সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :
দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় সৈয়দপুরের রেলওয়ের সম্পত্তি বেদখল সংক্রান্ত রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন।
২১ জুন সোমবার সকাল সাড়ে ১১ টায় পৌরসভা রোডস্থ আদিবা কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি উক্ত সংবাদে তাঁর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেন এবং মনগড়া ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একতরফা সংবাদ পরিবেশনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এ সময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিনুল হক, পৌর আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু, সাধারন সম্পাদক মোজাম্মেল হক, পৌর মেয়র রাফিকা আক্তার জাহান বেবী প্রমুখ।
অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজমল হোসেন সরকার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সানজিদা বেগম লাকী, পৌর আওয়ামীলীগের সহসভাপতি ও সৈয়দপুর সরকারী ডিগ্রী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোঃ হাফিজুর রহমান, সৈয়দপুর বণিক সমিতির সভাপতি ঈদ্রিস আলী, পৌর প্যানেল মেয়র-১ শাহিন হোসেন, প্যানেল মেয়র-২ আবুল কাশেম দুলু, রেলওয়ে শ্রমিকলীগ কারখানা শাখার সভাপতি মোঃ নুরুল হক ও ওপেন লাইন শাখার সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলামসহ আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনসমুহের নেতাকর্মী কাউন্সিলরবৃন্দসহ সুধী ও সাংবাদিকবৃন্দ।
মোখছেদুল মোমিন তাঁর বক্তব্যে বলেন, মন্ত্রনালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ‘দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে আমাকে জড়িয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা সঠিক নয়। কারণ সৈয়দপুরে রেলওয়ের জায়গায় আমার নামে বহুতল ভবন নির্মাণ করা তো দূরের কথা কোথাও কোন অবৈধ রেলজমি দখলের অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবেনা। বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগটি কাল্পনিক।
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার ১২ নং গেটের সামনে কারখানা আধুনিকায়ন প্রকল্প চলাকালীন তমা কন্ট্রাকশন কর্তৃক মালামাল রাখা ও কর্মচারীদের থাকা এবং অফিস পরিচালনার জন্য নির্মিত ঘরটি প্রকল্প শেষে পরিত্যক্ত হওয়ায় ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মারফত অবকাঠামোটি হস্তান্তর করে। এসময় কারখানার সকল ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ শ্রমিক কর্মচারীদের সন্তানদের স্বল্প খরচে প্রাথমিক শিক্ষা (রেলওয়ে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রাইমারী শাখা না থাকায়) নিশ্চিত করণে আমার বাবা মরহুম প্রখ্যাত রেলওয়ে শ্রমিক নেতা, রেল শ্রমিকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা এবং সৈয়দপুর আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি প্রয়াত শামসুল হক এর নামে শামসুল হক মেমোরিয়াল একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন। যেটি রেলওয়ে নিয়মানুযায়ী টোকেন ফি নির্ধারণপূর্বক বরাদ্দের জন্য আবেদন করা হয়েছে এবং প্রক্রিয়া চলমান। আর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ২ একর জায়গায় নয় মাত্র ৫০ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠিত।
সৈয়দপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৪৮ সালে আর আমি জন্ম গ্রহণ করেছি ১৯৬১ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত এটির সভাপতি ছিলেন রাজাকার ইজাহার আহমেদ। এর পর পর্যায়ক্রমে সাবেক মেয়র মরহুম আখতার হোসেন বাদল, সাবেক এমপি শওকত চৌধুরী, সাবেক অধ্যক্ষ আইয়ুব আলী সরকার ২০১৬ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত আমি সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া প্রতিষ্ঠানটির সকল অবকাঠামো শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর হতে নির্মাণ করা হয়েছে। অথচ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে আমি এটি রেলওয়ে জমি দখল করে নির্মাণ করেছি। যা সর্বৈব মিথ্যা।
এছাড়াও আমার বিরুদ্ধে সিলগালা তালা ভেঙ্গে রেলওয়ের বাংলো নং টি-১৪ অবৈধভাবে বিক্রয়সহ বাংলো এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করার অভিযোগও মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন। কারণ টি-১৪ বাংলোটি এ এবং বি দুই ইউনিটে বিভক্ত। টি-১৪ এ (নীচ তলা) ইউনিট সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার এসএসএই/ইচার্জ (পরবর্তীতে সহকারী ওয়ার্কস ম্যানেজার) ১৯৮৫ সালে বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। ২০০৩ সালে তিনি অবসরে গেলে কারখানার ইয়ার্ড শপের সহকারী ইয়ার্ড গার্নার মোঃ মনসুর আলী বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করেন। তারপর তিনি অবসরে গেলে বর্তমানে রেলওয়ে হাসপাতালের রেডিওগ্রাফার মোছাঃ সুলতানা আকতার বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করছেন।
আর টি-১৪ বি ইউনিট (উপরতলা) প্রায় ২৫/৩০ বছর যাবত রেলওয়ে সার্ব অর্ডিনেট কর্মচারীদের স্ত্রীদের সংগঠন ‘মহিলা অঙ্গণ’ সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যবহার করছে। অতএব এই তথ্যটিও মিথ্যে ও অবান্তর।
প্রতিবেদনে সৈয়দপুর রেলওয়ে পুলিশ সুপার সিদ্দিকী তাঞ্জিলুর রহমান এর বরাত দিয়ে ২ একর জমি অবৈধভাবে নিজ দখলে নিয়ে অবৈধভাবে বহুতল ভবন তৈরীর সংবাদটি সম্পূর্ণ মনগড়া। যার কোন অস্তিত্ব নেই।
তিনি বলেন, আমার বা আমার উপর নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যদের নামে সৈয়দপুর রেলওয়ের জায়গায় বানিজ্যিকভাবে শহীদ ডাঃ জহুরুল হক সড়কে ৩৬০ বর্গফুট, রেলওয়ে কারখানা গেট বাজার শপিং সেন্টারে প্রায় ১২০৮ বর্গফুটের মধ্যে বর্তমানে ৬৮০ বর্গফুট, শেরে বাংলা সড়কে ১৮০ বর্গফুটে এবং কয়া বাঁশবাড়ী মহল্লায় আমার মায়ের নামে ৭৯ শতক কৃষি জমি যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের মাধ্যমে বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত খাজনা প্রদান করে আসছি।
এমতাবস্থায় জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুবাদে রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে দখলে রেখে বহুতল ভবন নির্মাণ করায় যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের লিখিত পত্র প্রেরণের সুপারিশ ভিত্তিহীন এবং যথার্থ নয়। তাই অবৈধ দখলে থাকা রেলের কোটি কোটি টাকার মূল্যবান সম্পত্তি উদ্ধার ও দখলদারের কারণে ক্ষতিপূরণ আদায়সহ আইন অনুযায়ী শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ কিভাবে থাকে তা আমার বোধগম্য নয়।