রাষ্ট্রদ্রোহের ষড়যন্ত্র এবং দেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্তে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গতকাল সোমবার জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগেও দলটির অনেক নেতা-কর্মী দেশবিরোধী কার্যাক্রমের জন্য গ্রেফতার হন। কিন্তু আন্ডারগ্রাউন্ডে কাজ করে আসা জামাতের নতুন করে এই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা নিয়ে লোকমনে জন্মাচ্ছে শঙ্কা।
সম্প্রতি আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং তারপর তালেবানদের হাতে আফগানিস্তানের বিপুল অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ চলে আসাটা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক হুমকির সৃষ্টি করছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তালেবানদের ক্ষমতায় আসাকে কেন্দ্র করে জামাত ধর্মের গুটি দিয়ে দেশকে অকেজো করার নতুন ব্লু প্রিন্ট নির্মাণ করতে পারে। শোনা যাচ্ছে এরই মধ্যে ৭০০০ এরও বেশি বাংলাদেশি মুজাহিদ তালেবানদের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য আফগানিস্তানে পাড়ি জমিয়েছেন। এদের বেশিরভাগই জামাত-শিবির বা একই বর্গের লোক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর পাশাপাশি ভারত ও বাংলাদেশের জঙ্গীদের মধ্যে সহযোগীতার বিষয়টিও দুই দেশে বেশ কিছু জঙ্গীর সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের পর সামনে চলে এসছে।
এদিকে, বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলো থেকে তালেবানি শক্তির উদ্ভব হয় কিনা- তা চিন্তার বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকার পরও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে আদর্শিক প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেই। ৭৫ পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পরিপন্থী রাজনীতি চর্চা ও ইতিহাস বিকৃতির কারণে নতুন প্রজন্ম দ্বিধাভক্ত। ফলে সমাজে সৃষ্টি হয়েছে শূন্যতা। যার ফলে এই তো কিছুদিন আগেও আমাদেরকে জামাতের বি টিম হেফাজতের তাণ্ডব দেখতে হয়েছিল। জিয়া-এরশাদ-খালেদা, এ ত্রিবেণীর সরাসরি মদদে বড় হওয়া জামাতকে তাই হাল্কা করে দেখার উপায় নেই।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জামাত-শিবির নিয়ে বলেছিলেন, জামায়াত-শিবির আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী মৌলবাদী সংগঠনের বাংলাদেশি চ্যাপ্টার। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুড, ইন্দোনেশিয়ার জামাহ ইসলামিয়া, পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী, আফগানিস্তানের তালেবান, সৌদি আরব ও আফগানিস্তান থেকে উত্থিত আল-কায়েদা, সাম্প্রতিক কালের ইরাক ও সিরিয়ায় ‘ইসলামিক স্টেট’ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধরত ও ভিডিও ক্যামেরার সামনে মানুষের শিরশ্ছেদ বা মানুষ পুড়িয়ে মারার মতো নারকীয় নিষ্ঠুরতার জন্মদাতা আইএস, আফ্রিকার আল-শাবাব ও বোকো হারাম—এগুলোর যে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, সেটাই জামায়াত-শিবিরেরও অভিন্ন নেটওয়ার্ক। বাংলাদেশে জেএমবি, হুজি, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), আনসারুল্লাহ, হিযবুত তাহ্রীর, হিযবুত তাওহীদ, আল-কায়েদা ইন্ডিয়ান কমান্ড, তালেবান দক্ষিণ এশিয়া কমান্ড ও এবারের আইএস—এ ধরনের হরেক কিসিমের নাম নিয়ে একেক সময় একেক জঙ্গিগোষ্ঠীর যে তাণ্ডব পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, সেগুলোকে ভিন্ন ভিন্ন সংগঠনের আলাদা আলাদা অপারেশন হিসেবে বিবেচনা করা হলে মারাত্মক ভুল হবে। এগুলো একই বৃক্ষের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা। বাংলাদেশে জামায়াত-শিবিরই যাবতীয় জঙ্গি সংগঠন ও জঙ্গিগোষ্ঠীর সূতিকাগার। কথায় আছে, রসুনের কোয়া অনেকগুলো হলেও গোড়া একটাই!