বরিশালের গৌরনদীতে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে এক প্রাইভেটকার চালককে অপহরন ও নির্যাতন করে মুক্তিপন আদায়ের পর অপহরনকারীরা তাকে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে। গুরুতর অবস্থায় ওই প্রাইভেটকার চালককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। পাওনা টাকা চাওয়া নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষরা লোমহর্ষক এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের দেয়া বর্ননা ও থানা পুলিশের কাছে দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার শিংগা গ্রামের মোবারক আলী ফকিরের ছেলে প্রাইভেট কার চালক মোঃ শাহাদাত হোসেন (৪০) গত দেড় বছর পূর্বে তার প্রতিবেশী মোঃ লোকমান বেপারীকে ১লাখ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও বাড়ির পার্শ্ববর্তি বাবুগঞ্জ উপজেলার চর উত্তর গ্রামের মৃত আঃ কাদের প্যাদার ছেলে শহীদ প্যাদাকে ১লাখ ২৫ হাজার টাকা ধার দেন। সম্প্রতি ওই টাকা ফেরত চাইলে শাহাদাত ফকিরের সাথে লোকমান বেপারী ও শহীদ প্যাদার বিরোধ তৈরী হয়। এ বিরোধের জের ধরে লোকমান ও শহীদ মিলে শাহাদাতকে অপহরন ও হত্যা করে লাশ গুম করার পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনা মোতাবেক গত সোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে শহীদ প্যাদা ও লোকমান বেপারী মিলে তাদের অজ্ঞাতনামা আরো ৭/৮ জন সহযোগীসহ একটি মাইক্রোবাস নিয়ে শাহাদাত ফকিরের বাড়িতে গিয়ে নিজেদেরকে ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দিয়ে শাহাদাতের ঘরে প্রবেশ করে। এরপর স্ত্রীর সামনেই শাহাদাতকে মারধর শুরু করে।
শাহাদাত ফকিরের স্ত্রী ফাতেমা ইয়াসমিন বলেন, ঘরে ঢোকা অপহরনকারীরা সবাই মাস্ক পড়ে থাকায় আমি তাদের কাউকে চিনতে পারছিলাম না। তারা আমার স্বামীকে মারধর শুরু করলে আমি তাদের বাঁধা দেই। এতে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে শহীদ প্যাদার মাস্ক খুলে যায়। আমি তখন তাকে চিনে ফেলি। তখন তারা দ্রুত আমার স্বামী শাহাদাতকে একটি মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে চলে যায়।
ওই রাতেই আমরা গৌরনদী মডেল থানা পুলিশ ও বরিশাল ডিবি পুলিশের কর্মকর্তাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে জানান, ওই এলাকায় থানা বা ডিবি পুলিশের কোন অভিযান ছিলনা। তাদের কোন টীমও সেখানে যায়নি। ইতোমধ্যে অজ্ঞাতস্থানে বসে অপহরনকারীরা আমার মোবাইল ফোনে কল করে জানায় শাহাদাতকে অপহরণ করা হয়েছে। ভোর হওয়ার আগেই তাদেরকে ৫লাখ টাকা মুক্তিপন দিলে তারা শাহাদাতকে ছেড়ে দেবে। একই সময় তারা শাহাদাতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে হাতুড়ি দিয়ে পেটায় ও নানা ভাবে শারীরিক নির্যাতন করে তার চিৎকার মোবাইল ফোনে স্ত্রী ফাতেমাকে শোনায়। এক পর্যায়ে ফাতেমা তাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তাদের হাতে নগদ ২৫হাজার টাকা, ২ভড়ি ২আনা ওজনের একটি স্বর্নালঙ্কার যার মুল্য আনুমানিক ১লাখ ৫০হাজার, শাহাদাতের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি যার আনুমানিক মুল্য ২লাখ ২৬হাজার টাকা অপহরণকারীদের হাতে তুলে দেন। এর পর বুধবার ভোর ৬টার দিকে অপহরনকারীরা শাহাদাতকে অসুস্থ্য অবস্থায় উপজেলার চন্দ্রহার বাজার এলাকায় ফেলে যায়। পরে স্বজনরা সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে গুরুতর অবস্থায় গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে।
ঘটনার সাথে জড়িত বলে অভিযুক্তরা আত্নগোপনে থাকায় তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গৌরনদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আফজাল হোসেন বুধবার বিকেলে জানান, ভিকটিম শাহাদাত হোসেন ফকিরের স্ত্রী ফাতেমা ইয়াসমিন বাদী হয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।