৩১ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর সংগ্রামী জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি।
তাছাড়া, উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড: সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ঢাবির দর্শন বিভাগের অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ, যুবলীগ নেতা আরিফুর রহমান সোহেল, ভাস্কর শিল্পী রাশা, সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
আলোচনা সভার শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি বলেন, “বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শ হত্যা করা সম্ভব হয়নি। বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের নেতা ছিলেন না। তিনি বিশ্ব মানবতার নেতা ছিলেন। তিনি ছিলেন বিশ্বের দরিদ্র মানুষের মুক্তির দূত। আমি আবারও বিএনপিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলছি, জিয়ার ভুয়া কবর নিয়ে মিথ্যাচার করবেন না। জিয়ার ডিএনএ টেস্ট করে দেখুন। অবশ্যই প্রমাণিত হবে এটি কখনোই জিয়ার কবর নয়।
স্থপতি লুই আই কানের মূল নকশা অনুযায়ী জাতীয় সংসদ ভবনের নকশা করা হবে। জিয়ার ভুয়া কবর এই নকশার বাহিরে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে অন্য ব্যক্তির লাশ নিয়ে এসে এখানে কবর দেয়া হয়েছে। জিয়ার ভুয়া কবর এখানে থাকতে পারে না। এই ভুয়া কবর দ্রুত সরিয়ে দেয়া হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মূল কুশীলব জিয়ার দল বিএনপি এখনো ষড়যন্ত্র করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসকারী জিয়ার ভুয়া কবর নিয়ে বিএনপি অপরাজনীতি করার চেষ্টা করছে। দেশের জনগণ বিএনপির প্রতারণা বুঝে গেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে অতীতের ন্যায় সামনের দিনগুলোতে তরুণ প্রজন্মকে আরোও ভূমিকা পালন করতে হবে।”
বিচারপতি বলেন, “বিহারী পুত্র আসিফ নজরুল জঙ্গি সংগঠন তালেবানের সমর্থনে বক্তব্য দেয়ার অপরাধে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানাচ্ছি। এই শিক্ষক রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সাথে প্রতারণা করে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত ও দালিলিক প্রমাণ রাজাকারদের নিকট বিক্রি করে বিহারী পুত্র আসিফ নজরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী নিয়েছিল। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার অপচেষ্টা করছে। পাকিস্তানের গুপ্তচর জিয়া কখনোই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। পাকিস্তানের আইএসআইয়ের এজেন্ট হিসেবে জিয়া কাজ করেছিল। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি জিয়ার দোসরদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।”
ঢাবির অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, ” একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি দোসররা পনেরো আগস্টের কালরাত্রিতে ২৬ জনকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। এটি ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ড। ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলও হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের সহযোদ্ধা ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। বঙ্গবন্ধু যখন জেলে ছিলেন তখন বঙ্গমাতা দলের জন্য নিজের গহনা পর্যন্ত বিক্রি করেছিলেন। আমাদের দাবি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্র কারীদের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে। তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে এখনোও ষড়যন্ত্র চলমান। বিষধর সাপরা এখনো সক্রিয়। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে।”
ঢাবির দর্শন বিভাগের অধ্যাপক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ বলেন “বারবার দাবি করার পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজও পর্যন্ত ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করেনি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। মুক্তিযুদ্ধ কর্নার, মুজিব কর্নার কিছুই নির্মাণ করা হয়নি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এই দাবিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধু মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বললে হবে না, আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করতে হবে।”
সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, “বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী পলাতক খুনী আসামীদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত মূল কুশীলবদের খুঁজে বের করতে একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশন গঠন করতে। তরুণ প্রজন্মের জানার অধিকার রয়েছে সেসময় কারা কারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আল মামুন বলেন, “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সতত প্রেরণাদায়ী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব আমাদের অনুপ্রেরণা ও আদর্শ হয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন তাঁরা প্রতিটি বাঙ্গালির হৃদয়ের মনিকোঠায় বেঁচে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে একাত্তরের পরাজিত অপশক্তি পাকিস্তানী দোসরদের ষড়যন্ত্র এখনো চলমান।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের পিতারা রক্ত দিয়ে এদেশের স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিল। আমাদের জীবনের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত আমরা বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার পক্ষে রাজপথে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। রাষ্ট্র বিরোধী অপশক্তির নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। তথাকথিত সুশীল জাফরুল্লাহ-মান্না-আসিফ নজরুল গংদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মদদদাতা খুনী জিয়ার ভুয়া কবর চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে অবিলম্বে সরিয়ে ফেলার দাবি জানাচ্ছি। লুই আই কানের মূল নকশা অনুযায়ী জাতীয় সংসদ ভবনের নকশা বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজাকার সবুর খান ও খুনী জিয়ার ভুয়া কবর পবিত্র সংসদ ভবনের জায়গায় থাকতে পারে না। বিএনপি জিয়ার ভুয়া কবর নিয়ে অপরাজনীতি শুরু করেছে। ডিএনএ টেস্ট করলে বিএনপির প্রকৃত চরিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত হবে। জিয়ার এই ভুয়া কবর দ্রুত সরিয়ে ফেলার জন্য সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।”