চার বছর আগে অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন টঙ্গীর রাজিব চৌধুরী বাপ্পী ওরফে লন্ডন বাপ্পী। ছয় মাসের মাথায় জামিনে বেরিয়ে আবার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন দুই বছর লন্ডনে লেখাপড়া করা রাজিব চৌধুরী। পাঁচ বছর আগে শুরু হওয়া টঙ্গীর কিশোর গ্যাং ‘ডেয়ারিং কোম্পানি’ বা ‘ডি কোম্পানির’ প্রধান পৃষ্ঠপোষক তিনি। এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন। তাঁদের ভয়ে এলাকার কেউ মুখ খুলত না। প্রতি মাসে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা আসত রাজিবের হাতে। প্রতি সপ্তাহে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের ৩০০–৫০০ টাকা করে দিতেন তিনি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। টঙ্গী পূর্ব থানার একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় শনিবার রাজিব চৌধুরীসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব–১। গ্রেপ্তার প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রধান আসামি রাজিব চৌধুরীর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। বতর্মানে থাকেন টঙ্গীর আরিচপুর এলাকায়।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাঁচ দিন আগে (১ জুন) রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের টঙ্গীর আরিচপুর এলাকায় একটি ফুচকার দোকানে খেতে আসেন ডি কোম্পানির কয়েকজন সদস্য। সে সময় ওই ফুচকা দোকানের সব কটি চেয়ারে মানুষ বসা ছিল। তখন ডি কোম্পানির সদস্যরা চেয়ার ছেড়ে দিতে বলেন। চেয়ার ছেড়ে না দেওয়ায় অতর্কিত তুহিন আহম্মেদ ও তুষার আহম্মেদকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন তাঁরা। এ ঘটনায় তুহিন আহম্মেদ টঙ্গী পূর্ব থানায় ডি কোম্পানির সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।মামলা করার পরদিন ৩ জুন ডি কোম্পানির সদস্যরা আরিচপুর এলাকার একটি দর্জি দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর চালান। আরজু মিয়া নামের এক ব্যক্তিসহ তিনজনকে কুপিয়ে জখম করেন তাঁরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে এই খবর আসার পর র্যাব–১ গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। র্যাব গোয়েন্দাদের তদন্তে উঠে আসে, গাজীপুরের টঙ্গী এলাকার মুর্তিমান আতঙ্ক ডি কোম্পানির কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে দিচ্ছেন রাজিব চৌধুরী। পাঁচ বছর আগে ফেসবুকে এই ডি কোম্পানি নামের গ্যাংয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে এই গ্যাংয়ের সদস্যসংখ্যা ৫০। তাঁদের বয়স ১৮ বছর থেকে ২৫ বছর। এলাকার মাদক, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন ডি কোম্পানির সদস্যরা।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, বর্তমানে উঠতি বয়সের ছেলেদের ক্ষমতার দাপট দেখানো নিয়ে বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে মারামারি আলোচিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকায় নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করার জন্য উচ্চ শব্দে গান বাজিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায়। বেপরোয়া গতিতে মোটরসাইকেল চালায়। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের ওপর চড়াও হয়ে খুনোখুনিও করে।
র্যাব আগে থেকে কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। বর্তমানে সারা দেশে কিশোর গ্যাং সদস্যদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট র্যাব কোম্পানি এসব কিশোর গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে অভিযান চালাবে। বাংলাদেশে কোনো কিশোর গ্যাং থাকবে না। যেসব ব্যক্তি কিশোর গ্যাংকে প্রশ্রয় দেবে এবং যারা সদস্য হবে, তাদের প্রত্যেককে আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব–১–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আবদুল মোত্তাকিম, র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক এএসপি আ ন ম ইমরান খান উপস্থিত ছিলেন।