1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ অপরাহ্ন

বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের শতবর্ষী গাছ করাত কলে

একেএম শামছুল হক
  • আপডেট : সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)প্রতিনিধি :

উন্নয়নের নামে কর্তনকৃত শতবর্ষী গাছ ও ডাল পালাগুলো করাত কলে পাঠিয়েছেন প্রকৌশলী। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন উচুঁ ও বর্ধিতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে ঐতিহ্যবাহি এসব গাছ ও ডাল পালা কেটে নেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী (ওয়ে) আব্দুর রাজ্জাক। পরে সেগুলো নিলামে বিক্রি করার কথা থাকলেও তিনি তা না করে ওই শতবর্ষী গাছ ও কেটে নেয়া ডালপালাগুলো কাঠ বানাতে স্থানীয় একটি করাত কলে পাঠিয়েছেন মর্মে অভিযোগ উঠেছে। বিধিনিষেধ উপক্ষো করেই সরকারি গাছগুলো নিলামে না দিয়ে কাঠ তৈরি করতে নিয়েছেন করাত কলে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপসহকারী প্রকৌশলীর এমন কান্ডে হতবাক স্থানীয়রা।

সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বামনডাঙ্গা বন্দর এলাকার স্থানীয় আবুল কালাম আজাদ নামে এক ব্যক্তির করাত মিলে স্টেশনের নাম্বারিং করা বেশকিছু গাছের গুড়ি। সেগুলো কাঠ বানানোর জন্য সেখানে পরিত্যক্ত রাখা হয়েছে। আর বেশকিছু গাছের কাঠ তৈরি করে বিক্রিও করেছে চক্রটি। করাত শ্রমিক মতিয়ার রহমানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী অন্তত ৬০ সেপ্টি কাঠ বেহাত হয়েছে। এতে লুট করা হয়েছে প্রায় লাখ টাকার রাষ্ট্রীয় সম্পদ।

বামনডাঙ্গা স্টেশন মাষ্টার হাইউল মিয়া জানান, এ বিষয়গুলো উপসহকারী প্রকৌশলী (ওয়ে) আব্দুর রাজ্জাক দেখেন। সে কারণে গাছ কাটা ও করাত কলে পাঠানোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি।বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল ইসলাম জাবেদ বলেন, বৃটিশকাল থেকে বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের সৌন্দর্য্য ধরে আছে শতবর্ষী এ গাছগুলো। সেগুলো তো কাটার দরকার নেই। আর যদি দরকারই হয় তাহলে বিধিমোতাবেক কাটতে হবে। আবার নিলামে না দিয়েই সেই গাছ করাত কলে পাঠানোর বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানান তিনি।

বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন মুক্তি জানান, এর আগে গাছ ও ডালপালা গুলো কেটে নাম্বারিং করে রাখা হয় স্টেশন চত্বরে। পরে সেগুলো নিলামে দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু উপসহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক তা না করে নাম্বারিং করা কিছু গাছের গুল কাঠ তৈরি করে নিচ্ছেন।বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নজমুল হুদা জানান, রেলের সম্পত্তি একান্তই রেল কর্তৃপক্ষের ব্যাপার। তবে তাদেরও একটা নিয়মনীতি আছে। সেই নিয়মনীতি অনুযায়ী কাজ করা উচিৎ। আর তা না হলে এটা অন্যায় হবে তাদের।

বামনডাঙ্গার সিনিয়র উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক করাত কলে গাছ পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন উচুঁ ও বর্ধিতকরণ কাজে একাঠগুলো ব্যবহার করা হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগীয় প্রকৌশলীর মোবাইল ফোনে (০১৭১১৬৯১৬৪৯) একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি কল ধরেননি। অথচ বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনে সাঁটানো এক ব্যানারে উনার ফোন নাম্বার দিয়ে বলা আছে, এই কাজের ব্যাপারে আপনার যদি কোন অভিযোগ বা পরামর্শ থাকে যোযাযোগ করুন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন উচুঁ ও বর্ধিতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নের অযুহাত দেখিয়ে বৃটিশকাল থেকে কালের সাক্ষী হয়ে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যবাহি শতবর্ষী জীবিত ৬টি রেইনট্রি গাছের ডালপালা ও ২টি শিমুল গাছ কাটেন সিনিয়র উপ-সহকারি প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাক। এতে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি কিংবা নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। শতবর্ষী গাছের সাথে এমন নির্মমতা চালাতে তাকে সহযোপগিতা করেন স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। যে জায়গায় গাছের ডালপালা ও গুড়িগুলো রাখা হয়েছে সেখান থেকে রাতের বেলা বেশকিছু গাছেরগুড়ি পাচার করাও হয় বলে অভিযোগ আছে স্থানীয়দের। পাচার হওয়া সেই গাছগুলো স্টেশন উন্নয়নে ব্যবহার করার দাবি উপসহকারী প্রকৌশলীর।

রেলওয়ে লালমনিরহাট বিভাগ সূত্র জানায়, বামনডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনকে দ্বিতীয় শ্রেণির আধুনিক প্লাটফর্ম নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এতে মুল প্লাটফর্মের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ও উঁচু করণের কাজ চলছে। কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ৪৩ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮’শ টাকা। কিন্তু নতুন নকশায় নির্মাণাধীন স্টেশনটির প্লাটফর্ম উন্নয়নে বাঁধা দেখছে শতবর্ষী রেইন্ট্রি গাছ। তাই যাত্রীদের ঝুঁকি কমাতে সেসব গাছের ডালপালা কেটে ফেলছে কাজের দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি