব্যাপারে পরিকল্পনা করা হবে। এছাড়া বাজেটে সরকার উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, মেইড ইন বাংলাদেশকে প্রোমট করার জন্য আরো সুযোগ দেয়া হবে। একই সঙ্গে দেশে আগামী এক বছরে করোনার টিকার জন্য যে পরিমাণ অর্থ লাগবে তার চেয়েও বেশি অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বাজেট পরবর্তী ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পরিকল্পান মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন।

বাজেট সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকলেও বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য। অতীতে আমরা যা বলেছি তা অর্জন করেছি। এটা অর্জন করতে যে সমস্ত নেটওয়ার্ক দরকার সেগুলো খুব শক্তিশালী। সামষ্টিক অর্থনীতির গতিমুখীতা অত্যন্ত অগ্রসরমুখী। দেশ স্বাভাবিক হলে আবারও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দেখাবো। তিনি আরো বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সারা দুনিয়ায় আলোচনা চলছে। ২০১৯ সালের জুলাইয়ের ৩০ তারিখে আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জের রিজার্ভ ছিল ৩২ পয়েন্ট ৭ বিলিয়ন ডলার, একবছর পর সেটা ৩২ থেকে ৩৬ বিলিয়নে চলে আসল। ১ বছরের মাঝে চার বিলিয়ন বাড়লে। এর পর গত ডিসেম্বরে সেটা ৪৩ পয়েন্ট ১ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। আর গতকাল সেটা ছিল ৪৫ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার।

অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা যথেষ্ট ক্যাপাবল। ২০১৯ সালে আমরা বলেছি, সেদিন খুব দূরে নয়, যেদিন আমরা অন্যদেশকে ঋণ দেবো। আগামীতে আমরা ঋণ নেবো না, ঋণ দেবো। প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে এ রকম এক প্রশ্নের জবাবে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে। বাজেটের পুরোটাই হলো ব্যবসায়ী বান্ধব। আমি মনে করি, বাজেট ব্যবসায়ী বান্ধব হলেই ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেবেন। আর ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেয়ার মানে হচ্ছে উৎপাদনে যাওয়া। সেই উৎপাদনটি ঘটাবে আমাদের দেশের জনগোষ্ঠী। মানুষের কর্মসংস্থান না করা হলে কিভাবে তারা এগুলো করবেন? সেজন্য আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীরাই এ কাজটি করবেন। সেজন্য ব্যবসায়ীদের আমরা সুযোগ দিয়েছি, আমরা কমিটেড।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমরা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ লাইনটা ব্যবহার করতে চাই। আমাদের দেশীয় প্রোডাক্ট যেগুলোকে বাড়তি সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে বাজেটে যা দেখেছেন সেটাই যে থাকবে তা নয়, আমরা কিছু ফ্লেক্সিবল থাকব। আমরা আরও পরিবর্তন করব, কখনো বাড়াবো না। আমরা সবসময় প্রয়োজনে ট্যাক্স, ভ্যাট কমাবো।
অপ্রর্দশিত অর্থ নিয়ে বাজেটে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি, তাহলে কি ৩০ জুনের পর অপ্রর্দশিত অর্থ বৈধ করার সুযোগ থাকছে না এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, কালো টাকা নিয়ে আমি কখনো কথা বলিনি। আমাদের বাজেটে আমরা যেই প্রভিশনটি রেখেছিলাম তা হলো অপ্রদর্শিত আয়। কালো টাকা এবং অপ্রদর্শিত আয়ের মধ্যে ব্যাপক ডিফারেন্স। কালো টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে সৃষ্টি হয়, আর অপ্রদর্শিত টাকাটা আমাদের সিস্টেমের কারণে সৃষ্টি হয়। ট্যাক্সের টার্গেট করা হয় ৫০ শতাংশ থেকে ৬০ শতাংশ। এটা অনেক অন্যায় করা হয়েছে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের সাথে। এখানে কোনো এক সময় ছিল সুপার ইনকাম ট্যাক্স, যারা বেশি ইনকাম করবে তাদের আরও বেশি ট্যাক্স দিতে হবে। অথচ উল্টোটা হওয়া উচিত ছিল।

আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যারা সীমিত সম্পদকে এক্সপ্লয়েড করে ম্যাক্সিমাম আয় করবে তাদেরকে বেশি করে সুযোগ করে দেয়া উচিত ছিল। সেটা না করে যারা বেশি আয় করেছিল তাদের আরও বেশি চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল, এটা ঠিক না। সেজন্য আমরা এই বিষয়গুলো দেখে যতটা সম্ভব হয়েছে এই বাজেটে খোলামেলাভাবে সুন্দর ও সহজ করে আরও সার্বজনীন করার চেষ্টা করেছি। অর্থনীতির গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করের হার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আদায় বাড়বে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

বাজেট পেশের সময় প্রতি মাসে ২৫ লাখ ব্যক্তিকে টিকাদানের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরুর দিকে মাইকিং করেও টিকা দেয়ার লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। আমাদের টার্গেট ২৫ লাখ নয়। পর্যায়ক্রমে সবাইকেই ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন আর একটি নয় বহু উৎস থেকে টিকা আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ভ্যাকসিন কিনতে টাকা কোন সমস্যা নয়। ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে অন্য খাত থেকেও টাকা আনা হবে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, উন্নয়নশীল দেশে ঘাটতি বাজেট হতেই পারে, এটি নতুন কিছু নয়। মন্ত্রী বলেন, ঘাটতি বাজেট নতুন নয়, আমরা উন্নয়নশীল দেশ, ঘাটতি বাজেট হবে। তবে সংশয় আছে ঘাটতির পরিমাণ নিয়ে। তবে আমি কনফিডেন্ট, অর্থমন্ত্রী এটিকে মোকাবিলা করতে পারবেন। আমরা একটি অনুমানের জগতে আছি। সেটাকে নিয়ে তর্ক করে কোনো লাভ হবে না।

স্বাস্থ্যখাতের কেনাকাটায় অনিয়ম রোধ ও বাজেটের বরাদ্দ টাকা খরচের ক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুর রউফ তালুকদার এ বিষয়ে বলছেন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে কেনাকাটার সঙ্গে জড়িত প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) ক্রাশ প্রোগ্রাম নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় নতুন বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩ শতাংশের বেশি। এক বছরে আমরা যে পরিমাণ ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে পারবো তার চেয়েও বেশি টাকা বাজেটে রাখা হয়েছে। ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। যদি প্রয়োজন হয়, অন্যখাত থেকেও টাকা আনা যাবে।

অর্থসচিব বলেন, স্বাস্থ্যখাতের ব্যয়ের একটা অংশ অব্যবহৃত থাকে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের সঙ্গে যারা জড়িত- সেখানে একটা সমস্যা আছে। যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য জিনিসের ডিমান্ড এবং সাপ্লাইয়ের মধ্যে বিস্তর ফারাক আছে। নতুন অর্থবছরে এ দুটো নিয়ে আমরা কাজ করবো। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। তবে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ৭৬ হাজার কোটি টাকা নেয়া হলেও এর প্রভাব ব্যাংক খাতে পড়বে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। ফজলে কবির বলেন, ব্যাংক খাতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। গত এক বছরের ব্যবধানে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে ৯২ দশমিক ৪২ শতাংশ। বিশাল এই তারল্যের একটি বড় অংশ বন্ডে বিনিয়োগ হলেও এখনও ৪০ হাজার কোটি টাকার তারল্য রয়েছে।

ড. শামসুল আলম বলেন, সাধারণত ব্যবসাবান্ধব বাজেট বলে কর ছাড় দেয়া হয়েছে। এ কারণে যে ব্যবসা আবার সক্রিয় হোক। বেসরকারীখাত থেকে ৮০ ভাগ এবং সরকারীভাবে মাত্র ২০ ভাড় বিনিয়োগ হয়। বিনিয়োগ রেশিও বেশি ধরা হয়নি। একযুগে মূলধনের উৎপাদন বেড়েছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্যবাসয়ীদের সুযোগ দেয়া। যাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তৈরি হয়। এটা আগামী দুই তিন বছরে ট্যাক্স উঠে আসবে যেটা ছাড় দেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত বৃহষ্পতিবার করোনা মহামারির প্রকোপের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে তৃতীয়বারের মতো বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

সূত্রঃ ইনকিলাব

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি