মিরপুরের উইকেটে ১৬০’র ওপর লক্ষ্য যে কোন দলকেই দুশ্চিন্তায় ফেলবে। তবে বাংলাদেশের যেহেতু ঘরের মাঠ, চেনা কন্ডশিন সঙ্গে উইকেটও পরিচিতি। সেই হিসেব করলে বড় কিছুর আশা করাই যেত। কিন্তু সেই আশার আলো জ্বালিয়েও দলকে জয়ের বন্দরে নিতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। ১৮ রানে হারলেও ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জয়ের স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে বাংলাদেশ।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলকে বড় শুরু এনে দিতে পারেননি লিটন দাস। এজাজ প্যাটেলের বলে ১০ রানে ফেরেন তিনি। এরপর দলীয় ৩৮ এবং ৩৯ রানে প্যাভিলিয়নে ফেরেন সৌম্য সরকার এবং নাইম শেখ। সৌম্য করেন ৪ এবং নাইম করেন ২১ বলে ২৩ রান।
৩ উইকেটের ধাক্কা সামাল দেয়ার আগেই রাচিনকে উইকেট বিলিয়ে বসেন মুশফিকও। ৪৬ রানে ৪ ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পরও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং আফিফ হোসেন মিলে লড়াই চালয়ে যান। তাদের ব্যাটেই দলীয় ১০০ পার করে বাংলাদেশ।
নিজেদের মধ্যে জুটির হাফ সেঞ্চুরিও করেন তারা। তবে তাদের ৬৩ রানের জুটিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান স্কট কুগলেগেন। দলীয় ১০৯ রানে ২৩ রান করে ফেরেন দলপতি রিয়াদ। এরখানিক পর ৪ রানে নুরুলকে ফেরান এজাজ। ১৮তম ওভারের শেষ বলে বোল্ড হন শামিম।
শেষ ১২ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৪৬ রান। অপরপ্রান্তে থাকা আফিফ একা লড়াই করেও শেষ পর্যন্ত দলকে জয়ের বন্দরে নিতে পারেননি। অপরাজিত থাকেন ৪৯ রানে, বাংলাদেশ পরাজিত হয় ২৭ রানে।
এদিনও টস ভাগ্য যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের থেকে। শুক্রবারও টস হেরেছেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। বরাবরের মতো ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেননি টম ল্যাথাম। তবে দিন কিউই অধিনায়ককে হতাশ করেননি দলের ওপেনাররা।
ইনিংসের প্রথম ওভারে তাসকিন আহমেদের বিপক্ষে ২ রান এলে পরের ওভারের প্রথম বলেই নাসুম আহমের বলে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ ফেলেন শামিম পাটোয়ারি। জীবন পান রাচিন রবিন্দ্র। কিন্তু পরের দুই বলেই এই স্পিনারকে ছক্কা এবং চার হাঁকান ফিন অ্যালেন।
তৃতীয় ওভারে মাত্র ৫ রান এলেও চতুর্থ ওভারে যেন নাসুমকে আরও পেয়ে বসেন অ্যালেন। দুই ওপেনার মিলে নেন ১৯ রান। ফলে আগের চার ম্যাচের তুলনায় সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি পায় কিউইরা।
পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই নিউজিল্যান্ড পৌঁছে যায় দলীয় ৫০ রানের জুটি। তবে ওভারের চতুর্থ বলে শরিফুলের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে মুশফিকের তালুবন্দি হন রাচিন। ১৭ বলে ১১ রান করেন তিনি।
এরপরের বলেই লেগ বিফরের ফাঁদে পড়েন অ্যালেন। তবে রিভিউ নিয়ে বাঁচলেও ওভারের শেষ বলেই বোল্ড হন তিনি। ২৪ বলে ৪১ রান করে বিদায় নেন এই ওপেনার।
৬ ওভারে স্কোরবোর্ডে ৫৮ রান তুললেও, অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে আসা আফিফ হোসেনকে উইকেট ছুঁড়ে দেন উইল ইয়াং। অফ স্টাম্পের বাইরে ছোড়া বল তাড়া করতে গিয়ে নুরুল হাসানের তালুবন্দি হন এই কিউই।
৭১ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর দলীয় ৮৩ রানে কলিন ডি গ্রান্ডহোমকে বিদায় করেন নাসুম। ৯ রানে শামিমকে ক্যাচ দিয়ে বসেন তিনি। চলতি সিরিজে এ নিয়ে চতুর্থবার এই ব্যাটসম্যানকে বিদায় করেন নাসুম।
তারপরও উইকেটে টিকে থেকে দলকে ১০০’র ওপর নিয়ে যান ল্যাথাম। সঙ্গ দেন নিকোলস। তবে দলীয় ১১৮ রানে তাসকিনের গতিময় বোলিংয়ে উইকেটের পেছনে দারুণ এক ক্যাচ নেন নুরুল।
অভিজ্ঞ নিকোলস বিদায় নিলেও কোল ম্যাককনকি নিয়ে রান বাড়াতে থাকেন ল্যাথাম। ১৯তম ওভারে তাসকিনের বিপক্ষে ১৯ রান নিয়ে দলকে ১৫০ রানের পুঁজি এনে দেন কিউই দলপতি। শেষ ওভারে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়ার সঙ্গে দলকে ১৬১ রানের পুঁজি এনে। ম্যাককনকি অপরাজিত থাকেন ১৭ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৬১/৫ (অ্যালেন ৪১, রবীন্দ্র ১৭, ল্যাথাম ৫০*, ইয়াং ৬, ডি গ্র্যান্ডহোম ৯, নিকোলস ২০, ম্যাকনকি ১৭*; তাসকিন ৪-০-৩৪-১, নাসুম ৩-০-২৫-১, শরিফুল ৪-০-৪৮-২, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-১৭-০, সৌম্য ২-০-১৪-০, আফিফ ৩-০-১৮-১, শামীম ১-০-৪-০)
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৪/৮ (নাঈম ২৩, লিটন ১০, সৌম্য ৪, মুশফিক ৩, আফিফ ৪৯*, মাহমুদউল্লাহ ২৩, সোহান ৪, শামীম ২, তাসকিন ৯, নাসুম ৩*; ডাফি ৪-০-২৫-১, এজাজ ৪-০-২১-১, কুগেলাইন ৩-০-২৩-২, ম্যাকনকি ৩-০-২৫-১, সিয়ার্স ৩-০-২১-১, রবীন্দ্র ৩-০-১৯-১)