1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : জাতীয় অর্থনীতি : জাতীয় অর্থনীতি
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫১ অপরাহ্ন

কাবুল থেকে সেনা প্রত্যাহার সম্পন্ন

রিপোর্টার
  • আপডেট : মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১

আফগানিস্তানে শেষ হল মার্কিন অধ্যায়। ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা থাকলেও স্থানীয় সময় ৩০ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৩টায় সব শেষ মার্কিন বিমান ছেড়ে যায় কাবুল বিমানবন্দর। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই আফগানিস্তান অভিযানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষণা করল যুক্তরাষ্ট্র। এরমধ্য দিয়ে শেষ হল দেশটিতে আমেরিকার দীর্ঘ ২০ বছরের সামরিক অভিযান।

এরপরই রাতভর ফাকা গুলি ছুড়ে উল্লাস করে তালেবান। গোটা দেশ এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে।

পেন্টাগন বলছে, ১৫ আগস্টের পর থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তারা উদ্ধার করেছে ১ লাখ ২৩ হাজারের বেশি নাগরিককে।
শেষ বিমানটি কাবুল ছাড়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন জানিয়েছেন, এখনই তালেবানের সাথে কাজ করবে না ওয়াশিংটন। সবার আগে তালেবানকে বৈধতা অর্জন করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যা বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট

শেষ মার্কিন বিমান কাবুলের মাটি ছাড়তেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন একটি টুইটে দাবি করেন, “গত ১৭ দিনে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এয়ারলিফ্ট সম্পন্ন করেছে আমাদের সেনা। তুলনাহীন সাহস, পেশাদারিত্ব, সংকল্পের সঙ্গে তারা এই কাজ করেছে। এবার আফগানিস্তানে ২০ বছরের সেনা-অবস্থানের অবসান হল।”

ইতিহাসে এত বাজে সেনা প্রত্যাহারের নজির নেই

তবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমেরিকার ইতিহাসে এত বাজে সেনা প্রত্যাহারের নজির নেই।

তিনি বলেন, “ইতিহাসে কখনওই বাইডেন প্রশাসনের আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহারের মতো এত খারাপ বা অযোগ্যভাবে যুদ্ধ থেকে প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেনি।”

২০ বছরে আফগানিস্তানে কী পেল আমেরিকা?

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দোহাই দিয়ে ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর আফগানিস্তানে হামলা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর পেন্টাগনে হাজির প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ। সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বললেন, ‘সামনের মাসগুলোতে ধৈর্য আমাদের শক্তিগুলোর মধ্যে একটি হবে — কঠোর নিরাপত্তার জন্য লাগবে দীর্ঘ অপেক্ষার সাথে ধৈর্য; আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য ধৈর্য ও বোঝাপড়া লাগবে; সব আত্মত্যাগের ধৈর্যের মাধ্যমে কাঙ্খিত ফল আসবে।’

প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশের সেই ভাষণের পর ২০ বছর পেরিয়ে গেছে। গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র ধৈর্য ধরেছে, ত্যাগও করেছে। তবে সেই কাঙ্খিত ফল আসেনি। শূন্য হাতেই তাদেরকে ছাড়তে হচ্ছে আফগানিস্তানের মাটি।

হামলার তিন মাসের মাথায় তালেবান সরকারের পতন ঘটে। আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসে পশ্চিমা সমর্থিত হামিদ কারজাইয়ের সরকার। কাবুল কবজায় মহাখুশি বুশ জুনিয়র ২০০২ সালের এপ্রিলে ঘোষণা দিলেন আফগানিস্তান পুনর্গঠনের। সেরা বাসস্থান হিসেবে আফগানিস্তানকে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তিনি। পরের বছর তিনি ঘোষণা করলেন তালেবানকে খতম করার যে মিশন ছিল তা অর্জিত হয়েছে। তবে বুশ জুনিয়রের সেই ঘোষণা যে পুরোপুরি মিথ্য ছিল তা প্রমাণ করতে যেন কয়েক বছরের মাথায় আফগানিস্তানের প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে হামলা শুরু করে তালেবান।

তালেবানকে দমন করতে ২০১০ সাল নাগাদ আফগানিস্তানের মাটিতে ১ লাখ মার্কিন সেনা উপস্থিত। বছরের পর বছর মার্কিন সেনাদের হতাহতের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে যুদ্ধবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়ে গেছে বলে বিভিন্ন জরিপে প্রকাশ পেতে শুরু করে। মার্কিন প্রশাসনও ততদিনে বুঝতে শুরু করেছে আফগানিস্তানে হয়তো তারা সুবিধা করতে পারবে না।

২০১১ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ৩০ হাজার মার্কিন সেনা দেশে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিলেন। দিন যতো গড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতির বোঝা ততোই বাড়ছে। ২০১৪ সালে এসে ওবমা সব সেনা প্রত্যাহারের পরিকল্পনা ঘোষণা করলেন। তবে যতো সহজে আফগানিস্তানে প্রবেশ করেছিল বের হওয়াটা ততোটা সহজ ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। আফগানিস্তানের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওবামার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে ওবামা আমলেও ধাপে ধাপে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হয় মার্কিন সেনাদের।

২০১৮ সালে এসে তালেবান তাদের পূর্ণ অস্তিত্ব জানান দিলো। কাবুলে গোষ্ঠটির হামলায় নিহত হয় ১১৫ জন। তালেবানকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ তুলে দীর্ঘদিনের মিত্র পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ নিরাপত্তা সহায়তা বন্ধ করে দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই বছরই মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের শর্তে দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসে তালেবান। এরই মধ্যে কয়েক দফায় আফগানিস্তান থেকে বিপুল সংখ্যক মার্কিন সেনাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

২০২১ সালের মে মাসে নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পহেলা সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব মার্কিন সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন। জুনে প্রায় ৯০ শতাংশ সেনা যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যায়। ওই সময় থেকেই তালেবানরা আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে হামলা জোরদার করে। শেষ পর্যন্ত গত ১৫ আগস্ট তালেবানের হাতে পতন ঘটলো কাবুলের।

ব্রাউন ইউনিভার্সিটির যুদ্ধের ব্যয় প্রকল্পের হিসাব অনুযায়ী, আফগান যুদ্ধে গত দুই দশকে যুক্তরাষ্ট্র দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি ডলার খরচ করেছে। এর মধ্যে ৮০ হাজার কোটি ডলার খরচ হয় সরাসরি যুদ্ধখাতে, আট হাজার ৫০০ কোটি ডলার গেছে আফগান সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে এবং এই বাহিনীর বেতনের জন্য বছরে গুনতে হয়েছে ৭৫ কোটি ডলার। তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তে যুক্তরাষ্ট্রকে গড়ে প্রতিদিন ৩০ কোটি ডলার খরচ করতে হয়েছে।

এতো গেলো প্রত্যক্ষ খরচের হিসাব। এবার আসি পরোক্ষ ব্যয়ের তালিকায়। ২০ বছরে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের দুই হাজার ৪০০ সেনা নিহত হয়েছে। এছাড়া মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রায় চার হাজার ঠিকাদার নিহত হয়েছে তালেবানদের হামলায়। যুদ্ধে আহত হয়েছে আরও ২০ হাজার সেনা। এই আহত সেনাদের চিকিৎসা ও অবসর ভাতা হিসেবে আগামী দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে গুণতে হবে আরও ৩০ হাজার কোটি ডলার।

বিপুল সংখ্যক প্রাণহানি ও পাহাড় সমান অর্থ খরচের পর আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র কী পেল? সম্ভবত, শুধুই সমালোচনা আর সমালোচনা!

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২০ দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি