বিশেষ প্রতিনিধি গাইবান্ধা :
১১ সাসের সুদের টাকা পরিশোধ করার পরেও ভ্যান চালকের সম্বল ভ্যান আটক করায় অভিমানে ও ক্ষোভে গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে দাদন ব্যবসায়ীর টাকার চাপে জাহাঙ্গীর শেখ নামে এক ভ্যানচালক আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল ১০ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত ভ্যান চালক জাহাঙ্গীর শেখের বাড়ি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গুমানিগঞ্জ ইউনিয়নের নাগেরভিটা গ্রামে।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, এক বছর আগে স্থানীয় ‘নাগের ভিটা’ সমিতি থেকে সুদে ১০ হাজার টাকা নেন জাহাঙ্গীর শেখ। এর মধ্যে ১১ মাসের সুদের টাকা পরিশোধ করেন। এক মাসের সুদের এক হাজার টাকা বৃহস্পতিবার দেওয়ার কথা ছিল। তিনি সেই টাকা দিতে ব্যর্থ হন। এদিকে সকালে সবজি বোঝাই ভ্যান নিয়ে বগুড়ার মহাস্থান হাটে যাচ্ছিলেন ভ্যান চালক জাহাঙ্গীর। কিছুদূর যাওয়ার পর সুদ ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলামসহ ৫-৬ জন তার পথরোধ করেন। এ সময় জাহাঙ্গীর সুদের এক হাজার টাকা এক সপ্তাহ পরে দিতে চান। তারা জাহাঙ্গীরের কোন কথা না শুনে তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন টানা হেচরা ও অপমান অপদস্ত করেন। পরে তার সব সবজি মাটিতে ফেলে ভ্যানটি নিয়ে যায় সুদ ব্যবসায়ীগং।
ঘটনার পর অপমান সহ্য করতে না পেরে বাড়িতে গিয়ে বিষাক্ত ট্যাবলেট খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ভ্যান চালক জাহাঙ্গীর।
এ ঘটনায় নিহত’র ভাই কুদ্দুস শেখ বাদী হয়ে নাগের ভিটা গ্রামের সুদারু অঞ্জ মিয়ার ছেলে জহুরুল ইসলাম(৪০),মৃত মোজা মিয়ার ছেলে আশরাফ আলী(৪০),সোলায়মান আলী,শাহিন মিয়া,মতিয়ার রহমানের নাম উল্লেখ করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় রাতেই একটি এজাহার দায়ের করেছেন গোবিন্দগঞ্জ থানার এস,আই জহুরুল ইসলাম সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স ঘটনাস্থল তদন্ত করেছেন।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গোবিন্দগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ মেহেদি হাসান সাংবাদিকদের জানান,এ ঘটনাটি শুনেছি,তবে এ ঘটনায় নিহত’র ছেলে তার চাচাকে বাদী হতে দিবেন না,তাই আমরা তার ছেলের অপেক্ষায় আছি।
উল্লেখ্য, গাইবান্ধা জেলা জুড়ে দাদন ব্যবসা ব্যাপক ভাবে চলছে । এ ব্যবসার ধরন নানা রকম কোথাও কারেন্ট,কোথায় সপ্তাহিক,কোথাও মাসিক, কোথাও বাৎসরিক হারে দাদন ব্যবসায়িদের সুদের কারবার চলছে । অনেক সময় জমির দলিল,সোনা দানা,মুল্যবান সম্পদ রেখে টাকা নিয়ে দাদন ব্যবসায়িদের নিকট হতে নগদ অর্থ নিতে হয় । সময় মতো টাকা দিতে পারলে খোয়াতে হয় জমানতকৃত মুল্যবান সম্পদ এরপর আবারো লাভের টাকার জন্য দিতে হয় বাস্তভিটা এরপর অবশিষ্ট প্রান । এমন ভাবে জেলার সর্বত্র চলছে সুদের মহা স্বর্গরাজ্য । ছোট বড় হাটবাজার গুলোতে চলছে কারেন্ট সুদের কারবার। সুদ কারবারিরা রাতারাতি কোটি পতি বনে গেছেন প্রতিনিয়ত দিচ্ছেন সম্পদের আয়কর ফাকি। গাইবান্ধা জেলা শহরে ব্যবসায়ি হাসান হত্যার কয়েকদিন পরেই দাদনের টাকা দিতে না পারায় গাইবান্ধার খোলাহাটির রথেরবাজারে ভিটেমাটি হারিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন কোব্বাস আলী নামে এক বাসচালক। এই মামলায় চার আসামির তিন জনেই ধরাছোঁয়ার বাহিরে….!!! এসব ঘটনার মধ্যেই সাদুল্লাপুর উপজেলার পূর্ব দামোদরপুরে সুদ ব্যবসায়ী ছয় ভাই জন্ম দেয় আরেক ঘটনা। ছেলের প্রেমের খেসারত হিসেবে ছয় ভাই মিলে ছকু মিয়া নামে এক রিকশা চালকের উপর চালায় রাতভর নির্যাতন। পরে তাকে ভিটে ছাড়া করার ১৮ দিন পর গাজীপুরে মারা যান তিনি। ছেলের প্রেমের খেসারত হিসেবে জরিমানার পঞ্চাশ হাজার টাকার জন্য তার একমাত্র ঘরটিও দাদন ব্যবসায়ীরা বিক্রি করে দেন। পরে ছকুর সন্তানদেরও করা হয় ভিটা মাটি ছাড়া এখনো প্রতিনয়িত প্রান নাশের হুমকি ধামকি অব্যহত রয়েছে। আর কত প্রান ঝড়লে আর কত মানুষ নিঃস্ব হলে নেওয়া কঠোর আইনী ব্যবস্থা জনমনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া।