আগামী ২০২১–২২ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়াল। কারণ, এতে আয়করে যেমন ছাড় নেই, তেমনি এই করোনাকালেও স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে কর ছাড় মিলবে না। ফলমূল আমদানিতেও কর বাড়ানো হয়েছে। ফলে করোনার সময়ে ভিটামিনযুক্ত মাল্টা, আপেল, কমলা—এসব বিদেশি ফল খাওয়ার খরচ বাড়বে। এর ওপর কম দামি ফোনে বাড়তি কর বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ভোগান্তির মধ্যেই থাকতে হবে।
করোনার প্রভাবে সাধারণ করদাতাদের অনেকের আয় কমেছে, কিন্তু সংসারের খরচ তেমন একটা কমেনি। পরিস্থিতি বিবেচনায় তাঁদের সুবিধা দিতে বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হয়নি। তা আগের মতোই তিন লাখ টাকা রাখা হয়েছে। ফলে গত জুলাই থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত যাঁদের তিন লাখ টাকার বেশি আয় হবে, তাঁদের কর পরিশোধ করতে হবে।
করোনার সময়ে সন্তানদের অনলাইনে ক্লাস করার জন্য মধ্যবিত্ত পরিবারের ‘ইলেকট্রনিক গ্যাজেট’ কেনায় খরচ বেড়েছে। ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, ট্যাব কেনায় বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। সেখানেও কোনো শুল্ক-কর ছাড় দেওয়া হয়নি এবার। এমনকি অনলাইন ক্লাস বা অফিসের ভার্চ্যুয়াল বৈঠকের জন্য ডেটা কেনায়ও কোনো ছাড়ের কথা নেই এবারের বাজেটে।
করোনায় ভিটামিনের অভাব পূরণ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ায় ফলমূলে খরচ বাড়িয়েছেন মধ্যবিত্তরা। গত এক বছরে আপেল, মাল্টা, কমলা ইত্যাদির বেচাকেনা বেড়েছে। এসব ফল আমদানিনির্ভর। কিন্তু এগুলো আমদানিতে অর্থমন্ত্রী ৫ শতাংশ অগ্রিম কর বসিয়ে দিয়েছেন। ফলে বাজারে এসব ফলের দাম অবধারিতভাবেই বাড়বে। এতে মধ্যবিত্তের ফল খাওয়া বিলাসিতায় পরিণত হতে পারে।
বিস্কুট-চুইংগামের দামও বাড়তে পারে। দেশি বিস্কুট ও চুইংগামের পাশাপাশি বাজারে বিদেশি বিস্কুট-চুইংগাম পাওয়া যায়। এবারে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের বিদেশি বিস্কুট খাওয়ানো কঠিন হবে। কারণ, বিস্কুট-চুইংগাম আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে।
সমাজে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে কে না চায়। তাই তো মধ্যবিত্ত নারী-পুরুষেরা এখন রূপচর্চায় আগের চেয়ে বেশি মনোযোগী। কিন্তু বাজেটে বিদেশি পারফিউম আমদানির ক্ষেত্রে নতুন করে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর আরোপ এবং বিদেশি সাবান আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে বিদেশি পারফিউম বা সুগন্ধি ও সাবানের দাম বাড়তে পারে। ফলে মধ্যবিত্তের রূপচর্চায় ব্যাঘাত ঘটবে।
মধ্যবিত্তরা সাধারণত অপ্রয়োজনীয় খরচ খুব একটা করে না; বরং খরচ কমিয়ে কিছু টাকা জমান। দেশে অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহকর্ত্রী আছেন, যাঁরা দুঃসময়ের জন্য অল্প অল্প টাকা জমিয়ে সঞ্চয়পত্র কেনেন। কিন্তু তাঁদের করযোগ্য আয় নেই। এবারে দুই লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে আগের মতো ১০ শতাংশ কর দেওয়ার পাশাপাশি কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। বছর শেষে রিটার্নও দিতে হবে। এ ছাড়া কর রেয়াত সুবিধায় ব্যক্তি করদাতার বিনিয়োগসীমা দেড় কোটি থেকে কমিয়ে এক কোটি টাকা করা হয়েছে।