পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত যুগ্ম সচিবদের একটি বড় অংশ অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পাচ্ছে। ৩৭২ জন বঞ্চিত কর্মকর্তার মধ্যে প্রায় ১০০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে। ফলে আগে বঞ্চিত দুই শতাধিক কর্মকর্তা ফের বঞ্চিত হবেন। গত মঙ্গলবার এসএসবির (সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড) সর্বশেষ বৈঠকে কর্মকর্তাদের যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এরপর গতকাল বুধবার পদোন্নতির সারসংক্ষেপ প্রস্তুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আজ বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী সারসংক্ষেপে স্বাক্ষর করলে রাতের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষর আজ না হলে আগামী সপ্তাহের শুরুতে পদোন্নতি পাবেন তারা।
এদিকে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্যও গতকাল এসএসবির বৈঠক হয়েছে। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে এবার যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। সংশ্নিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, অষ্টম থেকে ১১তম ব্যাচ পর্যন্ত অতিরিক্ত সচিব পদে একেবারে সর্বনিম্ন পদোন্নতির সংখ্যা ছিল ১৩৪ জন। সর্বশেষ গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির সংখ্যা ছিল ৯৮ জন। নিয়মিত ব্যাচ হিসেবে ১৩তম ব্যাচ থেকে পদোন্নতি পান মাত্র ৬৭ জন। এ ব্যাচের যেসব কর্মকর্তা ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর যুগ্ম সচিব হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব হওয়ার জন্য ১২২ জন যোগ্য ছিলেন। এর মধ্যে ৮৮ জনকে বিবেচনায় নেওয়া হয়। বাকি ৩৪ জনকে পদোন্নতির জন্য শেষ পর্যন্ত বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। একই সঙ্গে তিনবারের বেশি বঞ্চিতদেরও গতবার বিবেচনায় নেওয়া হয়নি, যা একেবারে নজিরবিহীন ঘটনা। যুক্তি ছিল, ১০০ জনের বেশি পদোন্নতি দেওয়া হবে না। এবারও একই যুক্তি নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। একটি পক্ষ বলছে, প্রশাসনে এখন ১২ বছরে উপসচিব হচ্ছে। যেখানে ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ১৮ বছর বয়সে উপসচিব হয়েছেন। তাই উপরের পদোন্নতি আর জট না রেখে যোগ্যদের পদোন্নতি দেওয়া উচিত। অন্য একটি পক্ষ বলছে, অতিরিক্ত সচিবরা সরকারে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন। তাই তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে শুধু যোগ্যতা দেখলে হবে না। তাদের সততা, নিষ্ঠা ও দলীয় বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। এ ছাড়া গত বছর যেহেতু ১০০ জনের মধ্যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তাই এবার আগের সিদ্ধান্তে থাকা উচিত।
সূত্র জানায়, দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির সংখ্যা ১০০ জনের বেশিও হতে পারে। পদোন্নতির তালিকায় ১৩তম ব্যাচের প্রায় ৬৫ জন এবং অন্যান্য ব্যাচের প্রায় ৩৫ কর্মকর্তা রয়েছেন। ১০০ জনের বেশি পদোন্নতি হলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম বলেন, শিগগির অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি হতে পারে। তবে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির কাজ এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি।
জনপ্রশাসনের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৯৮ যুগ্ম সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত সচিব করা হলেও আরও দুই শতাধিক কর্মকর্তা তখন বঞ্চিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিবঞ্চিত প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তারা তাদের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ১৯৮৫ ও ১৯৮৬ এবং নবম, দশম ও একাদশ ব্যাচের বঞ্চিত কয়েকজন কর্মকর্তাও রিভিউ আবেদন করেন। আবেদনে প্রত্যেকে তাদের সততা, দক্ষতা, নিষ্ঠা, সৃজনশীলতা ও দায়িত্বশীলতার কথা উল্লেখ করেছেন। নিজেকে আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করতে স্থানীয় এমপি, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতার ডিও দিয়েছেন।
সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার সমকালকে বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ পদে সবাইকে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি দেওয়া উচিত। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে সঠিক মূল্যায়ন করা হলে বঞ্চিতদের মধ্যে ক্ষোভ কম থাকবে।
তিনি বলেন, পদোন্নতি হলো দেওয়ার বিষয়; নেওয়ার বিষয় নয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে নিজের পদোন্নতি নিজেই নেওয়ার বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের কয়েকজন বলেন, অতিরিক্ত সচিব পদোন্নতিতে গতবার বেশিরভাগ মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তা বাদ পড়ায় বিভিন্ন অধিদপ্তর ও অনু বিভাগে দায়িত্ব প্রদানেও জটিলতা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে সচিব পদে পদোন্নতিতেও বৈষম্য তৈরি হবে। তবে বর্তমান সরকারের সময়ে যারা ডিসি ও ছাত্রজীবনে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাদের কমপক্ষে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া উচিত।
এদিকে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতির জন্য ৫৫৩ কর্মকর্তা ফিট (যোগ্য) আছেন। এর মধ্যে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের ২৪৮ জন। ইকোনমিক থেকে প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হওয়া ৩৮ জন এবং বিভিন্ন ব্যাচের বঞ্চিত ও অন্যান্য ক্যাডারের ২৭১ কর্মকর্তা।
যুগ্ম সচিব পদে সর্বশেষ গত বছরের ৫ জুন ১৩২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। বর্তমানে উপসচিবের এক হাজার ৩২৪টি পদে কর্মরত আছেন এক হাজার ৯৬২ কর্মকর্তা। যুগ্ম সচিবের ৫০২টি পদে ৬৮৫ জন এবং অতিরিক্ত সচিবের ২১২টি পদে ৪১৮ জন কর্মকর্তা রয়েছেন।