ভুয়া এনএসআইয়ের নামে দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি ও জেএটিভি কার্যালয় তছনছ। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, এনএসআই সদর দফতর, র্যাব ও থানা-পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে। পল্টন মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। যার নং ২১০১/৩০/০৬/২০২১। গত ২৯ জুন বিকাল ৪ ঘটিকায় একটি জমি দখলের খবর বিষয়ে দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি ও জেটিভি কার্যালয়ে দুই ভদ্রলোক আসেন। তারা অভ্যর্থনা অফিসারকে সম্পাদক এম জি কিবরিয়া চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা বলেন। দুজন ভদ্রলোক সম্পাদকের কক্ষে প্রবেশ করেন। তারপর তারা নিজেদেরকে এনএসআই থেকে এসেছেন বলে জানান। একজন ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে পরিচয় দেন, অপরজন অফিসার হিসাবে পরিচয় দেন।
অনলাইন চ্যানেল জেএটিভি (রেজিষ্ট্রেশনের জন্য আবেদিত) এ দিনাজপুরের বিরল উপজেলার মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের করোনাকালীন অটোপ্রমোশনের সেশন ফি বাবদ ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ৭৫০ টাকা করে আদায় করে। বিষয়টি অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। ইউএনও অভিযোগ তদন্ত করার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দ্বায়িত্ব প্রদান করেন। করোনার কারনে তদন্থ কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার জেএটিভি -কে জানান।
স্থানীয়দের মতামত ইউএনও ও শিক্ষা অফিসার এবং প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য নিয়ে জেএটিভি প্রতিবেদন ২৩/০৬/২০২১ তারিখে প্রচার করে। এই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে গত ২৯/০৬/২০২১ তারিখে মঙ্গলবার বিকেল আনুমানিক ৪টা একটি জমিদখলের নিউজের বিষয়ে দুইজন ভদ্র লোক আমাদের অফিসে আসে। একজন এনএসআই এর ডেপুটি ডায়রেক্টর ও অন্যজন এনএসআই এর অফিসার বলে পরিচয় দেন। এনএসআই থেকে একটি প্রতিবেদন লাগবে বলে আমাদের পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল ও ওযারলাইন চ্যানেল জেএটিভি দেখতে চায়।
সম্পাদক তখন বললেন আমাদের পত্রিকা, নিউজ পোর্টাল ও অনলাইন চ্যানেলের তদন্ত প্রায় বছর খানিক আগে হয়ে গেছে। এনএসআই ও ডিজিএফআই তদন্ত করে সকল কাগজ নিয়ে গেছে। আবার তদন্ত কেনো। এরপর এনএসআই’র পরিচয় ব্যাক্তিরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে সম্পাদককে সকল কাগজপত্র দিতে বাধ্য করেন এবং প্রতিষ্ঠানের সকল সেকসনের মোবাইলে ভিডিও ধারন করেন এবং অফিসের স্টাফদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং তাদের আইডির ছবি তুলে নিয়ে যান। তখন সম্পাদক তাদের পরিচয় পদবি এবং মোবাইল নাম্বার চাইলে তখন তারা বলল এনএসআই অফিসার নাম, মোবাইল নাম্বার ও পদবি প্রকাশ করে না। সম্পাদক বলেন এর আগে যত অফিসার এসে ছিলেন প্রতেকে নাম পদবি মোবাইল নাম্বার দিয়ে গেছেন।
এর পরে তারা হুমকি দিয়ে বলেন, অসুবিধা হবে, ঝামেলা করবেন না কাগজ পত্র দিয়ে দেন। ৩০-০৬-২০২১ তারিখ বুধবার দুপুরে এনএসআই’র সদর দপ্তরে আসবেন আরও কথা হবে। এনএসআই পরিচয় দানকারী ব্যাক্তিরা বললো দিনাজপুরের বিরম উপজেলার মির্জাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদন প্রচার করেছেন, সে এখতিয়ার আপনাদের আছে কিনা। সম্পাদক জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন। তারই আলোকে আমরা কাছ করছি। আমাদের প্রতিবেদনে কেহ ক্ষুব্ধ হলে কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এমনকি আমাদের প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তার প্রতিকারের জন্য সম্পাদকের কাছে লিখিত অভিযোগ, প্রেস কাউন্সিলে মামলা, ডিজিটাল আইনসহ যে কোন আইনগত পদক্ষেপ নিতে পারে। কিন্তু এনএসআই এ ব্যপারে কোন ধরনের তদন্ত অফিসে এসে ফাইল তছনছ করা সংবাদপত্রের নীতিমালার আওতায় পড়ে না।
তারা সম্পাদকের প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে ৩০ জুন ২০২১ দুপুর ১২টায় এনএসআই’র সদর দপ্তরে যেতে বলেন এবং না গেলে কি হবে পরে দেখতে পাবেন বলে হুমকি দেন। এ বলে তারা চলে যায়। তখন সন্ধা প্রায় ৭টা সরকারী অফিস বন্ধ।
৩০ জুন সকাল ১১টায় সম্পাদক ডিজি এনএসআই এর অফিসে ফোন দিয়ে গতকাল জাতীয় অর্থনীতি ও জেএ টিভি অফিসে আসা এনএসআই অফিসারের বিষয়ে অবহিত করেন। ডিজি অফিস থেকে ওই অফিসারদের তথ্য-উপাত্থ জানতে চান। কিন্তু সম্পাদকের কাছে আগত অফিসারদের তথ্য-উপাত্য না থাকায় তখন দেয়া যায়নি। পরে বেলা ১১টা ৪১ মিনিটে এনএসআই অফিসার তানিম আহম্মেদ জাতীয় অর্থনীতি ও জেএ টিভির রিপোর্টার আবু তাহের বাপ্পা’র মোবাইলে কল দিয়ে এনএসআই এর প্রধান কার্যালয়ে ডিডি কাদের সাহেবের কাছে আসতে বলেন। তারপর এনএসআই অফিসার তানিম আহম্মেদের মোবাইল-ফোন ০১৯৭০-৯৫৬০৮৫ ও ফেইজবুকের সুত্র ধরে জানা গেল আদৌ তিনি এনএসআইয়ের লোক নন। সাথে সাথে সম্পাদক তানিমের নাম জানিয়ে এনএসআই সদর দপ্তরে ফোন দিয়ে অবহিত করেন। একটু পরেই এনএসআই অফিসার জানালেন পায়ে ব্যান্ডেজ বাধা তানিম আহম্মেদ নামে কোন অফিসার নেই। একইসঙ্গে এনএসআইয়ের ডিডি পরিচয়ধারী কাদের নামেও কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যালয়ের প্রেস বিভাগকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া র্যাবের প্রধান কার্যালয়কেও অবহিত করা হয়েছে। এনএসআইয়ের প্রধান কাযালয়কেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।