পবিত্র হজ্জ ইসলামের মহান একটি রূকন বা স্তম্ভ। আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে পরিস্কার ভাষায় সামর্থবান মুসলিম নর-নারীর উপরে জীবনে একবার এ মহান ইবাদতটি ফরয করে দিয়েছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন: “এবং সামর্থ্যবান মানুষের উপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ্জ করা ফরয। আর যে ব্যক্তি কুফরী করে, তবে আল্লাহ তো নিশ্চয় সৃষ্টিকুল থেকে অমুখাপেক্ষী।”
[সূরা আলে ইমরান-৯৭]
আর্থিক সামর্থ। অর্থাৎ পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরদের ভরণপোষণ নিশ্চিত করে কোন ব্যক্তির নিকট হজ্জে যাওয়া-আসা ও পাথেয় খরচ থাকলে তার উপর হজ্জ ফরয। বাসস্থান, প্রয়োজনীয় গৃহসামগ্রী, পোষাক-পরিচ্ছদ, ব্যবহৃত বাহন, পরিবার-পরিজন, চাকর-বাকরের যাবতীয় ব্যয় চালনার জন্য ন্যূনতম কৃষিজমি অথবা ন্যূনতম ব্যবসা অথবা চাকুরীর পর অতিরিক্ত যে স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি থাকে তা থেকে হজ্জের ব্যয় নির্বাহ সম্ভব হলেই হজ্জ ফরয হবে।
হজ্জের মাধ্যমে মু’মিনদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক সৌভাগ্যের দুয়ার খুলে যায়। ইহরাম গায়ে হাজীর লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক (আমি আপনার দরবারে হাজির হে আল্লাহ আমি হাজির) ধ্বনি মূলতঃ আল্লাহর নির্দেশিত ইবরাহীম (আঃ)-এর আহবানের সাড়া দিয়ে এগিয়ে যাওয়া।
আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে ইরশাদ করেন- এবং (হে ইবরাহীম) মানুষের মধ্যে হজ্জের ঘোষণা দাও। তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সকল প্রকার কৃশকায় উটের পিঠে চড়ে দূর-দূরান্ত থেকে (সূরা হজ্জ, আয়াত-২৭)
এরপরই আল্লাহ ঘোষণা দেন – তাদের এ আগমন হবে যেন তারা তাদের কল্যাণের স্থানে পৌঁছে। (সুরা হজ্জ, আয়াত-২৮)
এ আয়াতে হজ্জের ব্যাপক উপকারিতার প্রতি ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ আদায় করা ইসলামের অন্যতম একটি রুকন ও মূল ভিত্তি। দলীল হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণী:
“ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এই সাক্ষ্য দেয়া যে, নেই কোন সত্য উপাস্য শুধু আল্লাহ ছাড়া এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল (বার্তাবাহক)। নামায কায়েম করা। যাকাত প্রদান করা। রমজান মাসে রোযা রাখা। বায়তুল্লাতে হজ্জ আদায় করা।”
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“আল্লাহ তাআলা তোমাদের উপর হজ্জ ফরজ করেছেন। সুতরাং তোমরা হজ্জ আদায় করো।”
হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত পাঁচটি:
এক: ইসলাম। ইসলামের বিপরীত হচ্ছে- কুফর। সুতরাং কাফেরের উপর হজ্জ ফরজ নয়। কাফের যদি হজ্জ আদায়ও করে তাহলে সে আমল কবুল হবে না।
দুই: সাবালগ হওয়া। সুতরাং যে সাবালগ হয়নি তার উপর হজ্জ ফরজ নয়। যদি নাবালগ কেউ হজ্জ আদায় করে তবে তা নফল হজ্জ হিসেবে আদায় হবে এবং সে এর সওয়াব পাবে। সে যখন সাবালগ হবে তখন ফরজ হজ্জ আদায় করতে হবে। কারণ সে সাবালগ হওয়ার আগে যে হজ্জ করেছে- এর দ্বারা ফরজ হজ্জ আদায় হবে না।
তিন: বিবেকবুদ্ধি। এর বিপরীত হচ্ছে- বিকারগ্রস্ততা। সুতরাং পাগলের উপর হজ্জ ফরজ নয় এবং পাগলকে হজ্জ আদায় করতে হবে না।
চার: স্বাধীন হওয়া। সুতরাং ক্রীতদাসের উপর হজ্জ ফরজ নয়। যদি সে হজ্জ আদায় করে তবে তার হজ্জ নফল হিসেবে আদায় হবে। যদি সে স্বাধীন হয়ে যায় তাহলে তাকে ফরজ হজ্জ আদায় করতে হবে। কারণ দাস থাকাকালীন সে যে হজ্জ আদায় করেছে সেটা দ্বারা ফরজ হজ্জ আদায় হবে না। তবে কিছু কিছু আলেম বলেছেন: যদি ক্রীতদাস তার মালিকের অনুমতি নিয়ে হজ্জ আদায় করে তাহলে সে হজ্জ দ্বারা তার ফরজ হজ্জ আদায় হয়ে যাবে। এটাই অগ্রগণ্য মত।
পাঁচ: শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা। মহিলার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত একটি সামর্থ্য হলো- হজ্জের সঙ্গি হিসেবে কোন মোহরেম পাওয়া। যদি নারীর এমন কোন মোহরেম না থাকে তাহলে তার উপর হজ্জ ফরজ নয়।