চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতারকৃত ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া মামলার অপর আসামি তিন নারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নিভানা খায়ের জেসী এ আদেশ দেন। যে তিন নারী আসামিকে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে, তারা হলেন- লিপি আক্তার, সুমি আক্তার ও নাজমা আমিন স্নিগ্ধা।
অন্যদিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করার পর পুলিশ আসামিদের ধরতে ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন অভিনেত্রী পরীমনি। মঙ্গলবার বিকালে মামলার বিষয়ে কথা বলতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে যান পরীমনি। বিকাল চারটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত তিনি সেখানে অবস্থান করেন। ছয়টার দিকে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পরীমনিকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। পুলিশের এসআই মাহমুদুর রহমান বলেন, গতকাল দুপুরে বিমানবন্দর থানার মাদক মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে আসামিদের ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। এসময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিলের আবেদন করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের আদেশ দেন। পরীমণির ঘটনায় কাউকে ছাড় নয় : ডিএমপির (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার হারুন-অর-রশীদ বলেছেন, পরীমণি পুলিশের কাছে অনুরোধ করেছেন, মামলাটি যেন সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হয়। যারা পরীমণির সাথে এই কাজটি করেছেন তারা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
গতকাল বিকেলে ডিবি কার্যালয়ে পরীমণির সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকদের তিনি আরো বলেন, ঢাকা বোট ক্লাবে ঘটনার পর পরীমণি পুলিশ ও আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু প্রযোজক সমিতি ও শিল্পী সমিতি সেই সুযোগটা করে দেয়নি। এটিই পরীমণির অভিযোগ ছিল। পরীমণি পুলিশকে ধন্যবাদ দিতে ডিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন।
হারুন বলেন, মামলা রেকর্ড হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পরীমণি বলেছেন যে, পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে এবং এটাও বলেছেন যে, তিনি (পরীমণি) আইজিপির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন এবং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কাছে আবেদনও করেছিলেন, কিন্তু তার (আইজিপি) কাছে যেতে পারেননি। এরপরেও আইজিপি স্যার ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানিয়েছেন এবং এরপর তাৎক্ষণিকভাবে আসামিদের গ্রেফতার করি।
বনানী থানা নিয়ে পরীমণির অভিযোগের বিষয়ে ডিবির এই যুগ্ম-কমিশনার বলেন, ঘটনার রাতে ৪টায় বনানী থানায় পরীমণি গিয়েছিলেন, কিন্তু ওই সময় ওসি সাহেব থানায় ছিলেন না। থানায় অসুস্থতাবোধ করার কারণে সাময়িকভাবে পরীমণি বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। ওই সময় পরীমণি দ্রুত থানা পুলিশের সহায়তায় হাসপাতালে চলে যান। এ মামলায় যদি আরও আসামি থাকে তাহলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
ঘটনা পরিকল্পিত কি না জানতে চাইলে হারুন বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। অভিযুক্ত নাসিরসহ পাঁচজন গ্রেফতারের পর আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হবে।
ডিবি কার্যালয়ে যা বললেন পরীমনিঃ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা পরীমনিকে সঙ্গে নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরীমনি। এসময় তিনি বলেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি নিজেকে সতেজ অনুভব করছেন। তারা তাকে সাহস দিয়েছেন। কাজে ফেরার বিষয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যবহারে তিনি মুগ্ধ। পরীমনি বলেন, অভিযোগ দেয়ার পর আসলে পুলিশ ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে। যা আমি ভাবতে পারিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কখনও পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করিনি। আমি আইজিপি স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলাম না। আমার আশা ছিল তিনি জানতে পারলে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। তিনি যখন জানতে পেরেছেন তখন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছেন। পরীমনি সহযোগিতার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের ধন্যবাদ জানান।
মামলার এজাহার গ্রহণ, তদন্ত প্রতিবেদন ৮ জুলাইঃ পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে করা মামলার এজাহার গ্রহণ করেছেন আদালত। সেই সঙ্গে ৮ জুলাইয়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। ঢাকার মুখ্য বিচারিক আদালতের (সিজেএম) জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কামরুন নাহার মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
পরীমনির অভিযোগ কয়েকজনের সহায়তায় সাভার বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা করেন নাসির উদ্দিন মাহমুদ। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় নাসির উদ্দিন ও অমিসহ অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে মামলা করেন এই অভিনেত্রী। গত সোমবার (১৪ জুন) দিবাগত রাত ১২টা ৫ মিনিটে ডিবির গুলশান জোনাল টিমের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার সিকদার বাদী হয়ে রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে পরীমণির দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরায় তুহিন সিদ্দিকী অমির বাসায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমিসহ তাদের তিন ‘রক্ষিতা’কে গ্রেফতার করে ডিবি। অভিযানে অমির বাসায় তল্লাশি চালিয়ে এক হাজার পিস ইয়াবা, বিদেশি মদ ও বিয়ার জব্দ করা হয়। গত ৯ জুন (বুধবার) উত্তরার বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা চালান ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় তিনি সাভার থানায় ৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।