স্পোর্টস ডেস্ক :
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সুযোগ না পেলেও ঘরোয়া পর্যায়ে স্বাভাবিকভাবেই যেকোনো ক্রিকেটার ৩৫-৩৬ বছর পর্যন্ত খেলে যান নির্বিঘ্নে। কিন্তু এত বয়স পর্যন্ত খেলার আগ্রহ পাচ্ছেন না ভারতের ৩০ বছর বয়সী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তন্ময় শ্রীভাস্তব। সবধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন ভারতের হয়ে ২০০৮ সালের যুব বিশ্বকাপজয়ী এ ওপেনার।
উদীয়মান তারকা হিসেবে ভারতের ক্রিকেটে আবির্ভাব ঘটলেও, দীর্ঘ এক যুগ পেরিয়েও আন্তর্জাতিক মঞ্চে খেলার সুযোগ পাননি তন্ময়। এমনকি দীর্ঘদিন ধরে সুযোগ পাচ্ছেন না ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগেও। এর বাইরে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটেও তেমন ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন না বলে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তই জানালেন তন্ময়।
ঘরোয়া ক্রিকেটের সিংহভাগ ম্যাচ তিনি খেলেছেন উত্তর প্রদেশের হয়ে। বয়সভিত্তিক দল থেকে শুরু করে নানান সময়ে উত্তর প্রদেশের অধিনায়কত্বও করেছেন তন্ময়। তবে ২০১৯-২০ মৌসুমের শুরুতে উত্তর প্রদেশ ছেড়ে উত্তরখণ্ডে চলে যান তিনি। সেখানেও সম্ভাব্য দলে ছিল না তার নাম।
অবসরের ব্যাপারে জানিয়ে তন্ময় বলেছেন, ‘আমি উত্তরখণ্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পেতাম না। দলটির হয়ে কোনো ভবিষ্যতও নেই আমার। আমি আইপিএল খেলছিলাম না, এটিও জানতাম যে ভারতের হয়ে খেলার সুযোগ পাব না। তাই ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার কোনো কারণ আমি দেখছি না।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি ৯০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছি। হ্যাঁ ১০০ ম্যাচ পূরণ করতে পারতাম। কিন্তু এই ১০ ম্যাচ খেলে কী অর্জন হবে আমার? কোনো কিছুই বদলাবে না। আমার এখন কোনো ইয়ংস্টারের জায়গা আটকে রাখা ঠিক হবে না। অন্য কেউ এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে উপকৃত হলে, সেটা আমার ব্যক্তিগত মাইলফলকের চেয়ে অনেক ভালো হবে।’
মাত্র ১৬ বছর বয়সে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কত্ব করেছেন তন্ময়। সে দলে ছিলেন ভারতের জাতীয় দলের বর্তমান অধিনায়ক বিরাট কোহলি, তারকা অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজা, মনিশ পান্ডেদের মতো খেলোয়াড়রা। ২০০৮ সালে অধিনায়কত্ব হারালেও, কোহলির নেতৃত্ব জেতা যুব বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তন্ময়।
এছাড়া ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালে টানা রঞ্জি ট্রফির ফাইনাল খেলা উত্তর প্রদেশ দলের সদস্য ছিলেন তিনি। এমনকি ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের পেসবান্ধব উইকেটে সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছেন তরুণ তন্ময়। আইপিএলের প্রথম দুই মৌসুমে কিংস এলেভেন পাঞ্জাবের হয়ে খেলেছেন তিনি। পরে কোচি তাস্কার্স কেরালায় গেলেও নিজেকে চেনানোর সুযোগটা পাননি।
নিজের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের স্মরণীয় মুহূর্তের কথা জানিয়ে তন্ময় বলেন, ‘ক্রিকেট থেকে আমার অন্যতম সেরা স্মৃতি হলো, ২০০৬ সালে চ্যালেঞ্জার কাপে মাত্র ১৭ বছর বয়সে শচিন টেন্ডুলকারের সঙ্গে ইনিংস সূচনা করা। তিনি আমার নায়ক, তার সঙ্গে ব্যাটিং করা জাদুকরী অভিজ্ঞতা ছিলো। রঞ্জি ফাইনালে সেঞ্চুরি করা, অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা, ভারতের জার্সি পরা, আইপিএল খেলার স্মৃতিও দারুণ।’
মাত্র ত্রিশ বছরেই ক্রিকেটকে বিদায় জানানো তন্ময় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯০ ম্যাচ খেলে ৩৪ গড়ে করেছেন ৪৯১৮ রান, হাঁকিয়েছেন ২৭ ফিফটির সঙ্গে ১০টি সেঞ্চুরি। এছাড়া লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৭ সেঞ্চুরিতে ১৭২৮ রান রয়েছে তার ঝুলিতে। সবমিলিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের ব্যাপারে কোনো আক্ষেপ নেই উত্তর প্রদেশের এ ব্যাটসম্যানের।
তন্ময়ের ভাষ্য, ‘আমি প্রতি মৌসুমেই ৫০০-৬০০ রান করতাম। যেটা বলা যায়, চলে কিংবা ভালো। কিন্তু আমার মতো আরও অনেকেই এ পরিমাণ করত। ফলে আমারটা তেমন আলাদা করা যেত না। এছাড়া উত্তরের উইকেট বিশেষ করে শীতের সময় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং থাকে যা দেশের অন্য পাশে দেখা যায় না। তাই ওপেনার হিসেবে আমার কাজটা সহজ ছিল না। তবে যাই হোক, সবমিলিয়ে ক্যারিয়ার নিয়ে আমি সন্তুষ্ট।’