সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারী জেলা ও সৈয়দপুর উপজেলায় করোনা সনাক্তে পূর্বের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে। ২৩ জুন বুধবার জেলায় মোট ৪৩ জন কোভিড-১৯ পজেটিভ সনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে সৈয়দপুরেই হয়েছে ১৩ জন। একদিনে এত বেশি সংখ্যক কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী এ জেলায় বা উপজেলায় এর আগে হয়নি।
সৈয়দপুরেই গত বুধবার (২৩ জুন) ১৩ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে রেপিড এন্টিজেন নমুনা পরীক্ষায় ২৩ জনের মধ্যে ১১ জন এবং ঢাকা থেকে আসা রংপুরে দেয়া ১৬ জুনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার শতকরা ৪৭.৮২ ভাগ।
সৈয়দপুরের রোগীদের মধ্যে শহরের পুরাতন বাবুপাড়ার ২ জন, বিমানবন্দর পশ্চিম পাড়ার ২ জন ( স্বামী স্ত্রী), বাঁশবাড়ীর ১ জন, আলমপ্রেস এলাকার ১ জন, কয়া গোলাহাটের ১ জন।এছাড়া বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের বোতলাগাড়ী মাঝাপাড়ার ২ জন, কামারপুকুর ইউনিয়নে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট খামারের ১ জন ও বাঙ্গালীপুর ইউনিয়নে ১ জন। আর নতুন নমুনা পরীক্ষায় ২ জনের মধ্যে একজন সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন কর্মচারী এবং অন্যজন শহরের বাবুপাড়া এলাকার।
এদিকে জেলায় এন্টিজেন পরীক্ষায় ৭৭ জনের নমুনায় ২১ জনের এবং ঢাকা পিসিআর ল্যাব হতে প্রাপ্ত রির্পোটে ২২ জনের করোনা পজেটিভ এসেছে। এর মধ্যে এন্টিজেনে সদরে ২৭ নমুনায় ৪ জন, ডোমারে ১১ নমুনায় ৩, জলঢাকায় ১০ নমুনায় ২, কিশোরীগঞ্জে ৬ নমুনায় ১ ও সৈয়দপুরে ২৩ নমুনায় ১১ জন। আর পিসিআর ল্যাবেের পরীক্ষায় পুরো জেলায় ২২ জন পজেটিভ হয়েছে। এরমধ্যে সৈয়দপুরে ২ জন, ডোমারে ৫ জনসহ সদর, কিশোরগঞ্জ ও জলঢাকায় মোট ১৫ জন।
সৈয়দপুরে ১৩ জনের করোনা পজেটিভ হওয়ায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য শহরে ব্যাপকহারে মাইকিং করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) মোঃ আবু তাহের সিদ্দিকী মেগাফোন দিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে প্রচারনা চালান। বিকেলে প্রচারনা চলাকালে সাথে ছিলেন মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ( ল্যাব) মোঃ আল আমিন ও স্বাস্থ্য সহকারী মোঃ আফজাল হোসেন। রাত সাথে ছিলেন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক মোঃ আবুল কালাম আজাদ। রাত ১০.৩৫ মিনিট পর্যন্ত প্রচারণা চালানো হয়।
এসময় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) মোঃ আবু তাহের সিদ্দিকী বলেন, সৈয়দপুরের পার্শ্ববতী জেলা দিনাজপুরে করোনা সংক্রমন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক জন মারা গেছেন। দেশের অধিকাংশ জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ট্রেনসহ দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় সৈয়দপুরে ১৩ জনের করোনা পজেটিভ যা অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এটা খুবেই উদ্বেগজনক ব্যাপার।
অথচ আমরা সৈয়দপুরবাসী সিংহভাগই মাস্ক ব্যবহার করি না। যে ২-১ জন করি তাদেরকেও তিরস্কার করি। জনসমাগম এড়িয়ে চলি না। আমরা সবাই কোন প্রকার সচেতনতা ছাড়াই ২ বছর আগের মতোই জীবনযাপন করছি।
তিনি বলেন, আপনারা আতঙ্কিত না হয়ে সাবধান হোন। আপনারদের সাবধানতাই বাঁচাতে পারে করোনা ভাইরাসের আক্রমন হতে। জরুরি দরকার ছাড়া বাসার বাহিরে আসবেন না। সব সময় মাস্ক পরিধান করি। ঘন ঘন সাবান কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার করি। নিজে বাঁচুন অন্যকে বাঁচতে সহায়তা করুন।
গতকাল বিকালে কোভিড-১৯ এর পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত ভিডিও কনফারেন্সে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে নীলফামারী জেলার করোনা পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ হাফিজুর রহমান চৌধুরী।
উল্লেখ্য, এমন ভয়াবহ চিত্রের পরও সৈয়দপুরবাসী চরম উদাসীনতা প্রদর্শন করছেন। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক, বিপণি বিতান, সরকারী বেসরকারি অফিস, স্টেশন, বাসস্টপ বাজার। ও হোটেল রেস্তোরায় গিয়ে দেখা যায় শতকরা ৯৮ জনের মুখেই মাস্ক নেই। আর সামাজিক দূরত্বের তো বালাই নেই।