গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের দামোদরপুরে নিহত ছকু মিয়ার লাশ দাফনের ১৮ দিন পর আদালতের নির্দেশ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লোকমান হোসেনের উপস্থিতিতে ২১ জুন সোমবার দুপুরে লাশ উত্তোলন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন থানা পুলিশের সদস্যরা।
সাদুল্লাপুরের দামোদরপুরে দাদন ব্যবসায়ী ছয় ভাইয়ের রাতভর নির্যাতনে ছকু মিয়া (৫০) নামে এক রিকশা চালক চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা যায়।তার লাশ ঢাকা থেকে নিয়ে এসে গ্রামের বাড়িতে ময়নাতদন্ত ও ইউডি মামলা ছাড়াই প্রভাবশালী দাদন ব্যবসায়ীর দাপটে ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় দাফন করা হয়।
ছকুর মৃত্যু নির্যাতনের কারণেই হয়েছে এমন অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীর নিকটন জানালেও প্রভাবশালীদের ক্ষমতার কারণে সেদিন থানায় কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি।লাশ দাফনের ১২ দিন পর রিকশা চালকের ছেলে বাদী হয়ে ১৬ জুন বুধবার আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করে।
বুধবার ১৬ জুন বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সাদুল্লাপুর) আদালতের বিচারক শবনম মুস্তারী সাদুল্লাপুর থানায় মামলা রেকর্ডভুক্ত করে আগামী সাত দিনের মধ্যে অথাৎ ২৩ জুনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ প্রদান করেন।
ঐদিন তার আইনজীবী দাবী করেন নিহতের ভিডিও সাক্ষাৎকার ও বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের পত্রিকা কাটিং আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে আশা করি আমার মক্কেল সঠিক বিচার পাবে।
উল্লেখ্য যে, গত ১৫ মে এর পূর্বে রিকশা চালক ছকু মিয়া ছেলে গার্মেন্টস কর্মী মোজাম্মেল হকের সাথে এলাকার প্রভাবশালী দাদন ব্যবসায়ী মন্টু মিয়ার মেয়ে পালিয়ে গেছে বলে অভিযোগ তুলে ১৫ মে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ছকু মিয়ার বাড়িতে যায় ছয় ভাইসহ তাদের লোকজন। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা এলোপাতাড়ি মারডাং শুরু করে তাদের মধ্যে রনজু মিয়া হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে ছকুর মিয়ার অন্ডকোষে লাথি মারে । আর মন্টু বুকের উপর দুই পা দিয়ে পরপর কয়েকবার আঘাত করেন। এভাবেই রাতভর ছকুর উপর ছয় ভাই ও তাদের লোকজন চালায় অমানবিক পাষবিক নির্যাতন। ১৬ জুন ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে সাদুল্লাপুর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে গেলে বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের নজরে আসে।পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দামোদরপুর গ্রামের ছয় ভাই আলমগীর, আংগুর, রনজু, মনজু, সনজু ও মন্টু মিয়া ছকুর ভাইদের উপর মানসিক অত্যাচার চালাতে থাকে এরি একপর্যায়ে মন্টু মিয়া তার মেয়েকে৷ ফিরে পায়।গ্রাম্য শালিসিতে ভ্যান চালক ছুকু মিয়ার ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। উক্ত টাকার জন্য বাড়ির ভিটে ও ঘর বিক্রি করে দেয় দাদন ব্যবসায়ী মন্টু মিয়া গং। এদিকে টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয় ছকুর তার উপর জরিমানার বাকী টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি প্রভাবশালীরা। পরে তিনি চিকিৎসার জন্য ছেলের নিকট চলে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জুন ছকু মিয়া মারা যায়।৪ জুন তার লাশ বাড়িতে আসলে তার ছেলে মেয়েকে ঘরের ভিতর আটকে রেখে ছকু মিয়ার অন্যান্য ভাইদের উচ্ছেদের ও হত্যার ভয় দেখিয়ে ম্যানেজ করে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করে।
আদালতে হত্যার অভিযোগ করায় ময়নাতদন্তের জন্য ২১ জুন সোমবার কবর থেকে নিহত ছকুর লাশ উত্তোলন করলো পুলিশ।
সাদুল্লাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ রানা বলেন দুপুরে নিহতের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।