ধর্ম ডেস্ক :
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের জীবনঘনিষ্ঠ এমন অনেক সুন্দর সুন্দর নসিহত পেশ করে গেছেন, যা বিশ্বমানবতার জন্য কল্যাণকর। ঈমানদার মুমিন মুসলমানের জন্য ধনে-মনে ঐশ্বর্য লাভের উপায়। কেননা মুমিনের দুনিয়া ও পরকালের সফলতার জন্য ধনে-মনে প্রাচুর্য লাভ খুব বেশি প্রয়োজন। কুরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনায় বারবার এসব বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়েছে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা ওঠে এসেছে-
‘দুনিয়ার চিন্তা যাকে মোহগ্রস্ত করে, আল্লাহ তাআলা তাকে কাজকর্মে অস্থির করে দেন। অভাব তার সঙ্গে লেগেই থাকে। আর দুনিয়ার স্বার্থ ঠিক ততটুকুই হাসিল হয় যতটুকু তার তকদিরে লেখা থাকে। পক্ষান্তরে যার উদ্দেশ্য হবে আখেরাত; আল্লাহ তাআলা তার সব কিছু সুষ্ঠু ও সুন্দর করে দেন, তার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেন। তখন দুনিয়া নিজেই তার সামনে এসে ধরা দেয়।’ (ইবনে মাজাহ)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতে মগ্ন হও। আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যমণ্ডিত করব। আর তোমার দারিদ্র দূর করে দেব। তুমি যদি তা না কর, তবে আমি তোমার অন্তর পেরেশানি দিয়ে পূর্ণ করে দেব আর তোমার দারিদ্রতা দূর করব না।’ (ইবনে মাজাহ)
হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় হবে পরকাল; আল্লাহ ওই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্রিত করে সুন্দর করে দেবেন; তখন তার কাছে দুনিয়াটা খুবই নগণ্য হয়ে দেখা দেবে।
আর যে ব্যক্তির চিন্তার বিষয় হবে একমাত্র দুনিয়া; আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির গরীবি অবস্থা ও অভাব-অনটন দুই চোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন। আর তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দেবেন। দুনিয়াতে তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, সে এর চেয়ে বেশিকিছু পাবে না।’ (তিরমিজি)
হজরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার ইবাদতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা কর, আমি তোমার অন্তরকে ঐশ্বর্যে পূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব দূর করে দেব। তুমি তা না করলে আমি তোমার দুই হাত কর্মব্যস্ততায় পরিপূর্ণ করে দেব এবং তোমার অভাব-অনটন রহিত করব না।’ (তিরমিজি)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি তোমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- যার চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু হবে আখেরাত; তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার চিন্তায় মোহগ্রস্ত হয়ে থাকে; তার যে কোনো উপত্যকায় বা প্রান্তরে ধ্বংস হয়ে যাওয়াতে আল্লাহর কোনো পরোয়া নেই।’ (ইবনে মাজাহ)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসগুলো কী প্রমাণ করে? মানুষ কি দুনিয়ার চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে? নাকি অবসর সময় তৈরি করে পরকালের কল্যাণে ইবাদত-বন্দেগি করবে?
যেখানে দুনিয়ার চিন্তা মানুষকে ধনের ও মনের পেরেশানিতে ডুবিয়ে দেবে; সেখানে পরকালে চিন্তায় অবসর তৈরি করে ইবাদত-বন্দেগি করলে শুধু পরকালের কল্যাণই নয়, বরং দুনিয়াতেও সে হবে ধনে ও মনে ঐশ্বর্যবান। থাকবে অভাবমুক্ত।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হাদিসের উপর যথাযথ আমল করা। দুনিয়া নিয়ে মোহগ্রস্ত না হয়ে পরকালের কল্যাণে অবসর সময় তৈরি করে যথাসাধ্য ইবাদত-বন্দেগিতে নিয়োজিত হওয়া। আর তাতেই ধনে ও মনে প্রাচুর্যের অধিকারী হবে মুমিন মুসলমান।
দুনিয়া ও পরকালে ধনে-মনে প্রাচুর্য লাভে এ দুইটি বেশি বেশি পড়া। তাহলো-
– اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আ’ফাফা; ওয়াল গেনা।
অর্থ : হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে হেদায়েত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা পরহেজগারি কামনা করি এবং আপনার কাছে সুস্থতা তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য কামনা করি। (মুসলিম, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ ও মুসনাদে আহমদ)
– رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারণ : ‘রাব্বানা আতিনা ফিদদুনইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্বিনা আজাবান্নার।’
অর্থ : হে আমাদের প্রভু! আমাদের দুনিয়ার কল্যাণ দান কর এবং আখিরাতের কল্যাণ দান কর। আর আগুনের (জাহান্নামের) আজাব থেকে বাঁচাও।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করার তাওফিক দান করুন। অবসর সময় তৈরি করে পরকালের কল্যাণে ইবাদত-বন্দেগি করার মাধ্যমে দুনিয়ায় ধনে ও মনে প্রাচুর্যের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।