দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পতিত এক একর ৪৪ শতাংশ জমিতে তুলসী ও হারবক্স চাষ করে বছরে ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন তিনি। তিনি হলেন,ধাপেরহাট ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ ও ছাইগাড়ী গ্রামে বাসিন্দা ও একাধিক বার নির্বাচিত ইউপি সদস্য। অত্যন্ত সাদাসিধা আবদুল আজিজ শুধু ইউপি সদস্য,কৃষক ও প্যানেল চেয়ারম্যান হিসাবেই পরিচিত নয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রান্না কাজ করে অতিথি ও আয়োজকদের ও এলাকাবাসীর নিকট পাকানি আবদুল নামেই বেশী পরিচিত।বিভিন্ন গুনে গুনান্নিত ধাপেরহাট ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান প্রতিবেদককে বলেন, আমি দীর্ঘ ৫ বছর থেকে তুলশী হারবক্স ও বিভিন্ন ঔষধি ফসল চাষ করে আসছি সরকারি ভাবে কেউ তার পাশে না দাড়ালেও নিজের মেধা ও সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে বছরে এক একর ৪৪ শতাংশ জমিতে শুধু তুলসী চাষ করে ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করেন।
তিনি বলেন, তুলসী চাষে সার কম লাগে, পোকামাকড় আক্রমণ কম হয়।কীটনাশক ছাড়াই,কম পরিচর্যায় পতিত জমিতে ও গরু ছাগল না খাওয়ায় নিরাপদে চাষ করা যায়। তিনি বলেন তুলসীর চারা লাগানোর একমাসের মধ্যে সঠিক ভাব পরিচর্যা করলে তুলশীর পাতা সংগ্রহ করা যায়। দুই থেকে চার ইঞ্চি গোড়া রেখে পাতা সংগ্রহ করলে পরবর্তীতে প্রতি মাসে দু বার তুলসী গাছের পাতা সংগ্রহ করা যায়।বাজারে চাহিদা থাকায় ও কম খরচে উৎপাদন হওয়ায় শুকনা ও কাঁচা পাতা বেশী দামে বিক্রি করা য়ায়।তাই বেকারত্ব ঘোচাতে তুলসী চাষে অতিদ্রত স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। ইতিমধ্যেই তার এই সফলতায় অনেকে উদ্ভুদ্ধ হয়ে বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদ শুরু করছে। তিনি বলেন,করোনা পরিস্থিতিতে এখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির উপরেই সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে তুলসীর জুড়ি মেলা ভার। কম খরচে তুলসী চাষ করে ভালো টাকা লাভ পেতে পারেন কৃষক। বিভিন্ন সংস্থা গ্রামে এসে তুলসীর পাতা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। যে পতিত জমিতে আগাছা ভরে থাকে সেখানে তুলসী চাষ করে আয় করা যায়। তুলসী চাষের ফলে এলাকায় মশা-মাছির উপদ্রবও অনেক কমেছে বলে দাবি গ্রামের বাসিন্দাদের।পাশের জমির শশা চাষী বলেন, পাশে তুলশীর জমি থাকায় তার জমিতে পোকামাকড় দমনে কীটনাশকের ব্যবহার কমেছে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার খাজানুর ইসলাম বলেন, তুলসী একটি দারুন ভেষজ। প্রচুর গুণাগুন রয়েছে এতে। যত রকমের ভেষজ গুণ সম্পন্ন গাছ রয়েছে, তার মধ্যে তুলসীকে ‘রানি’ বলা হয়। ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে তিনমাসে প্রায় দু’লক্ষ টাকা আয় করা যেতে পারে। বাজারে তুলসীর প্রচুর চাহিদা। সারা বছর ধরেই চাষ করা যায়। তবে মোটামুটিভাবে বর্ষায় তুলসীর চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।এক হেক্টর জমির জন্য তুলসীর বীজ প্রয়োজন ১০ কেজি। তুলসীতে সেভাবে রোগপোকার আক্রমণ হয় না। তবে জমিতে আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজন ভিত্তিতে সেচের দরকার হতে পারে। তুলসীর পাতা ও বীজ বাজারে বিক্রি হয়। বীজের দাম প্রতি কেজি দেড়শো থেকে দু’শো টাকা। তুলসীর পাতা থেকে তেল তৈরি হয়। সাতশো থেকে আটশো টাকা কেজিতে বিক্রি হয় ওই তেল। সব মাটিতেই তুলসীর চাষ করা যেতে পারে। তবে অতিরিক্ত নোনা মাটি বা ক্ষারযুক্ত জমিতে চাষ করা উচিত নয়। যে জমিতে জল জমে থাকে, সেখানেও তুলসী চাষ না করাই ভালো। ৫.৫ থেকে ৭ পিএইচ যুক্ত মাটি তুলসী চাষের জন্য আদর্শ। তুলসী চাষে রাসায়নিক সারের তেমন প্রয়োজন হয় না। জৈবসার প্রয়োগেই ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতি হেক্টর জমি থেকে প্রায় চার টন তুলসী পাতা পাওয়া যেতে পারে আড়াই থেকে তিনমাস অন্তর অন্তর যা শুকনো হলে এক টনের মতো হবে। তুলসীর বহু প্রজাতি রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটিপ্রজাতি উল্লেখযোগ্য। মূলত বিষ্ণু তুলসী, রাম তুলসী, শ্যাম তুলসী, ভান তুলসী ইত্যাদি।
চিকিৎসাশাস্ত্রে শরীরে নতুন রক্তকোষ তৈরিতে, নিয়মিত তুলসী রস সেবনে সর্দি-কাশি, জ্বর, ফ্লু থেকে দূরে থাকা যায়। কোলেস্টরল ও সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে তুলসীর। শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ কোষ্ঠকাঠিন্য,রক্ত শোধন পেটব্যথা, কিংবা গলার প্রদাহ কমাতে পারে তুলসী। এতে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা স্বাভাবিক নিয়মে শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়তে শক্তি সঞ্চয় করে।বিভিন্ন চর্মরোগে কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেট ব্যথায় উপকারি ও রক্ত শোধন করে।